শহরে নেপালি নববর্ষ উৎসব

বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান৷ একথা আবারও প্রমাণিত হল গত শনিবার ১৩ এপ্রিল৷ বাঙালির নববর্ষের ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল৷ যেদিন এই শহরেরই নেপালি দূতাবাসে পালিত হল নেপালি নববর্ষ, পয়লা বৈশাখ৷
নেপালি নববর্ষ যে দিনের হিসেবেই বাঙালির নববর্ষের তুলনায় একদিন এগিয়ে গিয়েছে, শুধু তা-ই নয়৷ ইংরেজি ক্যালেন্ডার তথা গ্রেগরিয়ান হিসেবে নেপালের নববর্ষ এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৫৭ বছর৷ একদম সঠিক হিসেব ধরলে ৫৬ বছর ৮ মাস ১৭ দিন৷ মানে এবছর নেপালের ক্যালেন্ডারে ২০৮১৷ কারণ নেপালের ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করা হয় বিক্রম সম্বৎ তথা বিক্রমাব্দের হিসেবে৷ সূর্যের গতি এবং এবং অবস্থান মেনে এই বিক্রম সম্বৎ -এর গণনা করা হয়৷ এর সঙ্গে সৌরপঞ্জি এবং হিন্দু শাস্ত্রের আচার অনুষ্ঠানের কোনও বিরোধ নেই৷
উজ্জয়িনীর রাজা বিক্রমাদিত্য এই বিক্রম সম্বৎ -এর প্রচলন করেন৷ তবে এই বিক্রমাদিত্য কিন্ত্ত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্য নন৷ এমনকী অযোধ্যা নগরের মন্দির স্থাপনে যে বিক্রমাদিত্যের কথা বলা আছে, তিনিও নন৷ এই বিক্রমাদিত্য দু হাজার বছর আগেকার দ্বাদশ শতকে শকদের হারিয়ে উজ্জয়িনীর সিংহাসনে বসেছিলেন৷ তারপর শকাব্দের অবসান ঘটিয়ে তিনিই বিক্রমাব্দের তথা বিক্রম সম্বৎ প্রচলন করেন৷

তবে নেপালে কোন রাজার আমলে বিক্রম সম্বৎ চালু হয়েছিল, তা পুরোপুরি জানা যায়নি৷ যতটুকু জানা গিয়েছে বিংশ শতাব্দীতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র সামসের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত শংকর পণ্ডিতকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন নেপালের সন -তারিখ হিসেবের জন্য গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে বিক্রম সম্বৎ -এর যথার্থতা বিচার করতে৷ নেপালের হিন্দু এবং বৌদ্ধ অধিবাসীদের সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়েই এই বিক্রম সম্বৎ নেপালে বর্ষপঞ্জির মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে বিক্রম সম্বৎ শুধু নেপালেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ যেমন শ্রীলংঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভূটান ইত্যাদি দেশেরও প্রামাণ্য বর্ষপঞ্জি৷

তবে বিক্রম সম্বৎ অনুসারে নেপালের নববর্ষ হল বৈশাখের পয়লা তারিখে৷ নেপালেও বারোটি মাস রয়েছে, বাংলা ক্যালেন্ডারের মতোই৷ আর নেপালের নববর্ষ উৎসবে বৈশাখের প্রথম দিনটিতে নেপালিরা বিশ্বের যেখানেই থাকুন, সেখানেই পালন করে থাকেন তাদের নববর্ষ উৎসব৷ এই দিনটি তাদের নতুন স্বপ্ন দেখার দিন, নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন৷ নেপালে এই দিনটি খুবই আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়৷ এই নববর্ষ উপলক্ষে নেপালীরা ঘর সাজায়, রাস্তায় নৃত্য-গীত বাদ্য-মুখোশ সহযোগে শোভাযাত্রা বের হয়, আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হয়, নানান উপাদেয় খাবার তৈরি করেন নেপালের বাসিন্দারা৷


গত ১৩ এপ্রিল কলকাতাস্থ নেপাল দূতাবাসেও পালিত হল নেপালি নববর্ষ উৎসব৷ উপস্থিত ছিলেন কনসাল জেনারেল ইশর রাজ পাউডেল, নেপালি দূতাবাস (কলকাতাস্থ) -এর সচিব সতীশ থাপা৷ এই সতীশ থাপার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কালকাতাতেই৷ স্বচ্ছন্দে বাংলাও বলতে বলতে পারেন৷ সেদিনের উৎসবে নৌমতি বাজা নামে নেপালি ব্যান্ড এবছরই প্রথম এই উৎসবে অংশ নিল৷ ছিল নেপালের স্থানীয় ঘরানার ময়ুর ডান্স, ডালি ডালি মা, কওদা ডান্স৷ চিকেন মোমো, পর্ক কাবাব, রকসি নামে নেপালি পানীয়৷ এইভাবেই গত ১৩ এপ্রিল এক টুকরো নেপাল, বাঙালির পয়লা বৈশাখকে পেছনে ফেলে এই শহরের উৎসব মানচিত্রে ঢুকে পড়ল৷