রামনবমী

ফাইল চিত্র

আসন্ন রামনবমী উদযাপন নিয়ে এবারও হুঙ্কার ছাড়লেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন আগামী ৬ এপ্রিল রামনবমীকে কেন্দ্র করে এক কোটি হিন্দু রাস্তায় নামবে— তাঁরা শ্রীরামের নামে জয়ধ্বনি দেবে। পুলিশের কোনও অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। রামভক্তরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি সহকারে মিছিলে যোগ দেবেন। রাম নবমী উদযাপনে কোনও বাধা নেই। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য, যেখানে সব ধর্মের মানুষ বাস করেন এবং তাঁরা নিজ নিজ ধর্ম পালন করেন বাধাহীন ভাবে। সুতরাং রামনবমী উদযাপনেও কোনও বাধা নেই— যদিও রাজ্যের পুজো পার্বণের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, রামনবমী এখানে কখনও এমন ঘটা করে পালিত হয়নি। গত দুই-তিন বছর হল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রামনবমী খুব উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালনের ডাক দিয়ে আসছে। এবারও সেই ডাক বিরোধী দলের নেতার কণ্ঠে। সেই সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের কথাও।

বিরোধী নেতার রামনবমী উদযাপনের ঘোষণায় দু’টি বিষয় নিয়ে আপত্তি রয়েছে। প্রথমত, তিনি উগ্র হিনদুত্বের নজির হিসেবে এক কোটি হিন্দুকে ওইদিন রাস্তায় নামার নির্দেশ দিলেন, দ্বিতীয়ত তিনি জানালেন, প্রশাসনের কোনও অনুমতির প্রয়োজন পড়বে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা প্রশাসনের কাজ, সুতরাং এক কোটি হিন্দু যদি রাস্তায় নামে, তাহলে সাধারণ মানুষের চলাফেরা, যানবাহন সমস্যার বিঘ্ন ঘটতে পারে। সুতরাং প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন পড়তেই পারে। কারণ, রামনবমী উদযাপনকে কেন্দ্র করে, কোনও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হোক তা সরকার কখনও মেনে নেবে না।

বিরোধী নেতা বলেছেন, রামনবমীর দিন এক কোটি হিন্দু ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ সহযোগে রাস্তায় নামবে। এক কোটি কেন দুই-তিন কোটি মানুষ, বিরোধী নেতার কথায় রাস্তায় নামতে পারে, তা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ওই রামনবমী উদযাপনে যাঁরা রাস্তায় নামবেন, তাঁরা যদি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে কারওর কোনও অসুবিধে সৃষ্টি না করে উৎসব পালন করে, তাহলে প্রশাসন বা সাধারণ মানুষেরও কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। কথা একটাই, রামনবমী শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলা মেনে পালন করা হোক। কিন্তু রামনবমী উদযাপনকে কেন্দ্র করে যদি কোনও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, সাধারণ মানুষ কোনও বিপদের সম্মুখীন হয়, যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তা কোনওভাবেই কাম্য নয়। আর সেই শান্তিশৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, তার জন্য রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশকে সক্রিয় থাকতে হবে। কোথায় কত রামভক্ত জমায়েত হবেন এবং কোন রাস্তা দিয়ে মিছিল যাচ্ছে তা প্রশাসনকে জানতে হবে। কারণ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্ব।


এত সব কথা বলা হল এই কারণে যে ২০২৩ সলে রামনবমী উদযাপন নিয়ে হাওড়া সহ রাজ্যের কোনও কোনও স্থানে চরম আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছিল। বেশ কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছিল— যার ফলে সাধারণ নাগরিকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছিল। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া হাতে তা দমন করতে হয়েছিল। রামনবমী উদযাপন নিয়ে সেই সব হিংসার ঘটনা ছিল অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ কোনও পূজাপার্বণ বা উৎসব নিয়ে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েন, তা কেউ চায় না। তাই প্রশাসনকেও শান্তিশৃঙ্খলা কড়া হাতে রক্ষা করতে হয়। তাছাড়া রামনবমী উপলক্ষে নানা ধরনের অস্ত্র হাতে মিছিলকারীরা পথ পরিক্রমা করবে, সেটাও কেউ চায় না। প্রশাসন মনে করে মিছিলকারীরা কেন অস্ত্র বহন করবে? এটা দেখতে যেমন অশোভন, তেমনই কোনও হিংসার ঘটনা যদি ঘটেই যায়, তার ব্যবহার করারও সুযোগ থাকে। তাই অস্ত্র হাতে মিছিল আইনসিদ্ধ নয় কোনওভাবেই। কিন্তু অতীতে অস্ত্র হাতে মিছিল দেখা গেছে রামনবমী পালনকারীদের।

আমরা আশা করব, রামনবমী পালন হোক মহাসমারোহ করে— কিন্তু তা পালন করতে হবে শৃঙ্খলা মেনে, শান্তি বিঘ্নিত না করে। যেখানে বেশি মানুষ মিছিলে অংশগ্রহণ করে, স্বভাবতই সেখানে যানজটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ কত কাজ নিয়ে প্রতিদিন রাস্তায় বের হয়। মিছিলের ফলে যদি যানজটের সৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এটা কেউ চায় না।

কলকাতা পুলিশ কমিশনার বলেছেন, রামনবমী যাতে শহরে শান্তিশৃঙ্খলা সহকারে পালিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনওভাবেই শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে দেওয়া হবে না। রাজ্য পুলিশও সেই একই ব্যবস্থা নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সব ধর্মাবলম্বীরাই তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করে— তার জন্য কোনওরূপ সমস্যার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু ধর্মের সঙ্গে যদি রাজনীতি টেনে আনা হয়, তা কখনও প্রত্যাশিত নয়। যেমন বিরোধী দলনেতা এক কোটি হিন্দু রামনবমীর দিন রাস্তায় নামার কথা ঘোষণা করেছেন। এই ‘হিন্দু’ কথাটা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। কারণ পশ্চিমবঙ্গে সব ধর্মের মানুষই শান্তিতে বসবাস করে। কে হিন্দু, কে মুসলিম— এসব দেখা হয় না। সবচাইতে বড় কথা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। পশ্চিমবঙ্গে এই সম্প্রীতি বজায় রয়েছে শত বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও। সুতরাং দৈনিক স্টেটসম্যান চায় রামনবমী পালন করা হোক নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে।