শিক্ষার অধিকার দেশের সংবিধানের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গণ্য। শিক্ষার অধিকার আইন থাকা সত্ত্বেও এবং ২০২০ সালে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলি বন্ধই ছিল। ফলে শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিগুলি বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের যার পর নাই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
কিন্তু চলতি কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষাকে অকিঞ্চিত স্তরে নামিয়ে আনায় বিদ্বৎসমাজে হাহাকার উঠেছে। চলতি বাজেটে গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কম করা হয়েছে। পরিকাঠামাে ও শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতির ক্ষেত্রে এর কুপ্রভাব পড়তে বাধ্য। বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য বরাদ্দ ৯৩,২২৪ কোটি টাকা। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৯৯,৩১১ কোটি টাকা।
অথচ বিগত বছরটি প্রাক বিদ্যালয়স্তর থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অবহেলিত বর্য হিসেবে চিহ্নিত। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষায় এমন বরাদ্দ কম করার ঘটনা এই প্রথম। বাজেট বরাদ্দ হ্রাস পাওয়ায় সমগ্র শিক্ষা স্কিম (এসএসএস) সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে, যা শিক্ষার অধিকার আইনকে বাস্তবায়িত করার জন্য চিহ্নিত হয়েছিল।
যে আইনে ৮-১৪ বছর বয়স্ক শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যই নির্ধারিত ছিল। এতে শিক্ষার ভিত্তিভূমিতেই এক প্রবল ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে। জটিলতম এসএসএস এর ক্ষেত্রে গত বছরের বরাদ্দ ৩৮,৭৫০ থেকে কমিয়ে ৩১,০৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি তাত্বগতভাবে সরকারি বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামাে তৈরিতেই কাজে লাগানাে হত। আদিবাসী ও দলিতদের স্কুল ছুট প্রতিরােধে সাফল্য। এলেও কই শিশু তাদের পরিবারের আয়ের জন্য শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রেও বরাদ্দ ১১০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র এক কোটি টাকা করা হয়েছে।
তবে কি সরকার শিক্ষায় বিপরীত ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে। মনে রাখতে হবে শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য স্কুলে যেতে সাইকেল বা অনেক সময়ে খাওয়ার অযােগ্য দু’টাকা কেজি চাল দেওয়াই পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যালয়ে যাওয়া ও ক্ষুধা নিবারণের জন্য যেমন এই দুটি প্রয়ােজন তেমনই পরিবারের অন্যদের জন্য শিশুরা যে শ্রমিক হিসেবে কাজ তে বাধ্য হচ্ছে তার প্রতিরোধী ব্যবস্থাটি অবহেলা করলে চলে না। মনের শিক্ষা এক অনন্য শিক্ষা।
কিন্তু তা বর্তমান বাজেটে স্বীকৃতি পায়নি। একটি বছর বিনষ্ট হওয়ার পর চলতি বাজেটে বরাদ্দ অনেক বেশি হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কারণ গত বছরটি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় সকল বই অবহেলিত ও বিনষ্ট হয়েছে অনিবার্য কারণে।
ফলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উন্নয়নে চলতি বাজেটে বরাদ্দ অনেক বেশি হওয়ারই সম্ভাবনা ছিল প্রবল। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে সরকার। কিন্তু ভতিষ্যতের দিকে তাকিয়ে শিক্ষাকে এমন অবহেলা করা বােধহয় উচিত হয়নি।
অনলাইন শিক্ষা কেবল সম্পা পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল বলা চলে। তা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এবং দরিদ্র পরিবারের শিশুদের ক্ষেত্রে তা এখনও কল্পনায় বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শুভ আদায়ের বিষয়েও সরকারকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। এক কথায় বলা চলে চলতি বাজেটে শিক্ষা উন্মুখ শিশুদের বঞ্চিত করা হয়েছে।