অনাহারে, অভাব-অনটনে, ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার দায়ে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এতদিনে এ ব্যাপারে এগিয়ে ছিল কৃষকরা। অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টির কারণে ফসল না হওয়া, আবার অতিরিক্ত ফলনে ন্যূনতম মূল্য না পাওয়ার জন্য, মহাজানি ঋণের সুদ মেটাতে না পেরে দেশের নানা প্রান্তে কৃষকদের আত্মহত্যার খবর সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা যায়। এবার সেই সংখ্যা ছাপিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনায়। ‘ইঁদুর দৌড়ে’ অসফল হলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে পড়ুয়ারা। বিশেষত বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে ছাত্ররা। এই সংখ্যা কৃষক আত্মকথা থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। ছাত্র আত্মহত্যা নিয়ে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট সামনে এনেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)।
রিপোর্টে জানা গিয়েছে, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং সার্বিক আত্মহত্যার চেয়েও পড়ুয়াদের আত্মহত্যার হার বেশি। ০ থেকে ২৪ বছর বয়সি জনসংখ্যার বৃদ্ধি ৫৮.২ কোটি থেকে কমে ৫৮.১ কোটি হয়েছে। সেই নিরিখে পড়ুয়াদের আত্মহত্যা ৬ হাজার ৬৫৪ থেকে বেড়ে ১৩ হাজার ৪৪ হয়েছে। প্রতি বছর মোট আত্মহত্যার ঘটনা ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে আশ্চর্যজনকভাবে গত দু’দশকে পড়ুয়া-আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যা ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ভয়াবহ বলেই রিপোর্টের দাবি। ২০২২ সালে কতজন আত্মহত্যা করেছে, তার মধ্যে ৫৩ শতাংশ ছাত্র। ২০২১ আর ২০২২-এর মধ্যে ছাত্রদের আত্মহত্যার ঘটনা ৬ শতাংশ কমলেও, ছাত্রীদের আত্মহত্যা অনেকটা বেড়ে গিয়ে হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। পুরো দেশে বার্ষিক যে পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করে তাদের এক-তৃতীয়াংশ মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। দক্ষিণের রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে আত্মহত্যার হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। গত একদশকে আত্মঘাতী পুড়ুয়াদের মধ্যে ছেলেদের আত্মহত্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ, মেয়েদের ৬১ শতাংশ। রাজস্থানের কোটাতে প্রায়ই পড়ুয়া—আত্মহত্যার কথা শোনা গেলেও আত্মহত্যার তালিকায় শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে মরুরাজ্যের নাম নেই।
এনসিআরবি আরও জানিয়েছে, অনেক সময়ই ছাত্রদের আত্মহত্যা নিয়ে স্থানীয় থানায় রিপোর্ট দায়ের হয় না। তা সত্ত্বেও যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা খুবই উদ্বেগজনক।
২০১৭ সালের মেন্টাল হেলথকেয়ার অ্যাক্ট অনুযায়ী, মানসিকভাবে অসুস্থরা আত্মঘাতী হলে, তা অপরাধের আওতায় পড়ে না। কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টা এবং তাতে কারও কোনও সংযোগ থাকলে তা অপরাধের আওতায় পড়ে। ফলে পড়ুয়া আত্মহত্যা করলেও পরিবারের লোকজন তা প্রকাশ্যে আনতে চান না।
প্রসঙ্গত, আইসি থ্রি একটি অলাভজনক সংস্থা। পুরো বিশ্বের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রফেসর, কাউন্সিলরদের প্রশিক্ষণ দেয় সংস্থাটি। এদের সহযোগিতাতেই রিপোর্টটি তৈরি করেছে এনসিআরবি। এই রিপোর্টেই প্রকাশ পেল সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাপিয়ে গেছে এদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মহত্যার হার। সামাজিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা, চরম বেকারত্ব ইত্যাদি মানসিক চাপের কারণেই আত্মহত্যার এত রমরমা। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করেই এই সমস্যার মূলোচ্ছেদ করতে হবে।