ভারতের ভবিষ্যৎ প্রগতি ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপদের মুখে। মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে মোদী সরকার ভীরু প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আসলে শুল্ক নিয়ে আমেরিকার চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যে এই আত্মসমর্পণের প্রতিফলন ঘটেছে কেন্দ্রীয় বাজেটে। আমেরিকার হার্লে-ডেভিডসন বাইক, বার্বন হুইস্কি, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, মদ ও আরও কিছু উৎপাদনের উপর শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সপরের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন মার্কিন পণ্যের উপর ভারতের শুল্কের সমালোচনা করেছেন, তখন মোদী নীরব থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম ভাষণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সব দেশের পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছিলেন, যেসব দেশ তাঁর মতে মার্কিন বাণিজ্য নীতির সুবিধা নিচ্ছে। তাঁর সেই তালিকায় মেক্সিকো, কানাডা, চিন, ব্রাজিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রয়েছে ভারতও। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, মার্কিন পণ্যের উপর চড়া হারে শুল্ক চাপিয়ে রেখেছে ভারত। ২ এপ্রিল থেকে ভারত সহ এমন দেশগুলির পণ্যে পাল্টা চড়া হারে শুল্ক চাপানোর হুমকিও দেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে মেক্সিকো ও চিন থেকে আমেরিকায় রপ্তানিকৃত নানা পণ্যের সঙ্গে কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম-জাত পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি আমেরিকার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ একদিকে বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তি ও অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধিকে লঙ্ঘন করেছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে মেক্সিকো ও চিন চড়া হারে শুল্ক ধার্য করেছে মার্কিন নানা পণ্যের উপর। একই ধরনের পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে বলে কানাডাও জানিয়েছে। সেখানে ভারত সরকারের পদক্ষেপ একেবারে আজ্ঞাবহের মতো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের পুনর্নিবাচনের হাতে গোনা যে কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান আমরিকায় দৌড়েছিলেন তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে, তার মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি এবং তাদের সহযোগী প্রচার মাধ্যমগুলি প্রধানমন্ত্রীর এই আমেরিকা সফরকে মোদীর নেতৃত্বের স্বীকৃতি বলে তুলে ধরেছিল। ট্রাম্পের স্তাবকতা করতেই যে মোদী গিয়েছিলেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দু’জনের যৌথ সাংসাবিদক সম্মেলনে ট্রাম্প যখন মার্কিন পণ্যে ভারতের শুল্কের সমালোচনা করে গিয়েছেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে মোদী চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে মার্কিন শুল্কের ফাঁস থেকে বেরিয়ে যাওয়া যাবে বলে মোদী সরকার মনে করছে।
কিন্তু এই দ্বিপাক্ষিক বণিজ্য চুক্তির মর্মার্থ ফাঁস করে দিয়েছেন মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক। কোনও রকম অস্পষ্টতা না রেখে তিনি বলেছেন, আমেরিকা চায় ভারত যেন তার ‘কৃষি বাজার খুলে দিক’। এর অর্থ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা শুধু শুল্কে ছাড় চাইছে না, আরও ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছে। যেমন, কৃষিতে ভরতুকি কমাতে হবে। মার্কিন কোম্পানিগুলির সামনে খুলে দিতে হবে ফসল সংগ্রহে সরকারি উদ্যোগের দরজা। মার্কিন ওষুধ কোম্পানিগুলির স্বার্থে সংশোধন করতে হবে দেশের পেটেন্ট আইন এবং অবাধ করতে হবে ডেটার সরবরাহ। লুটনিকের কথা অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি অনুসারে ভারতের কৃষিক্ষেত্রকে যদি আমেরিকার সামনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক কমাোনা হয়, তাহলে তার পরিণতি হবে ধ্বংসাত্মক। দেশের প্রায় ৭০ কোটি মানুষ জীবিকার জন্য কৃষির উপর নির্ভর করেন। ছাড় দিয়ে মার্কিন কৃষিপণ্যকে ভারতের বাজারে ঢুকতে দেওয়া হলে, দেশের এক বিশাল সংখ্যক মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে, দীর্ঘস্থায়ী কৃষি সংকটের কারণে ইতিমধ্যে যাদের নাজেহাল অবস্থা। একই সঙ্গে ভারতের পেটেন্ট আইনকে দুর্বল করে দেওয়া হলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, বিশেষত ওষুধ শিল্প, যারা মার্কিন বাজারের মারাত্মক চড়া দামের তুলনায় সাধ্যের মধ্যে দামে ওষুধ উৎপাদন করে। এর মধ্যে বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে যে শুল্ক কমানো হয়েছে, তার লক্ষ্য, ট্রাম্পের বিশ্বস্ত সহযোগী এলন মাস্কের টেসলা গাড়িকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।
ট্রাম্পের আমেরিকার দমনমূলক কৌশলের কাছে নরেন্দ্র মোদীর ভারত যেন ক্রমশ নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করছে।