কর্ণাটকে জোর করে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এই অভিযোগ নিয়ে বেঙ্গালুরু বিশেষ আদালতে মামলা দায়ের করেন জন অধিকার সংঘর্ষ পরিষদের সহ-সভাপতি আদর্শ আর আইয়ার। আদালতে তাঁর অভিযোগ, সীতারামন ইডি-র অধিকারিক এবং বিজেপি-র কেন্দ্র ও রাজ্য নেতাদের সাহায্য নিয়ে বহুজাতিক এবং কর্পোরেট সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকদের নানাভাবে ভয় দেখিয়ে, গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে বন্ডের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন। এভাবে সীতারমন ও তাঁর সহযোগীরা মিলে ৮ হাজার কোটি টাকার উপর অর্থ আদায় করেছেন। সাংবিধানিক পদ ব্যবহার করে অর্থমন্ত্রী ইডি আধিকারিকদের দিয়ে কর্পোরেট আধিকারিকদের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বন্ডের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন। ইডি আধিকারিকরা অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে মিথ্যা অভিযোগে কর্পোরেট আধিকারিকদের বাসভবনে তল্লাশির নামে ভয় দেখাতে অভিযান চালিয়েছে। এভাবে টাকা তোলায় নির্মলাকে সাহায্য করেছেন বিজেপি নেতারাও।
আদালত কর্ণাটক পুলিশকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগী পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ মতো অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে ৩৮৪ ধারা (জোর করে অর্থ আদায়) এবং ১২০ বি ধারায় (অপরাধের ষড়যন্ত্র) এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে মোদীর নির্বাচনী বন্ড চালুর পর তাতে শাসক দলের বিরুদ্ধে জোর করে টাকা আদায়ের প্রচুর অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গত ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক ও বেআইনি বলে বাতিল করে দেয়। আদালতের নির্দেশে সেই সময়ে কর্পোরেটদের থেকে বন্ডের মাধ্যমে যে টাকা তোলা হয়েছে তার তালিকা ও প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায় শাসক দল প্রভাব খাটিয়ে বন্ডের সিংহভাগ অর্থ দলের কোষাগারে জমা করেছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে বন্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে হয় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও নির্বাচন কমিশনকে। সেই ইস্যুতেই আবার মুখ পুড়ল মোদী সরকারের।
ঘটনাচক্রে, দজমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়ার নামে এফআইআর দায়ের হওয়ায় তাঁর পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। আদালতের নির্দেশের পর এবার পাল্টা সুর চড়াচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। এক প্রবীন কংগ্রেস নেতা বলেন, বিজেপি নেতাদের যুক্তি নেমে তো তাহলে নির্মলা সীতারামনের ও পদত্যাগ করা উচিত। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা আবার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া অর্থমন্ত্রী এমন কাজ করতে পারেন না। মোদীর নামেও এফআইআর করা উচিত।’
জনাধিকার সংঘর্ষ পরিষদ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতি আদর্শ আর আইয়ার তাঁর অভিযোগ পত্রের সঙ্গে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি-বিশ্লেষণ দাখিল করেন। সেখানে বলা হয়েছে, অনিল আগের ওয়ালের সংস্থা বেদান্ত ও স্টারলাইটের বিরুদ্ধে দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। তার জোরেই আগর ওয়াল ২০১৯ সালের এপ্রিল ২০২২ সালের আগস্ট ও ২০২৩ সালের নভেম্বরে সব মিলিয়ে ২৩০.১৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনতে বাধ্য হন। ইডি তল্লাশি, ক্রোক ও গ্রেফতারির মুখে পড়তে হয়েছিল অরবিন্দ ফার্মাকেও। প্রবল চাপের মুখে পড়ে এই সংস্থা ও ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি ও ৮ নভেম্বর, ২০২২ সালের ২ জুলাই ও ১৫ নভেম্বর নির্বাচনী বন্ড কেনে। তাদের কেনা মোট বন্ডের পরিমাণ ছিল ৪৯.৫ কোটি টাকা।
নির্বাচনী বন্ডের আড়ালে তোলাবাজি চালিয়েছে বিজেপি। অভিযোগকারী প্রথমে তিনকনগর থানায় সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় সাংসদ বিধায়কদের জন্য বিশেষ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। আগামী ১০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানি।