• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মােদি ফকির নন

না ফকির নন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামােদরদাস মােদি। যার বিষয় আশয় তথা সম্পত্তির পরিমাণ দুই কোটি পঁচাশি (২.৮৫) লক্ষ টাকা। তিনি কী ফকির হতে পারেন?

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (File Photo: IANS/BJP)

না ফকির নন। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামােদরদাস মােদি। যার বিষয় আশয় তথা সম্পত্তির পরিমাণ দুই কোটি পঁচাশি (২.৮৫) লক্ষ টাকা। তিনি কী ফকির হতে পারেন? এক বছরে মােটামুটি ৩৬ লক্ষ টাকার সম্পত্তি বেড়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে তার এই সম্পত্তির পরিমাণ প্রকাশ করা হয়। আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিত্তের পরিমাণ সরকারি তরফে জানানাে হয়েছে। তার থেকে জানা যায় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ’র সম্পত্তির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯ সালের ৩২.৬ কোটি থেকে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮.৬৩ কোটিতে।

নরেন্দ্র মােদি তিন দফায় গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং ২০১৪ সাল থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই সময়কালে তাঁর বিত্তের পরিমাম আরও বৃদ্ধি পেলে আশ্চর্যের কিছু ছিল না। তবুও এখন তাঁকে বিত্তবান প্রধানমন্ত্রী বলতে অত্যুক্তি হয় না। গুজরাতে তাঁর একটি বাড়ি রয়েছে, তার বাজার মূল্য ১.১ কোটি- রয়েছে চারটি ৪৫ গ্রামের সােনার আংটি। সােনার মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই আংটির মূল্য ধরা হয়েছে ১.৫১ লাখের ওপর। তাঁর নিজস্ব কোনও গাড়ি নেই। সরকারি উন্নত মানের গাড়িতেই তিনি চলাফেরা করেন। তাঁর পােশাক পরিচ্ছদে চটক দেখার মত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মােদির মাসিক বেতন ২ লক্ষ টাকা– তাছাড়া অন্যান্য সুযােগ সুবিধারও ছড়াছড়ি। তার অর্থ সঞ্চিত রয়েছে গুজরাতে গান্ধিনগরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর সম্পত্তির পরিমাণ গত বছরের মত এবারও রয়েছে ২.১৭ কোটি টাকাতে।

প্রধানমন্ত্রী এবার লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জাগতিক কোনও বিষয় তাঁকে টানে না। সেদিক থেকে বলতে গেলে বলা যায় তিনি একজন ফকির। যেকোনও সময় ঝােলা কাঁধে তিনি বের হয়ে যেতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মােদি দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে একাধিক বার বলেছেন, ‘আমি আপনাদের সেবক, পাহারাদার, চৌকিদার। আপনাদের জন্যই আমার সব কাজ। আপনারা যাতে সুখে জীবন যাপন করতে পারেন এবং সমৃদ্ধ ভারতের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন, তার জন্য অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করাই আমি শ্রেয় মনে করি।’

এহেন প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ পরিষ্কার প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি। তাই তিনি যে নিজেকে একজন ফকির বলে আখ্যায়িত করেন, তা মানায় না। জাগতিক বিষয়ে লােভ না থাকলে এবং বছরে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩৬ লক্ষে পৌঁছায় কী করে? তাঁর দলের অনেক সাংসদ এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিধায়ক আছেন, যা তাদের বিষয় আশয় বিপুল। তবে কেউ বিত্তশালী হতে পারেন– কিন্তু দেখতে হবে এই বিত্ত কী ভাবে সংগ্রহ হল? বেশির ভাগ সাংসদ এবং বিধানসভার সদস্যদের সম্পত্তির পরিমাণ, জনগণের ভােটে নির্বাচিত হওয়ার পর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। আর দল যদি শাসন ক্ষমতা লাভ করে, তাহলে এক শ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের আখেরে গােছানাের সুযােগ এসেই পড়ে। যারা এ ব্যাপারে তৎপর, তারা গুছিয়ে নেন। তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা অনেকেই রাতারাতি বাড়ি ঘর, অন্যান্য সম্পত্তি বাড়িয়ে নেন। এই পথ তাে সঠিক নয়, অসৎ পথ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের এ কাজ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু একেবারে বেহিসেবি হলে, তার বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযােগ উঠে। তখন মামলা মােকদ্দমা শুরু হয়ে যায়।

জনকল্যাণ কাজকে গুরুত্ব না দিয়ে যখন একজন জনপ্রতিনিধি বিত্ত সংগ্রহে বেশি সময় এবং মন দেন, তখনই তিনি জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসভঙ্গের পরিচয় দেন। পরিতাপের বিষয়, এই শ্রেণির জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যাই আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে। দেশের জনপ্রতিনিধিরা যদি তাদের স্ব স্ব নির্বাচন কেন্দ্রের মানুষের নানা সমস্যা সম্যক উপলব্ধি করে তার সমাধানকল্পে নিজেদের নিয়ােজিত করেন, তাহলে দেশের প্রভূত উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটে? নির্বাচনে জিতেই আর নির্বাচন কেন্দ্রমুখী হন না তারা। সুতরাং যাদের সমর্থনে তিনি জনপ্রতিনিধি হলেন, তাদের সুখ দুঃখের ভাগী হতে পারলেন না।

এখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করাই যায়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রাপ্য বেতন তিনি নেন না। বিধায়ক হিসেবেও তাঁর পারিশ্রমিক নেন না। সর্বদা সাদা শাড়ি পরেন, পায়ে চপ্পল। অত্যন্ত সরল, সাদা সিধে জীবন। তাহলে তাঁর চলে কী করে? তিনি বলেন তাঁর বইয়ের রয়্যালটি বাবদ এবং আঁকা ছবি বিক্রি করে যে টাকা পান, তাতেই তাঁর চলে যায়।

অটল বিহারি বাজপেয়ি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন একবার কলকাতায় সফরকালে তিনি কালীঘাটের মুখ্যমন্ত্রীর আবাসে গিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর এমন আড়ম্বরহীন জীবনযাত্রা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।

সুতরাং মােদি তাে ফকির ননই- তিনি মােটামুটি একজন বিত্তবান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর তাঁর বিষয় সম্পত্তির কথা ঘােষণা করে দেওয়ার পর দেশবাসী জানলেন মােদি অন্তত ফকির নন।