মনোপলি বাঁচাও সিন্ডিকেট

শিল্পপতি গৌতম আদানি ও সেবি প্রধান মাধবী বুচ। ফাইল চিত্র

বিজেপি, আদানি ও ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ’সেবি’ মিলে গড়ে উটেছে ’মনোপলি বাঁচাও সিন্ডিকেট’। আদানির মনোপলি বা তাঁর একচেটিয়া কারবার বাঁচাও চালাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন শাসক জোট। দেশের শেয়ার বাজারে এর ফলে একচেটিয়া কারবারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর। সম্প্রতি সেবি প্রধান মাধবী বুচের আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতির ঘটনা নিয়ে সংসদীয় কমিটির হাজিরায় বিজেপি-র সরাসরি আপত্তি। কারণ হিসাবে ওই আঁতাতের অভিযোগ সামনে এনেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি। কমিটির তলবে বিজেপির আপত্তির সঙ্গে সঙ্গে বুচ নিজেও সংসদীয় কমিটিতে হাজিরা দিতে রাজি হননি।

বিদেশি শেয়ার বিশেষজ্ঞ সংস্থা হিন্ডেনবার্গ আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার জালিয়াতি ও কারচুপির ফলে বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাটের তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় শোরগোল পড়ে যায়। বিরোধীরা এ নিয়ে সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি জানায়। তাতে রাজি হয়নি মোদী সরকার। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এতে তদন্ত চালায় সেবি। শেয়ার বাজার জালিয়াতির ঘটনায় আদানি গোষ্ঠীকে কার্যত ক্লিনচিট দেয়। এর মধ্যে হিন্ডেনবার্গ তাদের রিপোর্টে সেবি প্রধান মাধবী বুচের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক যোগাযোগের তথ্য ফাঁস করে দেয়। এতে আদানির সঙ্গে বুচের স্বার্থের সঙ্ঘাত স্পষ্ট হয়ে যায়। শেয়ার জালিয়াতির তদন্তে স্বার্থের সঙ্ঘাতের বিষয় খতিয়ে দেখতে সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (প্যাক) বুচকে তলব করে। বৈঠকে হাজিরার জন্য চিঠি দেওয়া হলে বুচ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য প্যাক চেয়ারম্যান কে সি বেণুগোপালকে অনুরোধ জানান। তা গ্রাহ্য না করে ফের তাঁকে বৈঠকে তলব করা হয়। কিন্তু বুচ বেণুগোপালকে চিঠি দিয়ে বৈঠকে আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এই বৈঠকে বুচকে তলব করার ব্যাপারে সরাসরি আপত্তি জানান কমিটির বিজেপি সদস্যরা। তাঁরা বলেন, প্যাক চেয়ারম্যান বেণুগোপালের সেবি প্রধান বুচকে তলব করার কোনও অধিকার নেই। কমিটির এক বিজেপি সদস্য বুচকে তলব করায় আপত্তি জানিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখেন। এতে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আদানির শেয়ার কেলেঙ্কারিতে বুচের জেরা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিজেপির।

প্রসঙ্গত, আদানি গোষ্ঠীর শেষ ত্রৈমাসিকে শুধু দুই সংস্থা, বিমানবন্দর এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে আর্থিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, সংস্থার মুনাফা আটগুণ বেড়েছে। গত বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে যেখানে দুই সংস্থার মুনাফার পরিমাণ ছিল ২২৮ কোটি টাকা, তা উল্লিখিত ত্রৈমাসিকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। মোদী ঘনিষ্ঠ আদানি-জোটের একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে ওঠাতেই তার মুনাফার বেপরোয়া বৃদ্ধি নিশ্চিত করেছে।


‘মনোপলি বাঁচাও সিন্ডিকেট’-এর দৌলতে মোদীর সহায়তায় আদানির মিলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানবন্দরের একচেটিয়া অধিকার, মিলেছে সিমেন্ট শিল্পে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ শিল্পে অগ্রাধিকার। এমনকি প্রতিরক্ষা শিল্পেও মিলেছে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, আদানির মনোপলি বাঁচাও সিন্ডিকেট যেটা চাইবে, সেটাই দখল করে নেবে। এই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় দেখা যাচ্ছে, শেয়ার জালিয়াতির তদন্তে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠলেও মোদী মুখে কুলুপ দিয়ে বসে আছেন। আদানির ঘনিষ্ঠ বুচকে সেবির প্রধান নিয়োগ করেছিল মোদীর নিয়োগ কমিটি। সেবি প্রধান মাধবী বুচ যে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত, তা আগেই জানা গিয়েছে। আদানির শেয়ার কেনাবেচার কারবারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মাধবী বুচ সংসদীয় কমিটির বৈঠক এড়িয়ে চলেছেন। কেননা মুখ খুললে তাঁকে সেই আদানি বা মোদীর বিরুদ্ধেই কথা বলতে হবে।