• facebook
  • twitter
Wednesday, 20 November, 2024

বেহাল মোদীর মডেল

প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন এবার গোটা দেশেই প্রয়োগ হবে গুজরাত মডেল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী হয়ে নরেন্দ্র মোদী সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন এবার গোটা দেশেই প্রয়োগ হবে গুজরাত মডেল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদী ছিলেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাত মডেল বোঝাতে গিয়ে মোদী জোর গলায় বলেছিলেন, লেখাপড়ার জন্য কোজের জন্য, রোজগারের জন্য ভারতীয়রা আর মার্কিন ভিসার জন্য লাইন দেবে না। বদলে তার জন্য আমেরিকানরাই লাইন দেবে ভারতের ভিসার জন্য। গুজরাত মডেল মানে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাওয়া। শিল্পে, বিনিয়োগে, আয় বৃদ্ধিতে, কর্মসংস্থানে সবার সেরা। গুজরাত মডেল নাকি এমন এক স্বপ্নকে বাস্তব করে দিচ্ছে যেখানে দারিদ্র থাকবে না, বেকারি থাকবে না, ঘরে ঘরে উচ্চ আয় ও স্বচ্ছলতা বিরাজ করবে, শিক্ষায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না, স্বাস্থ্যে কোনও ঘাটতি থাকবে না, মাথায় ছাদহীন থাকবে না কেউ।

এখন অবশ্য জানা যাচ্ছে, মোদীর বানানো গুজরাত মডেলে শুধু গুজরাতি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদেরই আস্থা নেই তা নয়, গুজরাতের সাধারণ মানুষেরও তাতে কোনও ভরসা নেই। তাই সংবাদে প্রকাশ, এখন প্রতি ঘণ্টায় বেআইনিভাবে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে ১০ জন ভারতীয় ধরা পড়ছে। আর মোদীর পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই ১০ জনের মধ্যে ৫ জনই মোদীর নিজের রাজ্যের বাসিন্দা। প্রসঙ্গত, ধরা পড়ছে ১০ জন, কিন্তু ধরা না পড়ার সংখ্যা বহুগুণ বেশি। তাহলে প্রশ্ন, গুজরাতে মোদীরা এমন উন্নয়ন করছেন য কাজ না পেয়ে, ন্যায্য মজুরি না পেয়ে দলে দলে গুজরাতিরা আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন।

এতদিন অবশ্য এটাই সকলের জানা ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরাও দেশের ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেত। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত টাকা লুট করে বিদেশে বিলাসবহুল রাজকীয় জীবন কাটানো শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের সকলেই টাকা লুটের আগে হয় মোদী-শাহ ঘনিষ্ঠ ছিল অথবা মোদী ভক্ত হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে যে ‘গুজরাত মডেল’ নির্মাণ করেছিলেন সেই মডেলের একদিকে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসাবে উজ্জ্বল হয়েছে দু’দশক আগের ভয়াবহ গুজরাত দাঙ্গার সময় নির্বিচারে সংখ্যালঘু গণহত্যা অভিযান, অন্যদিকে ছিল গুজরাতের শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের ব্যাঙ্কের টাকা লুটেপুটে নিয়ে বিদেশে পালানো। এইসব অসৎ লুটেরা ব্যবসায়ীদের টাকা লুণ্ঠনে এবং সেই টাকা নিয়ে বিদেশে পালানোতে নানাভাবে সহযোগিতা করেছে বিজেপির নেতা ও মন্ত্রীরাই। এক সময় খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী গলা ফুলিয়ে বলেছিলেন বেআইনি পথে বিদেশে পাচার হওয়া সব টাকা তিনি দেশে ফিরিয়ে আনবেন। বাস্তবে দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর আসন দখল করে থাকলেও এক কানাকড়িও তিনি দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেননি। চোর-জোচ্চোর ব্যবসায়ীরা বিপুল টাকা দেশ থেকে হাতিয়ে নিয়ে গিয়ে সপরিবারে বিদেশে দিব্যি বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে। কেউ আবার সেই জালিয়াতির টাকা বিদেশে লগ্নি করে মোটা মুনাফা কামাচ্ছে। নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ বলে জাহির করা মোদী নাকি এমন প্রভাবশালী যে বিদেশি রাষ্ট্রগুলিও তাঁকে সমীহ করে চলে। আরএসএস-বিজেপি এই প্রচার করার পরও পালিয়ে যাওয়া লুটেরা ব্যবসায়ীদের একজনকেও দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেননি মোদী। কোনও দেশই মোদী সরকারের আবেদনে সাড়া দিয়ে লুটেরা ব্যবসায়ীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়নি। এটাই ধরে নিতে হবে যে লুটেরা ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলি মোদীর ভারতকে পাত্তাই দেয় না। আসলে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিপদে না ফেলে তাদের বহাল তবিয়তে বিদেশে রাজকীয় বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে মোদী-শাহ ঘনিষ্ঠরাই।

এখন সংবিধান ও গণতন্ত্রের উপর আঘাত হানতে ‘এক দেশ এক ভোট’ স্লোগান তোলা হয়েছে। হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের তাড়নায় ‘এক দেশ এক জাতি’ স্লোগানকে মাথায় রেখে সঙ্ঘ পরিবার আরও একধাপ এগিয়ে ‘এক দেশ এক নেতা’-র ভাবনায় মশগুল হয়ে উঠেছে। তাদের সেই ভাবনায় ধাক্কা দিয়েছে সাম্প্রতিক উপনির্বাচন ও কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল। মোদীর ‘গুজরাত মডেল’ এখন প্রতিপেদে ধাক্কা খাচ্ছে।