দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের অন্তর্নিহিত বার্তা। তবে আশা করা যায় সামরিক সংস্কারের বিষয় নিয়ে খুব তাড়াহুড়াে করা হবে না। কিন্তু উচ্চতর সামরিক পরিচালন ব্যবস্থায় ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ নিয়ােগের ঘােষণার ব্যাপারে মােদি একটু তাড়াহুড়াে করেছেন।
শিরােনাম দখলকারী এই ঘােষণার আগে কিছু পূর্ণাঙ্গ চিন্তাভাবনার কাজ হয়েছে, যদিও এটা ঠিক যে লালকেল্লার ভাষণে এ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কিছু জানানাে হয়নি। এই ঘােষণার পর ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে এ ব্যাপারে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এই সময়ের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ীর পরমাণু অস্ত্রসম্ভার প্রথমে ব্যবহার না করার নীতি বাতিল করা নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছেন। ফলে ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’ নিয়ে যথাযােগ্য ভাবনাচিন্তা হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
অন্তত দু’দশক আগের এই প্রস্তাব রূপায়ণে কেন এতদিন অনুমতি দেওয়া হয়নি তা নিয়েও নানা জল্পনা রয়েছে। এটা গত দু’মাসের মধ্যে চুড়ান্ত হয়েছে বলে যেহেতু একটা গুঞ্জন আছে তাই এই উদ্যোগের সার্থকতা নিয়ে একটা আশঙ্কা থাকা স্বাভাবিক। সরকার যদি বলিষ্ঠ হয় তাহলে কোনও সমালােচনার মুখে তাদের এই প্রয়াস থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়।
সামরিক বাহিনীর একক পরামর্শ, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন ফাইভ স্টার জেনারেলকে নিয়ােগ করা উচিত। ‘সমানদের মধ্যে প্রথম’ — এই হিসাবে আরেকজন ফোর-স্টার জেনারেলকে নিয়ােগ করা বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি দর্শনসুলভ কাজ হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাই যখন ইতিমধ্যেই শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত তখন ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’-এর কী ভূমিকা থাকবে? এই পদের জন্য কোনও বর্তমান প্রধানের পক্ষে যদি সন্মতি দেওয়া হয়, তাহলে বাহিনীর বিভিন্ন শাখার মধ্যে কোনও লড়াইয়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে না তাে? এই পদের জন্য ‘সিনিয়রিটি’ একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না, যদিও এই ‘মাপকাঠি’ ব্যাপারটি সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে মূল্যায়ন সব সময় অগ্রাধিকার পায় এমনটাও নয়।
এজন্য সিনিয়র অফিসারদের চিহ্নিত করার একটা সুষম বাছাই প্রক্রিয়া স্থির করতে হবে। যাদের নির্বাচন করা হবে তাঁদের নিজেদের বাহিনীর আনুগত্য অর্জন ছাড়াও বাকি শাখাগুলিকে নিয়ে চলার ক্ষমতাও থাকতে হবে। এগুলি জটিলতার কিছু কিছু নমুনা যার উদ্ভব হতে পারে। যখন আসল বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন আরও সমস্যা সামনে আসতে পারে।
এই নিয়ে উর্দিধারী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আমলাদের মধ্যে পরস্পরকে খোঁচা দেওয়ার ব্যাপারও ঘটতে পারে, কারণ কর্তৃত্বের ভাগাভাগি নিয়ে পুনর্বিন্যাসের প্রয়ােজন আছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্ক ইতিমধ্যেই ইগাে সমস্যায় জর্জরিত।
আসলে ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’ নিয়ােগ সংক্রান্ত উদ্যোগের সমালােচনা করা হচ্ছে না, শুধু বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে কোনও সামরিক সংস্কার করা যাবে না। এই পদে যিনি নিযুক্ত হবেন তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁর মূল্য প্রমাণ করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভাবীকালই অবশ্য তার প্রমাণ দেবে।