• facebook
  • twitter
Thursday, 16 January, 2025

কাশ্মীরে ‘মোদী শো’

মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে জেড মোর টানেলের শিলান্যাস করেছিলেন রাহুল গান্ধি। সোন মার্গে সেই টানেল উদ্বোধন করে মোদী এর কৃতিত্ব পুরোটাই নেবার চেষ্টা করেন।

ফাইল চিত্র

শিলান্যাস হয়েছিল ইউপিএ জমানায়। তেরো বছর পর সেই টানেলের ফিতে কেটে প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করলেন নরেন্দ্র মোদী। কাশ্মীরের অন্য অংশের সঙ্গে ধসপ্রবণ সোনমার্গের সংযোগ সহজ করতে এবং লাদাখ যাওয়ার রাস্তা যাতে ছ’মাস বন্ধ না রাখতে হয়, সে কথা মাথায় রেখে জেড-মোর টানেলের ভাবনা রূপায়ণের পথে এগিয়েছিল ইউপিএ সরকার। ইউপিএ আমলের শুরু হওয়া প্রকল্প, তার পরিকল্পনা এসব বেমালুম চেপে গেলেন মোদী। নিজের নাম জপ করতে করতে ভুলে গেলেন গত অক্টোবর মাসে এই গগনগির টানেলের কাজে লাগা শ্রমিকদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল উগ্রপন্থীরা। এক ডাক্তার সহ ছ’জন শ্রমিকের মৃত্যুর কথা চাপতে গিয়েই কি গগনগির টানেলের নাম বদলে গেল? টানেলের নাম হয়ে গেল সোনমার্গ টানেল। সেই টানেলের ফিতে কেটে মোদী বললেন, ‘এটাই মোদী এবং মোদী প্রতিশ্রুতি দিলে, তা রাখতে জানে?’ ইউপিএ জমানায় শিলান্যাস হলেও তেরো বছর পর সেই টানেলের উদ্বোধন হল মাদীর হাত ধরে। উদ্বোধনে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘দিল কি দূরি’ কিংবা ‘দিল্লি সে দূরি’ শব্দগুলির অপচয় করেননি। কেননা এর দু’দিন আগেই পডকাস্ট-অভিষেকে ‘পরমাত্মার দূত’ থেকে ‘মনুষ্যে’ নেমে এসেছিলেন মোদী।

চিল্লাই কালানের মারাত্মক ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে সোনমার্গ, গগনগির, কুল্লান, গুন্ড, কঙ্গন গ্রাম থেকে হাজারেরও বেশি গ্রামবাসী জড়ো হন সুড়ঙ্গের মুখে। উদ্বোধনের দিন তাঁরা ভেবেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখে রাজ্যের মর্যাদা ফেরানার ব্যাপারে কোনও কিছু শুনতে পাবেন। কিন্তু মোদী তার ধারেকাছে দিয়ে হাঁটেননি। কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘কাশ্মীর উপত্যকায় খুব তাড়াতাড়ি ট্রেন চালু হয়ে যাবে। জম্মু-কাশ্মীরে এখন শান্তির আবহ। পর্যটনে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। উন্নয়নের নতুন নজর তৈরি করেছে কাশ্মীর।’

উপত্যকায় প্রতিদিন রক্ত ঝরলেও বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত মোদী-শাহ নিয়মিত দাবি করতেন, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রপন্থা নির্মূল হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরের এই বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর প্রথম ভোট হয় গত সেপ্টেম্বরে এবং কাশ্মীরের মানুষজন বিজেপির দিকে না ঝুঁকে ভোট দিয়েছেন বিরোধীদেরই। এরপর রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। ফলে ভোটের পর প্রথম কাশ্মীর সপরে গিয়ে সে বিষয়ে মুখ না খোলাই শ্রেয় মনে করেছেন প্রধানমন্ত্রী। উল্টো এই সুড়ঙ্গের কৃতিত্ব তাঁর নিজের বলেই দাবি করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। তাঁর ক্যাবিনেট মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলে দিয়েছেন, ‘২০১২ সালে সুড়ঙ্গের কাজ শুরু হয়েছিল। এখন কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধন হওয়ায় আমি খুশি। শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়ক বছরে পাঁচ-ছ’মাস বন্ধ রাখতে হতো। এখন সেই অসুবিধা কমবে।’

প্রসঙ্গত, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৬৫০ ফুট উঁচুতে ২৭০০ কোটি টাকা খরচ করে ৬.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়কও বছরভর ব্যবহার করতে জোজিলা টানেলের কাজ চলছে। ছ’হাজার আটশো কোটির এই প্রকল্প ২০২৮ সালে শেষ হওয়ার কথা।

মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে জেড মোর টানেলের শিলান্যাস করেছিলেন রাহুল গান্ধি। সোন মার্গে সেই টানেল উদ্বোধন করে মোদী এর কৃতিত্ব পুরোটাই নেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজ্যবাসীর ইচ্ছার কোনও মর্যাদাই রাখলেন না। একই মঞ্চে থাকার সুযোগ পেয়ে অবশ্য কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিলেন ভোটের আগে এসে তাঁর রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর কথা। প্রচারের সব আলো নিজের দিকে টানতে পটু মোদী টানেল উদ্বোধনে এসে গোটা অনুষ্ঠানটি ‘মোদী শো’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাই ইউপিএ আমলের শুরু হওয়া প্রকল্প, তার পরিকল্পনা এসব বেমালুম চেপে গিয়েছেন। যেমন চেপে গিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ।