ভারতে এক দেশ এক নির্বাচন কবে বাস্তবায়িত হবে, তা কেউ জানে না। এখনও তা অনিশ্চিত। কিন্তু দেশে ভোট তথা নির্বাচন লেগেই আছে। এই সবে শেষ হল হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচন। দেশবাসী ভোটের ফলও জানে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) হরিায়নায় এবার জিতবে তা নিয়ে সমীক্ষার ফল মিলল না। রাজনৈতিক মহল এবং সমীক্ষা কংগ্রেসের জেতা নিয়ে নিশ্চিত ছিল— কিন্তু কংগ্রেসের হার হল আর হেরে যাওয়ার ভয় থেকে জিতে গেল বিজেপি— পাক্কা দশ বছর ক্ষমতার অলিন্দে বিচরণ করে। বিজেপির শাসন বাড়ল আরও পাঁচ বছর।
এই দুই নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরপরই ভোটের বাদ্যি বেজে উঠল মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে। কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় দলই সময় ব্যয় না করে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। পশ্চিমবঙ্গেও ছ’টি উপনির্বাচন আসন্ন। মহারাষ্ট্র নির্বাচনে মহাবিকাশ আগাড়ির অন্যতম শরিক কংগ্রেস আবার লোকসভা নির্বাচনের ফল আশানুরূপ না হওয়াতে কারণ অনুসন্ধান করে কোথায় ত্রুটিবিচ্যুতি তা দূর করতে তড়িঘড়ি কাজ আরম্ভ করে দিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন শাসক জোট। ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি কংগ্রেস দিল্লির সদর দপ্তরে মহারাষ্ট্রের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ আরম্ভ করল। অনেক আলোচনার পর মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিশলার অভিযোগ শাসক বিজেপি জোট ভোট পাওয়ার লোভে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহারাষ্ট্রবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে তিনি বলেন, শাসক বিজেপি জোট মানুষকে উন্নয়নের নামে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ভোটের তারিখ ঘোষণা হওয়ার পরই বিজেপি সরকার মহারাষ্ট্রবাসীকে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কথা শোনাচ্ছে। কিন্তু এতদিন ক্ষমতা থেকে মহারাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। প্রতিশ্রুতির সংখ্যা প্রায় দুইশ’ ছাড়িয়ে যাবে। তবে এই জোট সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষ এতই বীতশ্রদ্ধ যে তারা আর নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলছে না।
অপরদিকে বিজেপি জোটের নেতৃত্বে থাকা একনাথ শিন্ডে সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, গত দুই বছরে তাঁর সরকার যেসব জনহিতকর কাজ করেছে, তাই হবে তাঁদের জোটের মুখ। তাছাড়া আমরা গত দু’বছরের রেকর্ড কার্ডও পেশ করেছি। রাজনৈতিক মহলের মতে, মহারাষ্ট্রে বিজেপির লক্ষ্য ওবিসি ভোটকে সুসংহত করার। সেই উদ্দেশে বঞ্চিত নারীদের (১৮ থেকে ৬০ বছরের) মাসে দেড় হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রের অনেকেই যাঁরা বিজেপির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি শুনে অভ্যস্ত, বলেছেন বিজেপি কখনও মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না। শুধু প্রতিশ্রুতি দিতে অভ্যস্ত। তাই এই জোট আবার ক্ষমতায় আসবে বলে তাঁরা মনে করেন না।
অপরদিকে ঝাড়খণ্ডেও ভোটের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে বিজেপি। সম্প্রতি এই দলের নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসে— তাতে কারা প্রার্থী হবেন, তাদের সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই নির্বাচনী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানা যায়, রাজ্যের ৮১টি আসনের মধ্যে প্রায় ৬০ আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ আসন তফসিলি জনজাতির জন্য সংরক্ষিত থাকবে। মোদী ছাড়াও এই উচ্চ পর্যায়ের নির্বাচনী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং জেএমএম ছেড়ে আসা এবং পদ্ম শিবিরে যোগদান করা চম্পাই সোরেন। ওই ২৮ আসনকে পাখির চোখ করতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। এই আসনগুলিতে এবার অভিজ্ঞ ও প্রাচীন নেতাদের দাঁড় করানোর কথা ভাবছে গৈরিক শিবির। কারণ উনিশের ভোটে এই আসনগুলির মধ্যে মাত্র দু’টি আসনে জিতেছিল বিজেপি।
রাজনৈতিক মহলের খবর আর বিলম্ব না করে বিজেপি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে এবং প্রচার কাজও আরম্ভ করে দেবে। বিরোধী পক্ষ কংগ্রেসও বসে নেই। বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়াও জোট প্রার্থী নির্বাচনের কাজ আরম্ভ করে দিয়েছে। তবে বিজেপির মতো এখন ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস ঝাড়খণ্ডের নির্বাচন নিয়ে আসরে নামেনি। তবে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়াকে চাপে ফেলার জন্য এবার উঠে পড়ে লেগেছে। কংগ্রেস যেমন হরিয়ানায় জিতবে বলে নিশ্চিত ছিল, কিন্তু ভোটের ফলে পরাজয় স্বীকার করতে হল। তাই ঝাড়খণ্ডে বিরোধী জোটও জেতার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
হরিয়ানায় জিতে বিজেপি এবার বাড়তি উদ্যম নিয়ে ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে লড়বে। প্রকৃতপক্ষে হরিয়ানায় বিজেপি এবার জিতবে সে আশা ছিল না। আবার কংগ্রেস হরিয়ানায় হারবে সে চিন্তায় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতারা করেননি। কিন্তু ভোটের ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রেই তা মেলে না।