হাস্যকর অবাস্তব দাবি

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

গোঁজামিল আর মিথ্যাচার দিয়ে চলছে একটি সরকার। মহিলারা সারাদিন বিনা মজুরিতে তার ঘরের যে কাজ করেন তাকেই নতুন কর্মসংস্থান বলে দাবি করছে মোদী সরকার। একইভাবে সংগঠিত ক্ষেত্রে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) ঠিকা কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সংখ্যাকেও এখন নতুন কর্মসংস্থান হিসাবে দেখানো হচ্ছে। মোদী সরকারের এই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দাবি সম্পূর্ণ গোঁজামিলে ভরা। ২০২১-২৪ সালে এই তিন বছরে মোদী সরকার ৮ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে বলে যে দাবি করেছে, তা পুরোটাই ভুয়ো তথ্য। ২০১৪ থেকে ২০২৪ মোদীর এই দশ বছরের শাসনকালে দেশের অর্থনীতিতে কর্মহীন বৃদ্ধি ঘটেছে। নতুন উন্নত মানের উন্নত বেতনের কাজ সেভাবে বাড়েনি। যে নতুন কাজ সৃষ্টি হয়েছে, তার বেশিটাই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কম মজুরির নিম্নমানের কাজ। তাই আজ দেশে শিক্ষিত স্নাতক স্তরে বেকারির হার বেড়ে হয়েছে ৪৩ শতাংশ। যা গত ৪৫ বছরে বেকারির হারে সর্বাধিক বৃদ্ধি।

সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার নিয়ে যে কেইএলইএমএস রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তার ভিত্তিতে মোদী সরকার দেশে তিন বছরে মোট ৮ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করেছে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই তথ্যেও গোঁজামিল রয়েছে বলে দাবি করেন কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ। তিনি জানান, মহিলারা সারাদিন তাঁদের নিজেদের বাড়ির যে কাজ বিনা মজুরিতে করেন, সেই কাজে যুক্ত মহিলাদের নতুন কর্মসংস্থানে যুক্ত বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রিপোর্টে দেখানো হয়েছে। কর্মসংস্থান নিয়ে আজ পর্যন্ত যা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, তার কোথাও মহিলাদের বিনা মজুরির ঘরের কাজকে কর্মসংস্থান বলে ধরা হয়নি। এবারে মহিলাদের সেই বিনা মজুরির ঘরের কাজ নতুন কর্মসংস্থান বলে দেখিয়ে দেওয়ায় এক ধাক্কায় বিপুল হারে নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি বলে দেখানো হয়েছে। এটা পুরোপুরি গোঁজামিলের হিসেব।

এছাড়া আর একটি গোঁজামিল আছে। তা হলো, ২০২১ সালে জনগণনার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিনা জনগণনায় জনসংখ্যা বিপুল বেড়েছে দেখিয়ে তার ভিত্তিতে সেই হারে কর্মসংস্থান বেড়েছে দেখানো হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্টে কর্মসংস্থান সৃষ্টির হার নিয়ে তথ্যেও বহু গরমিল। বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর সময়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে। উল্টে সেসময় লকডাউনের ফলে কাজের সংস্থান কমে যায়। কলকারখানা, ব্যবসাবাণিজ্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সবেতে কাজ কমে যায়। একমাত্র কৃষিতে কাজ বাড়ে। কারণ মানুষ কাজ হারিয়ে ফের কৃষির কম মজুরির কাজে ফিরে যান। মহিলারা বাইরে কাজ না থাকায় ফের ঘরের কাজে ফিরে যান। এতেই করোনার সময়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই কর্মসংস্থানের বেশির ভাগটাই হলো বিনা মজুরি বা খুব কম মজুরির কাজ।


কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ইপিএফ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির হার যেভাবে দেখানো হয়েছে, তাও কারচুপির হিসাব। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ইপিএফে নতুন সদস্য সংখ্যা ৬.২ কোটি দেখিয়ে তা নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি বলে মোদী সরকার দাবি করছে। এতেও ধরা পড়েছে কারচুপি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো বর্তমানে ২০ জন কর্মী কাজ করেন এই রকম সংস্থার স্বল্পমেয়াদের চুক্তির ঠিকা কর্মী সহ সকলেই ইপিএফ সদস্য করা বাধ্যতামূলক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়াও সরল করা হয়েছে। এর ফলে সদস্য সংখ্যা যা বেড়েছে, তার বড় অংশ হলো ঠিকাকর্মী। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত বহু কর্মী ইপিএফে টাকা জমা রাখেন বলে সদস্যপদ ছাড়েন না। ফলে ইপিএফে সদস্যসংখ্যা বাড়লেও তাকে নতুন কর্মসংস্থান বলে দেখানো যায় না।

সরাসরি গোঁজামিল আর কারচুপিতে ভরা অর্ধসত্য তথ্য নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারে নেমেছে মাদী সরকার। দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থায়ও বিপুল কর্মসংস্থানের দাবি সম্পূর্ণ অবাস্তব।