বৃষ্টিস্নাত বিকাশ

Kochi: Kochi witnesses heavy rains as Monsoon arrives in Kerala on June 9, 2019. (Photo: IANS)

বিকশিত ভারত। এর আগে তাঁর দু’বারের শাসনকালে নরেন্দ্র মোদি বুঝিয়ে দিয়েছেন উন্নয়ন নয়, তিনি বদল চান। নেহরু, ইন্দিরার গড়া ভারতকে তিনি মোদির ভারতে বদলে দেওয়ার নেশায় মেতে উঠেছেন। তাই রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে রাজপথ, রেল স্টেশন থেকে স্মৃতিসৌধ, ইতিহাস থেকে সমাজবিজ্ঞান বদলে দেওয়া হচ্ছে নির্বিচারে। ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই কাজ হচ্ছে। এই বদলেরই একটি ফসল মেগা সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প।

দেশের বহু মানুষ দু’বেলা পেটপুরে ভাত খেতে না পারলেও ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। এই প্রকল্পেই ব্রিটিশ আমলের কিংসওয়ে, স্বাধীনতার পর যা হয়েছিল রাজপথ, তা এখন হয়েছে কর্তব্যপথ। সেই কর্তব্যপথ সামান্য বর্ষণেই হয়ে গিয়েছে জলাশয়। তার বেসমেন্টের পার্কিং এলাকা ছোটখাটো পুকুরে পরিণত হয়েছে। এবার দেখা গেল মেগা প্রকল্পের অন্যতম ভারতের ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নতুন সংসদ ভবনের অন্দরেও বৃষ্টির জল ঢুকে পড়েছে। ঐতিহ্যপূর্ণ পুরনো সংসদ ভবন থাকা সত্ত্বেও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সংসদ ভবন তৈরির আদৌ প্রয়োজন ছিল কিনা, সেই সঙ্গত প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। মোদি জমানার এমন একটি সময়ে নতুন এই সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল যখন দেশজুড়ে করোনা মারণ রোগের চেহারা নিয়েছে।

এই ভাইরাস মোকাবিলায় গোটা দেশ কার্যত দিশেহারা ছিল। অক্সিজেন, মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং টিকার মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে ধুঁকছিল একাধিক রাজ্য। অবস্থা সামাল দিতে কেন্দ্রের ব্যর্থতা তখন ছিল নিত্যদিনের খবর। তবু দেশের মানুষের প্রাণ নয়, নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সংসদ ভবন তৈরি করাই ছিল মোদির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। নির্লজ্জভাবে আমিত্ব প্রকাশের জন্য সংসদ ভবনের উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতিকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। কারণ প্রোটোকল অনুযায়ী তিনি উপস্থিত থাকলে নতুন ভবন উদ্বোধনের সুযোগ হাতছাড়া হতো প্রধানমন্ত্রীর।


দুর্ভাগ্যজনক হলেও উন্নত ভারতের নমুনা হিসাবে হাজির করা নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের পর প্রথম বর্ষাতেই ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়তে শুরু করেছে। হতবাক কর্মীরা বড় বড় প্লাস্টিকের বালতি বসিয়ে সেই জল সংগ্রহ করে বাইরে ফেলার ব্যবস্থা করেন যাতে মেঝে না ভেসে যায়। শুধু ১২০০ কোটি টাকার ভবনের ফুটো ছাদ দিয়ে জলপড়া নয়, গোটা সংসদ চত্বর জল থইথই অবস্থা। ভবনের প্রধান গেটের সামনে হাঁটু জল। এর আগে জি-২০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দিল্লির প্রগতি ময়দানে তৈরি হয়েছিল বিশ্বমানের কনভেনশন ও এক্সিবিশন সেন্টার। আলো ঝলমলে প্রদর্শনী চলাকালীন বৃষ্টির জলে ডুবে যায় মেঝে ও চারপাশ।

বিকাশের আর এক আশ্চর্য নিদর্শন হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল মুম্বইয়ের সমুদ্রে সেতুকে। বিকশিত ভারতের জন্য এই সেতু উৎসর্গ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বছর কাটতে না কাটতেই সেই সেতুতে ধরা পড়ে গুরুতর ফাটল। কিছুকাল আগে সামান্য বৃষ্টিতে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক নির্মাণ ধসে পড়ে। ভেঙে পড়ে বিমানবন্দরের ছাত।

সবচেয়ে চমক সৃষ্টি হয় অযোধ্যার রামমন্দিরে। পরমাত্মা প্রেরিত অজৈবিক প্রধানমন্ত্রীর হাতে শিলান্যাস ও উদ্বোধন হয়েছিল এই মন্দিরের। এই উদ্বোধনকে ঘিরে দেশজুড়ে ধর্মীয় উন্মাদনার সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেই মন্দিরে প্রথম বৃষ্টির ধাক্কাতেই ছাদ ফুটো হয়ে রামের মূর্তির মাথায় জল পড়তে থাকে। এসবই মোদির স্বপ্নের ভারতের কয়েকটি নমুনা মাত্র। শুধু অর্থ ব্যয় করে বড় নির্মাণ করলেই উন্নত হওয়া যায় না। শিক্ষা, চেতনা, বোধে, যুক্তিতে ও বিজ্ঞানে উন্নত হতে হবে। সততা, নৈতিকতা ও আদর্শে উন্নত হওয়া প্রয়োজন। হিন্দুত্ববাদের রাজনৈতিক নেশায় বুঁদ হয়ে থাকলে যে কোনও কাজই হবে ফুটো ঘটিতে জল ঢালার মতন।