শত কবিতা বিকশিত হোক

ফাইল চিত্র

মহম্মদ শাহাবুদ্দিন

মায়াকোভস্কি কবিতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘অগণিত মানুশের জন্যই কবিতা। সেই মানুষের জন্য, যাঁরা পৃথিবীটাকে বদলাতে চায়।’ কবি চেয়েছিলেন, সমাজকে পাল্টানোর প্রয়োজনে, বিপ্লবের প্রয়োজনে গড়ে উঠুক নতুন মানুষ। সময়কে পাল্টাতে প্রথমে চাই চেতনার হাতিয়ার। কবির কাছে প্রতিবাদ তাঁর কবিতা, স্লোগান তাঁর কবিতা, যুদ্ধও তার কবিতা। কবির সাহসিকতা নতুন ভাষা হয়ে শানিত স্বপ্নের ইশারা জাগিয়ে তুলুক। বলশেভিক বিপ্লবের জন্য মায়াকোভস্কি ভবিষ্যৎবাদী আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর আধুনিক ভাবনা পুরানো ধারণাকে সরাতে চেয়েছিল কঠোরভাবে। বিপ্লব ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ। পুরানো শৃঙ্খল ভেঙে উন্মোচিত করেছিলেন নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক পথ। ১৯১৭ থেকে ২২ দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের সময় পর্বে মায়াকোভস্কি দেশের অভ্যন্তরীন নতুন দ্বন্দ্ব ও হিংসাকে দেখেছিলেন, নাটক কবিতা নিয়ে নেমে পড়েছিলেন বিপ্লবের নতুন পথ খুঁজতে। ওদা রেভাল্যৎসি ও লেভিই মার্শ-এর মতো কবিতায় মিছিল আর শ্রমজীবী মানুষের মুখ ভেসে উঠতে থাকে। ১৯১৫তে ট্রাউজার পরা মেঘ কবিতার আত্মকথনে জীবনে সংকট সংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকার যে আশা জাগিয়েছিলেন, তার আলোয় সংঘবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন দেশের মানুষকে। কবি, কবিতার মধ্যে মানুষের মধ্যে মিশে যেতে চেয়েছিলেন। কবি লিখছেন—‘গুলির আওয়াজে অরণ্য কাঁপবে বিস্ময়ে/‌শান্ত আমরা দাঁড়াব তোমার পাশে/‌তোমার কণ্ঠস্বরে চারিদিকে জমির লড়াই/‌চাই সুবিচার, রুটি আর স্বাধীনতা/‌তোমার সুরে গলা মিলিয়ে/‌আমরা তোমার পাশে/‌শত্রুকে নিখুঁত আক্রমণে/‌দিনান্তের শেষে/‌শেষ যুদ্ধের জন্য/‌আমরা তোমার পাশে।’ মায়াকোভস্কি প্রতি কবিতায় এইভাবে মানুষের সান্নিধ্য চেয়েছেন, মানুষকে সান্নিধ্য দিয়েছেন। কবিতায় সংস্কৃতিতে এনেছেন জীবনের ঘ্রান।

নিকারাগুয়ার নির্যাতিতের ইতিহাসকে উপলক্ষ্য করে ফাদার এর্নেস্তো কার্দেনাল মানুষের প্রতি বুক ভরা ভালবাসা নিয়ে রচনা করেছিলেন ‘ব্ল্যাঙ্কভার্স’। বাইবেলের সর্বমানবিক আবেদনে তিনি পেয়েছিলেন সাম্যের আলো। নাজারাথের যীশুর কথায় খুঁজে পেয়েছিলেন বিপ্লবের বার্তা। মহামানবরা স্বপ্ন দেখেছিলেন পৃথিবীর বুকে নতুন করে বিপ্লব আসবে। সবাইকে আপন করে নেওয়া, সর্বশ্রেণিকে সাম্যের আসনে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে দিয়ে কার্দেনাল খুঁজে পেয়েছিলেন। কম্যুনিজমের বীজ। এই উপলব্ধি থেকে খ্রীষ্টীয় উপাসক কার্দেনাল সাম্যবাদী হয়েছিলেন। বিবর্তনবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার কবিতায় এনেছিলেন বিজ্ঞানকে। তাঁর কাব্যিক অবলোকনে এসেছিল সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন। কবিতার ধ্যানমগ্ন উচ্চারণে ফাদার কার্দেনাল লিখেছেন—‘আর ছায়াপথ একটি ফুলের আকারে ফুটেছিল/‌এই নক্ষত্রখচিত রাতে তাকে তেমনি দেখা গেল/‌আমাদের হাড়, আমাদের পেশি এসেছে অন্য নক্ষত্র থেকে/‌সম্ভবত অন্য কোন ছায়াপথ বেয়ে,/‌আমরা তো মহাবৈশ্বিক,/‌এবং মৃত্যুর পরে আমরা অন্য নক্ষত্র গঠনে লেগে যাবো,/‌অন্য ছায়াপথ নির্মাণে। কবিতার ক্যানভাসে তিনি এঁকেছিলেন শুধু নিকারাগুয়া নয়, সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তির স্বপ্ন। তাঁর কবিতায় সম্মিলিত ভাবে এসে মিশেছিল শোষিত মানুষের জীবন, শ্রমজীবী মানুষের কান্নার আওয়াজ।


এই সম্মিলিত জীবন, এই শ্রমের শব্দ অনুরণ কি সৃষ্টি করেছে কবিতাকে। জর্জ টমসন মানুষের অগ্রগমনের ইতিহাসের প্রথম লগ্নে সমবেত জীবন ও শ্রমের মধ্যে কবিতাকে খুঁজেছেন। তাঁর ‘মার্কসইজম এ্যান্ড পোয়েট্রি’তে তিনি বলছেন, ‘আদিমকালে মানুষ নিঃসঙ্গ থাকতো না। কাজের তালে তালে অনেকে কবিতা গেয়ে শোনাতত। শ্রোতারাও যোগ দিত তার সঙ্গে। এই শব্দ ছন্দ, শ্রমের মধ্যে উদ্দীপনা এনে দিত। কষ্টের মধ্যে আনতো প্রশান্তি। কবিতায় ছিল জীবনের গতি। কবিতা তখন ছিল টমসনের সমবেতভাবে উপভোগের বিষয়।’ জর্জ টমসনের এই কথায় বোঝা যায় ‘সৃষ্টির যুগে গান ছিল শরীরের ঘাম নিরসনের উপায়। ছিল অবিরাম শ্রমের মধ্যে শান্তি। এই শ্রমকে যখন শোষণ করায়ত্ত করল, তখন কবিতা, গান হয়ে উঠল, হয়ে উঠল প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর।’ ওয়াল্ট হুইটম্যান লিখেছিলেন—‘একবার যদি নত কর শির/‌তুমি দাস হয়ে যাবে/‌একবার দাস হয়ে গেলে/‌এই পৃথিবীতে ঠিকানা হারাবে স্বাধীনতা।’

আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ এই স্বাধীনতার ঠিকানা খুঁজে নিয়েছিল। দাসত্বের যন্ত্রণা সয়ে যাঁরা হয়ে উঠেছিল সভ্যতার পিলসুজ। তাঁদের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে আফ্রিকার প্রতিবাদী কবিতায়। নেলসন ম্যান্ডেলা বলতেন, ‘আমাদের মহাদেশের কবিতা উদ্যত খড়গের মতো। এ কবিতা ভেঙেছে আমাদের বন্দীশালার কারাগার।’ আফ্রিকার ইতিহাস যেমন শোষিত মানুষের ইতিহাস, তেমনি তা সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। কালো মানুষেরা পণ্য হতে হতে, ঔপনিবেশিক অত্যাচারের আঘাত সয়ে পথ খুঁজেছে আত্মানুসন্ধানের। অস্তিত্বের শিকড় তাদের চিনিয়েছিল জন্মভূমিকে শানিত স্বপ্নের মতো জেগে উঠেছিল এই মহাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম। সেই স্বপ্নকে নিয়ে বিদ্রোহী চেতনায় জন্ম নিয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কবিতা।

আফ্রিকার বিপ্লবী কবি প্যাট্রিস লুমুম্বার কবিতায় আফ্রিকার নিপীড়িত মানবসত্তা কথা বলে উঠেছিল। মহাদেশের নীল আকাশকে প্রতিবাদের কণ্ঠ দিয়েছিল তাঁর চারণকথা। কঙ্গোর মুক্তি সংগ্রামের মাঝে দাঁড়িয়ে কবিতা লিখেছিলেন বিপ্লবী লুমুম্বা। উপনিবেশবাদী শক্তির হাতে শহিদ হয়েছিলেন তিনি। লুমুম্বা তাঁর ‘কালো ভাই আমার’ কবিতায় লিখছেন—‘এ যুগের ভারবাহী পশু আমার কালো ভাইয়েরা/‌তোমার দগ্ধ দেহের ছাই/‌এখনও ওড়ে স্বর্গের বাতাসে/‌হত্যা ধর্ষণের এই বর্বর শতাব্দীতে তোমার কাছে দুটো পথ/‌মৃত্যু কিংবা দাসত্ব। মোজাম্বিকের মুক্তি সংগ্রামের সৈনিক কবি জোশে কারভেরিণহা শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন অন্ধকার জেলখানায় বসে। কারভেরিনহার-এর ‘কালো বিক্ষোভ’ কবিতায় খনি শ্রমিকের বেদনার চিৎকার শোনা গেছে তীব্র যন্ত্রণায়—‘আমি কয়লা/‌আমার ধর্মই উত্তাপে বদলে যাওয়া/‌আর তোমার শোষণের দুনিয়াটাকে/‌জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়া/‌অঙ্গারে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত জ্বলব আমি/‌তপ্ত কয়লা হয়ে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার বেঞ্জামিন মোলায়েস জীবনের মুক্তি যন্ত্রণাকে তাঁর কাব্যে জুড়েছিলেন। আফ্রিকার কৃষ্ণ মৃত্তিকায় তিনি পেয়েছিলেন তপ্ত স্পর্শ। সে স্পর্শ ছিল বিদ্রোহের, ভালোবাসার। বর্ণভেদ বিরোধী আন্দোলনের কবি মোলায়েস জীবনের অন্ধকারকে ছিন্নভিন্ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন—‘এই দুঃসময়ে অরণ্যের অন্ধকার/‌হারিয়ে গেছে রোদ্দুর,/‌দেখা যায় না কোনও উজ্জ্বল মুখ/‌কুঠারের আঘাতে অন্ধকার ছিন্ন করে/‌ভয়ঙ্কর সমেয়কে রুখব আমি, তুমি আর জঠরের ভ্রূণ।’

নেরুদা বলেছিলেন-‘আমি শুধু আমার জীবনের মধ্যে বেঁচে তাকতে চাইনি। সবার জীবনকে জড়ো করেই আমার জীবন।’ সমগ্র মহাদেশবাসীকে পাবলো নেরুদা বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। সেখানে মিশেছে ভালবাসার গহনতা। সমালোচক জিওফ্রে বারকালাউ বলেছেন, ‘পাবলো নেরুদা এমন এক একক কবিসত্ত্বা, যার মধ্যে সমগ্র লাতিন আমেরিকার রেণেসাঁস আভাসিত হয়েছে। ১৯৭৩ এ সানতিয়াগোর হাসপাতালে নেরুদার জীবনাবসানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিলির ফ্যাসিস্ট সেনা তাঁর কবিতার পাণ্ডুলিপি, অমূল্য নথিপত্র নিশ্চিহ্ন করে দেয়। নেরুদার বেশির ভাগ সৃষ্টিকাজ নিষেধাজ্ঞার নিগড়ে বাঁধা ছিল। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রশক্তির শৃঙ্খল ছিঁড়ে তাঁর কবিতায় স্ফূরিত হয়েছিল আশাবাদের আলো—‘আমি যদি মৃত কেউ/‌তবুও আমায় কে বলে দেবে/‌কি করে এক কচি পাতা/‌জীবনের সুবাস এনে নিয়ে আসে ফরাসি বসন্ত ঋতু? ‘শোষণের বিরুদ্ধে বিজয়ের লক্ষ্যে জাগরিত হয়েছে নেরুদার কবিতার কণ্ঠস্বর—‘যেতে হবে প্রতিটি নিমিখ/‌উড্ডীন ঈগল, বাতাসী মুহূর্তের মতো/‌শনির ধূসর বলয়কে জয় করে নিতে/‌বাজিয়ে তুলবে বলে রূপালী ঘণ্টা ধ্বনি।’

তুরস্কের বিপ্লবী কবি নাজিম হিকমতের ১৭ বছর কেটেছে স্বৈরশাসনের কারাগারে। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছিল সুন্দর এক পৃথিবীর স্বপ্ন। স্বপ্ন দেকা মানুষের গল্প খুঁজেছেন কবি। জাঁ পল সাত্রে লিখেছিলেন, ‘নাজিম হিকমত এমনই একজন কবি, যার কাব্য আর জীবনের মধ্যে কোনও ভেদরেখা নেই।’ ‘জেলখানার চিঠি’ কাব্যগ্রন্থ যেন স্বৈরাচারের বিরুদ্বে জনসমুদ্রের ঢেউয়ের নিশ্বাস। খোলা আকাশের নীচে, রাজপথে, মিছিলে ধ্বনিত হত তাঁর ‘জেলখানার চিঠি’ কবিতা। কবিতার মধ্যে দিয়ে কবি জেগেছিলেন কলমে আর সংগ্রামে। জেলখানার চিঠিতে কবি লিখছেন—‘মৃত্যু…/‌দড়ির এক প্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ/‌আমার কাম্য নয় সেই মৃত্যু।/‌কিন্তু প্রিয়তমা আমার, তুমি জেনো/‌জল্লাদের লোমশ হাত/‌যদি আমার গলায় ফাঁসীর দড়ি পরায়/‌নাজিমের নীল চোখে/‌ওরা বৃথাই খুঁজে ফিরবে ভয়।’ তিনি আবার লিখছেন ‘রাত্রির অন্ধকারে,/‌গ্রাম দেশে শুকনো পাতায়/‌আমি জ্বালিয়ে ছিলাম আগুন/‌আমি স্পর্শ করেছি সেই আগুন/‌নক্ষত্রের নীচে জ্বেলে রাখা অগ্নিকুণ্ডের মতো।’ রাষ্ট্রীয় অপশাসন ও শোষণ কবির জীবনকে বার বার অস্থির করেছে। তবুও গেয়েছেন জীবনের জয়গান/‌নাজিমহিকমত তাই ‘বিংশ শতব্দী’ কবিতায় লিখছেন—‘একশো বছর পরে, প্রিয় আমার…/‌না, বেশি দেরি নেই/‌সব কিছু সত্বেও/‌আমার শতাব্দী প্রতি মুহূর্তে মরে গিয়ে/‌ আবার নতুন জন্ম নিচ্ছে/‌সূর্যালোকে ঠিকরে পড়বে আমার শতাব্দী।’

প্রতিবাদী কবিতার ইতিহাস খুঁজেতে খুঁজতে আমরা পৌঁছে যাই এদুয়ার্তো গালোয়ানো, মেহমুদ দারভিস, খলিল জিবরান, ল্যাংস্টেন হিউজের কাছে। পৌঁছে যাই রবীন্দ্রনাথ নজরুলের কাছে। রবীন্দ্রনাথ নবজাতক কাব্যে শুনিয়েছেন আগামী পৃথিবীর আশ্বাসবাণী—‘আগামী প্রাতের শুকতারা সম/‌নেপথ্যে আছে বুঝি।/‌মানবের শিশু বারে বারে আনে/‌চির আশ্বাসবাণী/‌নূতন প্রভাতে মুক্তির আলো/‌বুঝি বা দিতেছে আনি।’
কারার লৌহ কপাট ভেঙে, বিদ্রোহের অগ্নিবীণা বাজিয়ে কবি নজরুল বাংলা কাব্যে এসেছিলেন ধূমকেতুর মতো। যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন দাসত্বের বিরুদ্ধে, জাতপাতের বিরুদ্ধে, কবির কাছে সারা দেশটাই ছিল কারাগার। পরাধীনতার বিরুদ্ধে বিপ্লবী কণ্ঠ সোচ্চার করেছিলেন নজরুল। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় লিখলেন— ‘আজকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ। লিখেছেন—‘‘আমি দুর্বার/‌আমি ভেঙে করি সব চুরমার।/‌আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল/‌আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল।’

সময় বদলে যায়। ইতিহাসের এক একটা বাঁকে বদল আসে। যুদ্ধ ক্লান্ত ইতিহাসের শেষতম সৈনিকের মতো কলম হাতে নেয় কবি। কালের চিহ্ন লেগে যায় কবিতার গায়ে। শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতায় আমরা পেয়েছি আসাদের জননীকে। মনে পড়ে যায় ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’কে। প্রতিদিন শহিদ পুত্রের রক্তকরবী রঙা শার্ট মেলে রাখেন আসাদের মা। শার্ট ওড়ে হাওয়ায়, নিলীমায়। মানুষের মনে জেগে ওঠে অগণিত আসাদের শার্ট। শার্ট উদ্ধত প্রতিবাদ জানায় প্রাণের পতাকা হয়ে—আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা, কলুষ আর লজ্জা/‌সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;/‌আসাদের শার্ট আমাদের প্রাণের পতাকা।’ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে উত্তরণ আছে। পুরাতনের ভাঙাচোরা আছে। বিপ্লব এক জন্ম রোমান্টিকতা। পরতে পরতে তার স্বপ্ন। এই সময় অন্তর সত্তার মধ্যে অমোঘভাবে পরিচয় ঘটে যায় বিদ্রোহী চেতনার। চেতনার নতুন প্লাবনে মাথা তোলে মহত্তর সৃষ্টির আবাদভূমি। কাব্যগান নিবন্ধ লেখনির শাণিত ভাষা জেগে ওঠে এই ভূমিতে। এখানেই বিকশিত হয় সময় আর সংগ্রামের শত কবিতা। রাত্রির তপস্যার শেষে জেগে ওঠে নতুন বিশ্বাস। বিশ্বকবির তাই আত্মজিজ্ঞাসা: ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা/‌এর যত মূল্য সে কি ধারার ধূলায় হবে হারা।/‌স্বর্গ কি হবে না কেনা।/‌বিশ্বের ভাণ্ডারী শুধিবে না/‌এত ঋণ?/‌রাত্রির তপস্যা সে কি আনিবে না দিন।’