• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কমিশনের ঢিলেমিতে প্রশ্ন

দেশজুড়ে দু’দফায় নির্বাচন হয়ে গেলেও ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার জানাচ্ছিল না নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের অ্যাপে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ভোটদানের প্রবণতার উল্লেখ থাকলেও কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেই চূড়ান্ত তালিকা ছিল না৷ কমিশন এই তথ্য জানাতে পারেনি, নাকি জানাতে অপারগ ছিল, এ প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে৷ কমিশনের এমন ঢিলেমির প্রশ্নে কারচুপিরও আশঙ্কা

Election Commission of India. Nov 1, 2019. (File Photo: Amlan Paliwal/IANS)

দেশজুড়ে দু’দফায় নির্বাচন হয়ে গেলেও ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার জানাচ্ছিল না নির্বাচন কমিশন৷ কমিশনের অ্যাপে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ভোটদানের প্রবণতার উল্লেখ থাকলেও কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেই চূড়ান্ত তালিকা ছিল না৷ কমিশন এই তথ্য জানাতে পারেনি, নাকি জানাতে অপারগ ছিল, এ প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল রাজনৈতিক মহলে৷ কমিশনের এমন ঢিলেমির প্রশ্নে কারচুপিরও আশঙ্কা প্রকাশ করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি৷

সংবাদপত্রে খবর হয়ে যেতেই চাপে পড়ে যায় নির্বাচন কমিশন৷ শেষে প্রথম দফার ১১ দিন এবং দ্বিতীয় দফার ৪ দিন বাদে ভোট পড়ার চূডান্ত হার প্রকাশ করল কমিশন৷ কমিশনের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ কত শতাংশ মহিলা, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গ ভোট দিয়েছেন সেই তথ্যেরও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে৷ তবে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে তা পূর্বের অনুমিত হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি৷ এমনকী লোকসভার আসনভিত্তিক ভোট পড়ার হারের উল্লেখ করা হয়নি৷ এনিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলি৷
নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী বিবৃতিতে ভোট পড়ার হার পাল্টে যায়৷ বলা হয়, প্রথম দফায় ৬৬.২২ শতাংশ পুরুষ, ৬৬.০৭ শতাংশ মহিলা এবং ৩১.৩২ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ভোট দিয়েছেন৷ তেমনই দ্বিতীয় দফায় পুরুষ ৬৬.৯৯ শতাংশ, মহিলা ৬৬.৪২ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ২৩.৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ সব মিলিয়ে প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে৷

প্রকৃত অর্থে কমিশনের এমন বেহাল দশা অতীতে দেখা যায়নি৷ প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ১৯ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল৷ এতদিন পর ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার জানাতে পারাও কার্যত কমিশনের অপদার্থতাই প্রমাণ করে৷ দু’দফায় ভোটের পরই কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা একটি ইংরাজি দৈনিকের সাংবাদিককে ভোট পড়ার প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, ‘প্রথম দফায় আনুমানিক ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে যাবতীয় হিসাব মিলিয়ে শীঘ্রই চূড়ান্ত হার তুলে দেওয়া হবে কমিশনের ওয়েবসাইটে৷ ওদিকে ভোটের দিনের আনুমানিক প্রবণতার হার জ্বলজ্বল করছিল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত৷ সেখানে ১৯ এপ্রিল ৬০ শতাংশ এবং ২৬ এপ্রিল ৬০.৯৬ শতাংশ ভোট পড়ার হার উল্লেখ ছিল৷

আবার লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, রাজ্যওয়াড়ি ভোট পড়ার হিসাবও আপলোড করা ছিল না ওই ওয়েবসাইটে৷ একমাত্র কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেই তথ্যই নেই ওয়েবসাইটে এমন নয়, লোকসভার আসনভিত্তিক ভোট পড়ার সংখ্যাও নেই৷ শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের বুথভিত্তিক ভোটার তালিকা পাওয়া যাচ্ছে৷ তাও আবার ওড়িশা, বিহার, এমনকী দিল্লিরও তথ্য নেই৷ বিহার কিংবা ওড়িশার বেশ কিছু ভোটার তথ্য জানার চেষ্টা করলে ভুল তথ্য ফুটে উঠছে সাইটের ফাইনাল পেজে৷ আবার কমিশনের ওয়েবসাইটে লোকসভা আসনভিত্তিক সামগ্রিক ভোটারের সংখ্যারও উল্লেখ নেই৷ একমাত্র কোন রাজ্যে কত সংখ্যক এবং বুথভিত্তিক ভোটারের সংখ্যা কত, তার উল্লেখ রয়েছে৷ এমনকী বিধানসভাভিত্তিক ভোটারের সংখ্যারও উল্লেখ নেই৷

এমন এলোমেলো, ছন্নছাড়া পরিসংখ্যান অন্তত কমিশনের কাছে আশা করা যায় না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ সমাজকর্মী তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক যোগেন্দ্র যাদবের অভিমত, ‘কম ভোট পড়েছে বলেই শিরঃপীড়া শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি নেতাদের৷ ভোটের হার কম পড়ার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনীহাই প্রকাশ পেয়েছে ভোটারদের৷’ তবে বিজেপি নেতারা একে প্রবল দাবদাহের জন্য ভোটের হার কম বলে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকা’র চেষ্টা করছেন৷

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কমিশনের এমন ঢিলেঢালা আচরণের নেপথ্যে বড় ধরনের কারচুপির আশঙ্কা করছেন৷ তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত কমিশন চূড়ান্ত ভোট পড়ার হার জানাল, যা আগের তুলনায় বেশি৷ কিন্ত্ত আসনভিত্তিক ভোটারের সংখ্যা দেওয়া হয়নি৷ ওটা না জানালে ভোট পড়ার হার জানানো বৃথা৷ আশঙ্কা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় ভোটারের সংখ্যার তারতম্য ঘটানো হতে পারে৷ অথচ ২০১৪ সাল পর্যন্ত সমস্ত তথ্যই দেওয়া হত ওয়েবসাইটে৷
কমিশনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সমস্ত তথ্যই আপলোড করা উচিত ওয়েবসাইটে, যা অবশ্য মোদি-রাজত্বে আশা করাই বৃথা৷