বাংলাদেশে সক্রিয় পাক-চিন

ফাইল চিত্র

বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে বেশকিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। ভারত সরকার সহ বিশ্বের অনেক দেশ বাংলাদেশের ঘটনাবলী কোন দিকে মোড় নেয়, সেদিকে নজর রাখছে। প্রথমত, কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার এবং আগরতলার ওই দেশের মিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে বাংলাদেশের তদারকি সরকার ডেকে পাঠিয়েছে। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে পুলিয়ে দেওয়া এবং মন্দির ধ্বংস ও অপবিত্র করার অবাঞ্ছিত ঘটনাবলীর কারণে ভারতে বিশেষ করে কলকাতায় তার প্রতিবাদে সাধু-সন্ন্যাসী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ বেশ চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। কারণ ওপার বাংলায় যা ঘটে তার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এপার বাংলায়। এইসব ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশ কোন পথে যেতে চাইছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। ভারত বাংলাদেশে প্রতিদিন যা ঘটছে, তার অবসান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

অপরদিকে তালিবানি কায়দায় বাংলাদেশের কোনও কোনও স্থানে মহিলাদের বাজারে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কট্টর মৌলবাদীদের তরফে মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে, এই ফরমান সত্ত্বেও কোনও মহিলা যদি বাজারে যায় কেনাকাটা করতে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার পরিবারকে সেই লোকালয়ে বয়কট করা হবে। ঢাকায় বিএনপি’র একটি সমাবেশে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের ভারতে পণ্য বর্জন করার ডাক দিয়েছে। প্রকাশ্য সমাবেশে বিএনপি’র এক নেতা দু-তিনটি ভারতের শাড়ি জনসমক্ষে তুলে ধরে তাতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নেতা সদর্পে ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা একবেলা না খেয়ে থাকব, তবুও ভারতের কাছে মাথা নত করব না।’ জনতা হাততালি দিয়ে তাঁর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু শাড়িগুলি কেনা হয়েছিল ভালো দাম দিয়েই। এখন অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল চিনের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আবাসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।

এই আলোচনায় চিনের দূত খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, চিন বাংলাদেশের পাশে আছে। বাংলাদেশের সঠিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে সরকারই আসুক, চিন সেই সরকারের পাশে থাকবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে, যেমন আগে দিচ্ছিল। অপরদিকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার জামায়েত ইসলামী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গেও দেখা করে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং সর্বতোভাবে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। এই দুই দেশের দুই দূত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। চিন অবশ্য বাংলাদেশকে অনেক দিন আগে থেকেই সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া শুরু করে। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বকালেই চিন বাংলাদেশকে সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে—তার মধ্যে একটি সাবমেরিন অন্যতম। চিন আস্তে আস্তে বাংলাদেশে ঢুকে তার প্রভাব বিস্তার করছে—বিষয়টি ভারত সরকার মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় ভারত চিনের এইি আধিপত্যকে ভালো চোখে দেখছে না বলে হাসিনাকে জানানো হয়। এ ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলে শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এ ব্যাপারে ভারতের কোনও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিবিড় বন্ধুত্বের, সৌহার্দ্যের— এই সম্পর্ক অটুট থাকবে। ভারত তবুও বাংলাদেশে চিনের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি খোলা মনে মেনে নেয়নি।


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যা এখন অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে ইসকনের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আশ্রমের প্রধান চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের পর। চট্টগ্রামের দায়রা আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার শুনানি ছিল দিন কয়েক আগে। কিন্তু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনও আইনজীবী কোর্টে দাঁড়াননি। কারণ যে ৫১ জন আইনজীবী নিম্ন আদালতে তাঁর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ওপর অত্যাচার নেমে আসে। একজন আইনজীবী বিক্ষোভ কালে মারা যান। চট্টগ্রামে শুনানির দিন মৌলবাদী এবং পকিস্তানপন্থীরা চিন্ময় দাসের আইনজীবীদের প্রাণে মারার ভয় দেখায় যদি তাঁরা সন্ন্যাসীর জামিনের জন্য সওয়ালকরতে কোর্টে দাঁড়ায়। ফলে বিচারক এই শুনানির দিন একমাস পিছিয়ে দেন। এই ঘটনা এবং চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র এই সংগঠনের সন্ন্যাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কলকাতায় ইসকনের সন্ন্যাসীরাও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে তাঁর আশু মুক্তির দাবি করেন।

এদিকে ১০ ডিসেম্বর ভারতের বিদেশ সচিবের ঢাকায় যাওয়ার কথা বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে নির্যাতন প্রতিদিনই বাড়ছে, তার প্রেক্ষিতে ভারতের বিদেশ সচিবের ঢাকা যাওয়া হয় কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।