• facebook
  • twitter
Thursday, 21 November, 2024

জ্বলছে মণিপুর

আসলে মণিপুরে আগুন জ্বালিয়েছে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। এখন সেই আগুন এত বিস্তৃত ও ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে মোদীর ক্ষমতা নেই তাকে সামাল দেবার। মণিপুরে মোদী চূড়ান্ত ব্যর্থ।

মণিপুরে সংঘর্ষ রোধে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফাইল চিত্র

এখন বিদেশ সফরে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, দশ বছরের মোদী সফর করেছেন ৭১টি দেশে। বিদেশ সফর করেছেন মোট ৮৩ বার। ৪০টি দেশে গিয়েছেন একবার করে। দু’বার করে গিয়েছেন ১৬টি দেশে। তিনবার করে সফর করেছেন ৬টি দেশ। চিন, নেপাল ও সিঙ্গাপুরে তিনি গিয়েছেন ৫ বার করে। মোদী জার্মানি সফর করেছেন মোট ছ’বার। তাঁর সফরে দ্বিতীয় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে ৪টি দেশ। এগুলি হল— ফ্রান্স, জাপান, রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। এই দেশগুলি তিনি সফর করেছেন মোট সাতবার করে। মোদীর সফর তালিকায় সবার উপরে রয়েছে তাঁর ‘বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশ আমেরিকা। মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মার্কিন মুলুকে গিয়েছেন এখনও পর্যন্ত মোট ৯ বার। তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে তাঁর বিদেশ সফরের সংখ্যা ১২।

এদিকে গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন রাজ্য সফর করেছেন প্রায় ২০০ বার। বাদ শুধু মণিপুর। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে সেখানে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত, সংঘর্ষ চলছে লাগাতার। সংবাদ সংস্থার হিসেব, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এজন্য ঘরছাড়া, এলাকাছাড়া হয়ে গিয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০০। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিকে বাঁচাতে সেখানকার শান্তিকামী জনগণ শুরু থেকেই চেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। তাঁদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী নিজে গিয়ে দেখে আসুন এন বীরেন সিংয়ের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার ছোট্ট সুন্দর মণিপুর রাজ্যটির হাল কী করেছে। কিন্তু এত সব কিছু সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কর্ণকুহরে এই আবেদন পৌঁছায়নি। মণিপুরের মাটিতে পা রাখেননি তিনি। মোদীর নামে ‘নিখোঁজ’ পোস্টার পড়েছিল গত বছরের মে মাসে। এরপরও কেটে গিয়েছে দেড় বছর। মোদী সরকার ও বিজেপির কাছে মণিপুর গুরুত্বহীনই হয়ে রইল।

বহু বছর ধরে আরএসএস-এর নীরব সক্রিয়তায় মণিপুরে বিভাজনের উর্বর জমি তৈরি চলছে। সেই জমিতে বিভাজনের রাজনৈতিক বীজ পুঁতেছে বিজেপি। তারই ফসল বিজেপি সরকার। মণিপুরের বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান ও জনবিন্যাসকে আরএসএস-বিজেপি দক্ষতার সঙ্গে ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করেছে। রাজধানী ইম্ফলকে ঘিরে সমতল ভূখণ্ডে প্রধানত সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের বাস। সমতল ঘিরে চারদিকে পাহাড়ী অঞ্চলে বাস সংখ্যালঘু কুকি-জো-নাগা উপজাতিদের। মেইতেইরা হিন্দু, আার কুকিরা খ্রিস্টান। আরএসএস-বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে মেইতেই-কুকিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখল করে মণিপুরে। এই ঘৃণ্য রাজনীতির মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসে বিজেপি সর্বনাশ ডেকে এনেছে মেইতেই-কুকিদের সম্পর্কের মধ্যে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দুই জাতি গোষ্ঠী পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে চলে গিয়ে একে অপরের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। গত ১৯ মাস ধরে হিংসায় জ্বলছে গোটা রাজ্য। সমতল থেকে উৎখাত হয়ে কুকি জনজাতি পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। আর পাহাড় থেকে সব মেইতেই পালিয়ে সমতলে আশ্রয় নিয়েছে। এমনকি শাসক দলের কুকি বিধায়ক-মন্ত্রীরাও রাজধানী ও সমতল ছেড়ে চলে গেছেন। এমন ভয়াবহ বিভাজন দেশের আর কোথাও কোনওদিন দেখা যায়নি। মণিপুরে একেবারে পরিকল্পনা করে মোদী-শাহরা সেটা করেছেন। রাজ্যটাকে নিয়ে নিয়েছেন ধ্বংসের পথে।

এমন সর্বনাশ ঘটলেও প্রধানমন্ত্রী নীরব। তিনি পুরোপুরি মৌনীবাবা সেজে আছেন। মণিপুর নিয়ে তাঁর মুখে কোনও কথা নেই। রাজ্যটি ধ্বংস হয়ে গেলেও তাঁর কোনও দায় নেই। আসলে মণিপুরে আগুন জ্বালিয়েছে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার। এখন সেই আগুন এত বিস্তৃত ও ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যে মোদীর ক্ষমতা নেই তাকে সামাল দেবার। মণিপুরে মোদী চূড়ান্ত ব্যর্থ। বিজেপি সরকার অপদার্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে গত ১৯ মাস ধরে। কুৎসিত ক্ষমতা লোভের তাড়নায় বেপরোয়া হয়ে উঠলে তার পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, মণিপুরই তার জ্বলন্ত উদাহরণ।