জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে হলেও, অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের বহুদিন আগে থেকেই রাহুল গান্ধি কংগ্রেস ততা দেশের স্বার্থে নিজস্ব পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। অতীতের সমস্ত ভুল ভ্রান্তকে পরিহার করে দিয়ে একেবারে পরিণত রাজনীতিবিদদের মতোই রাহুল স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন। তাঁর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ এবং ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ কর্মসূচির মাধ্যমে। রাহুল তাঁর এই দ্বৈত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝিমিয়ে পড়া কংগ্রেসকে জাগ্রত করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
হাজার হাজার মাইল জুড়ে সর্বদা হাসিমুখে সর্বস্তরের মানুষের সাথে রাহুল দ্বিধাহীন চিত্তে মিশে গিয়েছিলেন (নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে) তাঁর ওই দুই কর্মসূচিকালে। এতে করে তিনি নিজেকে প্রকৃত ‘জননেতা’ হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন। অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনর পরে কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসতে না পারলেও নরেন্দ্র মোদির একাধিপত্যকে খতম করে তাঁকে ডানাছাঁটা’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে। আর এটাই হচ্ছে মূলত ‘রাহুল গান্ধিরই ওই জোড়া জনজাগরণ কর্মসূচির সার্থক প্রয়াস।
তবে রাহুল গান্ধিকে জনহৃদয়ে জায়গা করে দিতে মোদি তথা বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে একটা বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল তাঁদেরই অজান্তে। একটা ঠুনকো কারণে রাহুল গান্ধির সংসদ পদ কেড়ে নেওয়াতে রাহুলের প্রতি দেশজুড়ে একটা সহানুভূতির হাওয়া অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছিল। যা লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে মোদির অনেক পয়েন্ট কাটা যায়। লাভ হয় রাহুল তথা কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের। এবারের লোকসভায় কংগ্রেসের আসন 99 এবং ইন্ডিয়া জোটের মোট আসন সংখ্যা ২৩৪। অবশ্যই সত্যিকারের বিরোধী শক্তি।
একদা মোদির পাপ্পু আজ পরিপক্ক ও পরিণত রাজনীতিবিদ, নোবেলপ্রাপ্ত ভারতরত্ন অমর্ত্য সেন এটা পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দিয়েছেন (দৈনিক স্টেটসম্যান, 17 জুলাই)। লোসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে রাহুল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নাস্তানাবুদ করে দিচ্ছেন লোকসভায় বক্তব্য প্রদানকালে। শুধু লোকসভায় নয়। তিনি তাঁর অসাধারণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন লোকসভার বাইরেও। মানবতার বিসর্জন যেখানেই ঘটছে, সেখানেই সশরীরে হাজির রাহুল। তিনি হাজির হয়েছেন রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত মণিপুরে। তিনি হাজির হয়েছেন হাথরসে, ইত্যাদি ইত্যাদি অঞ্চলে।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের পরিপ্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধিকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পালন করতে হবে দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে যাতে কোনওভাবেই মতবিরোধের সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে রাহুলকেই সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কারণ, কে কখন ঘরশত্রু বিভীষণের ভূমিকা নিয়ে নেয়, সেটা বলা মুশকিল। প্রয়োজনে কংগ্রেসকেও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। ধুরন্ধর ও চতুর মোদি যে কোনও সময়ে ‘ব্ল্যাকমেলিং’-এর রাজনীতি এবং উপঢৌকনের প্রলোভন চালু করে দিতে পারে। মোদি-অমিত শাহরা প্রায়শই বলে থাকেন, ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত চাই’।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বলি, এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে যে মহাজাতি গড়ে উঠেছে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সেই মহাজাতি গড়ে উঠেছে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সেই মহাজাতির ইতিহাস গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ভারত এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেস হচ্ছে একে অপরের পরিপূরক। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কংগ্রেসকে এবং কংগ্রেসের স্বার্থে (বিশেষ করে ইন্ডিয়া জোটের স্বার্থে) রাহুল গান্ধিকেই তাঁর যথার্থ ভূমিকা পালন করতে হবে সমস্ত ধরনের ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে।