মার্কিন ধনকুবের এলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স (আগের ট্যুইটার)। এবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপরে আক্রমণের অভিযোগ তুলল এক্স। শুধু বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ আনা নয়, এক্স একেবারে আদালতে টেনে নিয়ে গেল মোদী সরকারকে। অনলাইনে মত প্রকাশকে বেআইনিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে ভারত সরকার এবং চাপিয়ে দিচ্ছে একতরফা সেন্সরশিপ বা নিষেধাজ্ঞা, এই অভিযোগ তুলে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল এক্স।
মামলায় কেন্দ্রের সরকারের বিরুদ্ধে মূলত দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯(৩)(বি) নম্বর ধারার অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছে এক্স। মাস্কের কোম্পানির বক্তব্য, এই ধারাকে সরকার ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনেরই ৬৯এ নম্বর ধারায় যে আইনি কাঠামোর কথা বলা আছে, তাকে এড়িয়ে অনলাইনে কোনও পোস্ট বা উপস্থাপিত কোনও বিষয়বস্তুকে আটকাতে ভারত সরকার ৭৯(৩)(বি) নম্বর ধারাটিকে একটি সমান্তরাল কাঠামো বা পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে। মত প্রকাশের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে রায় আছে, ভারত সরকার এর মধ্য দিয়ে তাকেও লঙ্ঘন করছে। ২০১৫ সালে শ্রেয়া সিঙ্ঘল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলেছিল, শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ নম্বর ধারায় উল্লেখিত পদ্ধতি মেনে বা যথাযথ বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনলাইনে কোনও পোস্টকে ব্লক করা বা আটকে দেওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, ওই রায়েই সুপ্রিম কোর্ট তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ নম্বর ধারাটিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী ও অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিয়েছিল।
কোনও ডিজিটাল বিষয়বস্তুকে জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও আইনশৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করলে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ নম্বর ধারায় তা ব্লক করার ক্ষমতা আছে সরকারের। কিন্তু ২০০৯ সালের তথ্য প্রযুক্তি (পোস্ট ব্লক করার পদ্ধতি ও রক্ষাকবচ) বিধিতে বলা হয়েছে, কোনও পোস্টকে ব্লক করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাঠামোগত পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার মধ্যে না গিয়ে কোনও রকম পরীক্ষা বা পর্যালোচনা ছাড়াই ডিজিটাল পোস্ট ব্লক করার জন্য ৭৯(৩)(বি) নম্বর ধারাটিকে একটি চটজলদি পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করছে। একতরফা নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যে আইনি ব্যবস্থা রয়েছে, সরকারের এই পদক্ষেপে তা সরাসরি লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এই মামলায় মোদী সরকারের সহযোগ পোর্টালেরও বিরোধিতা করা হয়েছে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার এই পোর্টাল চালু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির ৭৯(৩)(বি) ধারায় যেসব ডিজিটাল বিষয়বস্তুকে ব্লক করতে বলা হবে, সেগুলি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে এই পোর্টাল, এই ভাবনার কথা বলেই পোর্টালটি চালু করেছে মোদী সরকার। এই পোর্টালের জন্য প্রত্যেক সোস্যাল মিডিয়াকে একজন কর্মী নির্দিষ্ট করতে বলেছে সরকার, যিনি প্রতিষ্ঠানের হয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে পোর্টালটির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখবেন। কিন্তু এক্স সহযোগের সঙ্গে তাদের এমন কোনও কর্মীকে যুক্ত করেনি। মাস্কের সংস্থার বক্তব্য, ডিজিটাল বিষয়বস্তুতে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহারের জন্য এই পোর্টালটি তৈরি করেছে ভারত সরকার। কোনও আইনি পর্যালোচনা ছাড়াই অনলাইন পোস্টকে সরিয়ে দেওয়া বা ব্লক করার জন্য এর মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে চাপ দেওয়া হয়। বিচারবিভাগীয় পর্যবেক্ষণকে বাদ দিয়ে অনলাইন পোস্টের উপর একতরফা সরকারি নিয়ন্ত্রণ চালু করার এটি আরেকটি প্রচেষ্টা।