• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

চারের মধ্যে এক

রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই রিপোর্টে দারিদ্র বিস্তারে গ্রাম-শহরের ফরাকটাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গরিব মানুষের ৮৩.৭ শতাংশই গ্রামে থাকেন। বিশ্বজুড়ে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে দারিদ্র অনেক বেশি সামগ্রিকভাবে, বিশ্বের গ্রমীণ জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ গরিব। তুলনায় শহুরে মানুষের মধ্যে গরিব ৬.৬ শতাংশ।

বিশ্বজুড়ে ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এর প্রায় অর্ধেকই, ৪৮.৫ শতাংশ শিশু নয়তো কিশোর। আর তার মোটামুটি এক-চতুর্থাংশই ভারতীয়। সহজ করে বললে, বিশ্বের চারজন গরিব মানুষের একজন থাকেন ভারতে। বিশ্বব্যাপী বহুমাত্রিক দারিদ্র সূচক ২০২৪ ‘সংঘাতের মধ্যে দারিদ্র’ শিরোনামে রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) প্রকাশিত রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে।

বিগত এক দশক ধরে কতই না গল্প শোনানো হচ্ছে। মেক ইন ইন্ডিয়া থেকে ভারত হবে বিশ্বগুরু। বা সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মতো গালভরা শব্দমালা। বাস্তব কিন্তু তার ধারে কাছে নেই। ভারতে ক্রমে ক্রমে বাড়ছে বেকারত্ব, বাড়ছে দারিদ্র। বিশ্বের যে পাঁচটি দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ দারিদ্রের মধ্যে রয়েছেন, তার একটি হল ভারত। নিউ ইয়র্কে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী যতই দাবি করুন ১০ বছরে তিনি ১৫ কোটি মানুষের দারিদ্র মুছে দিয়েছেন। বাস্তবে এই ভারতে এখনও ২৩ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষকে দারিদ্রের মধ্যে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে (ইউএনডিপি’র সঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের যৌথ উদ্যোগে রিপোটর্টি প্রস্তুত করা হয়। এই রিপোর্টেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চরম দারিদ্রের সঙ্গে দিন কাটানো ১১০ কোটি মানুষের চারজনের একজন থাকে ভারতে। এর পরেই রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া ও ডেমোক্রেটিভ রিপাবলিক কঙ্গো।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে বিশ্বের দারিদ্রতম মানুষের ৮৩.২ শতাংশ সাব সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাস করে। সমীক্ষাটি করা হয়েছে বাসস্থান, নিকাশী, বিদ্যুৎ, রান্নার জ্বালানি, পুষ্টি ও স্কুলে উপস্থিতির মতো সূচকগুলি ব্যবহার করে দারিদ্রের মাত্রা নির্ধারণ করে। দক্ষিণ এশিয়ায় ২৭ কোটি ২০ লক্ষ এমন পরিবার রয়েছে, সেখানে অন্তত একজন অপুষ্টিতে রয়েছে। সাব সাহারান অঞ্চলে তেমন পরিবোরের সংখ্যা ২৫ কোটি ৬০ লক্ষ। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিতে দারিদ্রের স্তর অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ১১২ টি দেশে ৬০০ কোটি মানুষের উপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে, যাদের মধ্যে ৪৫ কোটি ৫ লক্ষ অর্থাৎ ৪০ শতাংশ মানুষ সংঘাতের ছায়ার মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরের সংঘাতগুলি আরও তীব্র ও বহুমুখী হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছে। সেই সঙ্গে জীবনযাত্রা ও জীবিকায় ব্যাপক আঘাত নেমে এসেছে।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের এই রিপোর্টে দারিদ্র বিস্তারে গ্রাম-শহরের ফরাকটাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গরিব মানুষের ৮৩.৭ শতাংশই গ্রামে থাকেন। বিশ্বজুড়ে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে দারিদ্র অনেক বেশি সামগ্রিকভাবে, বিশ্বের গ্রমীণ জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ গরিব। তুলনায় শহুরে মানুষের মধ্যে গরিব ৬.৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিাপোর্ট।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবনধারণের মান সহ ১০টি সূচক ব্যবহার করে ২০১০ সাল থেকে ইউএনডিপি ও অক্সফোর্ড এই মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্স (এমপিআই) প্রকাশ করে আসছে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে জিডিপি’র হার প্রকাশ করলেও মোদীর ভারতে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের বাস।