• facebook
  • twitter
Tuesday, 3 December, 2024

মেরুকরণের রাজনীতি

দশ বছরে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই মিথ্যা বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। প্রতিটি রাজ্যে মোদীর দল মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় এসে ‘যথারীতি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে ‘রেউড়ি সংস্কৃতি’ বলে একসময় বিরোধীদের বিদ্রূপ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মোদীর দলই বিগত বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে এবং লোকসভা নির্বাচনে রেউড়ি সংস্কৃতির পতাকা উড়িয়েছে। যেখানে যা পেরেছে ডোল বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েচ গেছে। ঝাড়খণ্ডে যথারীতি ২.৮ লক্ষ সরকারি চাকরি, ৫ লক্ষ স্বনির্ভর কর্মসংস্থান, বেকারদের মাসে ২০০০ টাকা অনুদান, মহিলাদের মাসে ২১০০ টাকা অনুদান, কৃষকদের সহায়তা সহ ২৫ দফা রেউড়ি বিতরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অথচ কিছুদিন আগেই মোদী বিরোধীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু বলেননি পাঁচ বছর আগে দেওয়া বিজেপির ভুয়ো প্রতিশ্রুতির কথা। তিনি নিজেই তো বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। গত দশ বছরে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই মিথ্যা বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে। প্রতিটি রাজ্যে মোদীর দল মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ক্ষমতায় এসে ‘যথারীতি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের কাছে গোহারা হেরে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল মোদী-শাহর দল। সেই বছরেই লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করলেও গত লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের কাছে অনেক জেতা আসনও খোয়াতে হয়েছে। গেরুয়া বাহিনী বুঝে গিয়েছে, যতই হিন্দুত্বের জিগির তোলা হোক না কেন, আদিবাসীদের ভোটের একটা বড় অংশ নিজেদের দিকে না আনতে পারলে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফেরা অসম্ভব। তাই আদিবাসীদের ভোটের দিকে পাখির চোখ করে দলের কৌশলী নেতারা অনেক ভেবেচিন্তে ভোট-প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি ঝুড়ি নৈবেদ্য সাজিয়েছেন। তার সঙ্গে এমন সব কৌশলী চাল চালা যাতে মুসলিম বিদ্বেষের জমি তৈরি করে হিন্দু ভোট যথাসম্ভব ঘরে তোলা যায় এবং আদিবাসীদের সঙ্গে মুসলিমদের বিরোধ সৃষ্টি করে আদিবাসী ভোটে বড় আকারে ভাগ বসানো যায়। ‘সংকল্পপত্র’ নাম দিয়ে অমিত শাহ যে নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন, তাতে পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে দ্বিচারিতা এবং সুবিধাবাদ।

বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য জমিহারা আদিবাসীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিজেপিই বনাঞ্চলের আইন সংশোধন করে আদিবাসীদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করেছিল। এখন উচ্ছেদ হওয়া অসহায় আদিবাসীদের জন্য দরদ দেখাচ্ছে। এক দেশ এক আইনের নামে অভিন্ন দেওয়ানি আইন ঝাড়খণ্ডে চালু করার কথা বলছে। কিন্তু আদিবাসীরা ক্ষিপ্ত হবে, এই ভয়ে আইনের আওতা থেকে আদিবাসীদের বাদ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আসলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে হিন্দু ভোটকে রাজনৈতিকভাবে কব্জা করার ষড়যন্ত্র এই অভিন্ন আইন।

পাশাপাশি, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা নাকি দলে দলে ঝাড়খণ্ডে ঢুকে আদিবাসী মেয়েদের বিয়ে করে ওদের জমি হাতিয়ে নিচ্ছে, এমন অভিযোগ শোনা গেল মোদীর মুখে। অথচ এই প্রশ্নে কোনও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান না থাকলেও মনগড়া তথ্য হাজির করে আদিবাসীদের ভীত ও বিভ্রান্ত করে ভোট পাওয়ার ফন্দি-ফিকির করেছে। সীমান্তে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকার সুযোগ যদি অমিত শাহের বিএসএপ না করে দেয়, তবে তারা আসছে কী করে? রাজ্যে যদি অনুপ্রবেশকারী এসে থাকে, তবে তার দায় তো অমিত শাহের। অনুপ্রবেশের উৎস বন্ধ না করলে তা আটকানো যায় না। অসমেও সেই সব সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। এমনকি অভিন্ন আইন করে উত্তরাখণ্ডে ভোট রাজনীতির বাজার গরম হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। আসলে এগুলি সবই আরএসএস-বিজেপির বিভাজন ও মেরুকরণ রাজনীতির হাতিয়ার মাত্র।