• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

ইস্তাহারে ধুলো জমে

যে দল ক্ষমতালাভ করে,সে দল ইস্তাহারপত্রের পাতাগুলি খুলেও দেখে না

ইস্তাহার হাতে বিজেপি নেতারা (ছবি IANS)

কর্মসংস্থান, মানুষের সার্বিক কল্যাণকে পিছনের সিটে ঠেলে দিয়ে জাতীয়তাবাদ ও দেশের নিরাপত্তাকে মূলধন করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের নির্বাচনী ইস্তাহার তথা ‘সঙ্কল্পপত্র’ প্রকাশ করল। এতদ্বারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বহুচর্চিত, বহু কথিত ‘আচ্ছে দিনের’ কথা সংকল্পপত্রে উহ্যই রইল।২০১৪ সালের ইস্তাহারে এই দল কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েও এই পাঁচ বছরের শাসনকালে সে কাজে ব্যর্থ হওয়ায় এবার আর কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখালো না।

ভোটের তিনদিন আগে সংকল্পপত্র প্রকাশ করে এই দল প্রমাণ করতে চাইল দেশভক্তি ও দেশের নিরাপত্তাই আসল, আর এই দুইয়ের উপর ভর করে ওই ভোট বৈতরণী পার হওয়া যাবে।বেকারত্ব ও কৃষি সংকটের মোকাবিলা করার মত তেমন কোন কথাই নেই এই পত্রে।সুতরাং বিরোধীদের প্রশ্ন, তাহলে কি বিজেপি এই দুটি সমস্যাকে একেবারেই আমল দিচ্ছে না?

কংগ্রেস তো তার ইস্তাহারে ন্যায় প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে বলেছে,দল ক্ষমতায় এলে দেশের সবচাইতে  অভাবী ২০ শতাংশ পরিবারকে বছরে ৭২ হাজার করে টাকা দেবে।দল ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না সে পরের কথা,কিন্তু একটি ভাল কাজের কথা তো দল ঘোষণা করল।সেক্ষেত্রে বিজেপি তার ঘোষণায় দেশপ্রেমের জিগির তোলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখল।পেটে খিদে থাকলে, ঘরে অভাব থাকলে,দেশপ্রেম জাগবে কী করে?তার জন্য দুবেলা খাবার দরকার,অসুখে চিকিৎসা দরকার।জীবনের নিরাপত্তা দরকার।

এবার ভোটে বিজেপির সাথী দল শিবসেনা।শিবসেনা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই শর্ত রেখেছিল রামমন্দির নির্মাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।সুতরাং রামমন্দির নির্মাণ ইস্যুটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে,এই আশ্বাস ইস্তেহারে দেওয়া আছে।২০১৪ নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার সরকার বছরে ২কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।তা হয়নি।বেকারদের মুখেও হাসি ফোটেনি।বরং এই সমস্যা পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি হয়তো এবার ভাবলো,যে সমস্যা সমাধান করা যাবে না, তা আগ বাড়িয়ে বলে লাভ কি?

ইস্তাহারে অবশ্য বলা হয়েছে,২০২২ সালের মধ্যে অভাব দারিদ্র্য বলে দেশে কিছু থাকবে না। মানুষের আয় ভাল বাড়বে। স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন হবে।অত্যন্ত ভালো কথা,বড় তৃপ্তির কথা।তবে যদি ভোটের বৈতরণী পার হতে পারে এই দল তবেই তো এইসব।প্রধানমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন,২০৪৭ সাল নাগাদ ভারত উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশে পরিণত হবে।সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই ২০২২ সাল নাগাদ অর্থাৎ স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষে পরিকল্পনা কার্যকরী হবে।সেই আশ্বাস মিলেছে সংকল্পপত্রে।

বিজেপি অবশ্য দাবি করেছে,সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের ইচ্ছার কথা মাথায় রেখেই এই সংকল্পপত্র তৈরি হয়েছে।কৃষকদের জীবন-মান উন্নয়নের জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।তাদের বার্ষিক সাহায্যের সঙ্গে পেনশন প্রকল্পের কথাও বলা হয়েছে।আর কংগ্রেস ইস্তাহারকে আবার মানুষকে ‘ধাপ্পা দেওয়ার’ বলে অভিহিত করেছে।সরাসরি আক্রমণ করে এই দল ঘোষণা করেছে মোদি সরকারের ১২৫টি ব্যর্থতা নিয়ে তারা সরব হবে এবং মানুষের অবহিতের জন্য চেষ্টা করে যাবে।

নির্বাচন এলে সব দলই তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের একটি বিস্তৃত হিসাব দাখিল করে।ক্ষমতাসীন না হতে পারলে সেই দলের ইস্তাহারে ধুলো জমে।আর যে দল ক্ষমতালাভ করে,সে দল ইস্তাহারপত্রের পাতাগুলি খুলেও দেখে না।যেমন বিজেপি,২০০৪ সালের ইস্তাহার যদি এখন খুলে দেখে, তাহলে দেখতে পাবে, যা বলা হয়েছিল তার সিংহভাগই করা হয়নি।সেই কারণেই ইস্তাহার বের করা একটি গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়েছে।