• facebook
  • twitter
Wednesday, 4 December, 2024

সংরক্ষণ বিরোধী মোদী

নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ দু’জনেই রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কে কত নির্জলা মিথ্যা বলতে পারেন।

ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ দু’জনেই রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কে কত নির্জলা মিথ্যা বলতে পারেন। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে তারই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। ওই দুই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে খরচ হল কোটি কোটি টাকা। বিজেপির নানা রস্তরের নেতাদের নিয়ে আকাশে শকুনের ঝাঁকের মতো উড়ল হেলিকপ্টার। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে, ধর্মীয় আবেগতাড়িত কহের এবং জাতপাত বিভাজনের গোলোক ধাঁধায় মানুষকে বিভ্রান্তকরে ভোট কুড়োবার চেষ্টায় মেতে উঠল বিজেপি। কখনো মুসলিম ভীতি, কখনো বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ভয় দেখিয়ে দলিত, আদিবাসী ও ওবিসি’দের ত্রাতা সাজার চেষ্টা। আবার কখনো দলিত, আদিবাসী, ওবিসি’দের সংরক্ষণ কেড়ে নেবার ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের কল্পিত মিথ্যার নির্মাণ। ক্ষমতা দখলের এমন বেপরোয়া চেষ্টা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। এতে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-র সাফল্য মিললেও ঝাড়খণ্ডে ভরাডুবি হয়েছে সঙ্ঘ পরিবার ঘনিষ্ঠ দলটির।

একদা আরএসএস-এর প্রচারক, এখন বিজেপির সর্বাধিনায়ক নরেন্দ্র মোদী যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন সেখানে নারীর সম্মান, মর্যাদা, সমানাধিকারের সুযোগ নেই। বিজেপি কে হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে সেখানে সামাজিক ও পারিবারিক ব্যবস্থা হবে মনুবাদী অনুসারী অর্থাৎ নারীর স্থান পরিবারের অন্দরে। স্বামী ও পুরুষের সেবাযত্ন করা, সন্তানের জন্মদান ও লালন-পালন করাই নারীর একমাত্র কাজ। মোদী-শাহরা এই মতাদর্শেই বিশ্বাসী। অথচ ভোটের জন্য এই মতাদর্শকে গোপন অ্যাজেন্ডায় আড়াল করে নারী দরদী হবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। ওদের ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ স্লোগান ইতিমধ্যেই নিকৃষ্ট ভাঁওতায় পড়িতে হয়েছে।

আরএসএস-বিজেপির আদর্শ মনুবাদী সমাজে উচ্চবর্ণের আধিপত্য। সেখানে দলিত-আদিবাসী-ওবিসি’দের কোনও স্থান নেই। অথচ ক্ষমতার লোভে শুধু ভোট জেতার জন্য তাদের দলিত-আদিবাসী-ওবিসি প্রেম উথলে ওঠে। আসলে ওবিসি ভোটই বিজেপি পাথর কাঁটা। গত লোকসভা নির্বাচনে ওবিসি ভোটই বিজেপির পরাজয়ের রাস্তা সহজ করে দিয়েছিল। আর এটা সম্ভব হয় বিরোধীদের জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিকে সামনে রেখে জোরালো প্রচারের ফলে। বিহারে জাতগণনার ফলাফল থেকে দেখা গেছে ওবিসি জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি। তাই সারা দেশে এই গণতার দাবি ন্যায্যতা পেয়েছে। কংগ্রেস চায় সংরক্ষণের ঊর্ধ্ব সীমা ৫০ শতাংশের বেশি করে সমাজের সব পশ্চাদপদ অংশের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে। এই দাবির বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হয়ে মোদীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

প্রচারে পাল্লা দিয়ে আবোল তাবোল প্রলাপ বকছেন মোদী-শাহরা। বলছেন কংগ্রেস নাকি সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেবে। কখনো বলছেন ওবিসি’দের সংরক্ষণ কেড়ে নিয়ে মুসলিমদের দিয়ে দেবে। অথচ কে না জানে সঙ্ঘ পরিবার সংরক্ষণের বিরোধী। ব্রাহ্মণ্যবাদকে সুরক্ষিত রাখতে পশ্চাদপদদের জন্য কোনওরকম সংরক্ষণ তারা চায় না। মণ্ডল কমিশনের সময়ও বিরোধিতা করেছিল বিজেপি। আজও তারা চায় না জাতভিত্তিক জনগণনা। কারণ তাতে উচ্চবর্ণের স্বার্থহানি হতে পারে। অথচ ভোটে ভরাডুবির ভয়ে সেটা প্রকাশ্যে বলতে পারছে না। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রচার করে ওবিসি ভোট পাবার চেষ্টা করছে। ওবিসি ভোটে থাবা বসিয়ে এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারলে জাতগণনা বন্ধ করে দেবে বিজেপি। সমাজের পশ্চাদপদ খেটে খাওয়া মানুষের সর্বনাশ করে উচ্চবিত্তদের আরও বেশি বেশি সেবা করতে চায় মোদী ও সঙ্ঘ পরিবার।