• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

কাঠগড়ায় বিএসএফ

রাজ্যে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে নিয়মিত গোপন তথ্য আসছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

ফাইল ছবি

অভিযোগ গুরুতর। রাজ্যে একের পর এক সন্দেহজনক ব্যক্তি এবং জঙ্গি ধরা পড়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যাঁর হাতে স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার, সরাসরি তার জন্য বিএসএফকে দায়ী করলেন। সম্প্রতি নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে তিনি অনুপ্রবেশ গুরুতর সমস্যা বলে আখ্যা দিয়ে এই কেন্দ্রীয় ফোর্সকে এ ব্যাপারে কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ইসলামপুর, চোপড়া, সিনেই সহ সীমান্তের নানা অঞ্চল দিয়ে লোক ঢোকাচ্ছে বিএসএফ। আরও গুরুতর অভিযোগ কেন্দ্রের এই সীমান্ত রক্ষা বাহিনী মহিলাদের ওপরও অত্যাচার চালাচ্ছে। সীমান্ত রক্ষা পুলিশ বা শাসক দল করে না— করে বিএসএফ। সেই বিএসএফ যদি এই অপকর্ম করতে থাকে, তাহলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ওপর তার প্রভাব পড়ে।

জঙ্গিরা বিএসএফের সহায়তায় সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলায় ঢোকে খুনখারাপি করে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাবনার বিষয়। সীমান্ত রক্ষা করা, অনুপ্রবেশ ঢোকা বন্ধ করা বিএসএফের কাজ আর সেই বিএসএফ যদি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে অন্যায়ের পথ নেয়, তাহলে রাজ্য প্রশাসনের করার কিছু থাকে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিএসএফের এটা এটা একটি ভিতরের কাজ—এর মধ্যে কেন্দ্রের একটি নীল নকশা আাছে। এইভাবে রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টার জন্য এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই হবে। তিনি বলেন, কেন্দ্রকে বিষয়টি নিয়ে একটা কড়া চিঠি লিখবেন। বিএসএফ সূত্রে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিরোধীরাও মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিএসএফের এক কর্তা বলেছেন, এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই তাই মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

শুধু বিএসএফকে নয়, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশকারীরা যখন ঢুকে যাচ্ছে, তারপর তারা কোথায় যাচ্ছে, কী কাজ করছে সেই তথ্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে থাকে। তিনি মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চান এই তথ্য তিনি পেয়েছেন কিনা. মুখ্যসচিব পাননি বললে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তার মানে ডিএম, এমপিরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করছে না। মমতার মতো কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ। তিনি বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে জঙ্গিরা ঢুকে খুন করে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি মালদহের একজন তৃণমূল নেতার খুন হওয়ার পিছনে শাসক দলের মধ্যে যে রেষারেষি চলছে, তারই পরিণাম বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটা ধামাচাপা দিতেই বিএসএফের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

বিএসএফের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও বিএসএফ তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। সন্দেহভাজন লোক বিএসএফকে ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত জেলাগুলিতে ঢুকে যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে জঙ্গিরাও ঢুকছে— সে খবর সীমান্ত নিরাপত্তাকর্মীরা রাখে না। বাংলাদেশে সম্প্রতি যে অশান্তি চলছে, সংখ্যালঘুদের ওপর পীড়ন চলছে— সুতরাং হিন্দুরা সেখানে বসবাস নিরাপদ নয় বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলিতে ঢুকে যাচ্ছে। এদের আটকানো বিএসএফের দায়দায়িত্বের মধ্যে পরে। কিন্তু বিএসএফ তার সেই দায়িত্ব পালন করছে না। এই অভিযোগ তোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সংখ্যালঘু নির্যাতন অবলীলায় চলছে বাংলাদেশ— তা নিয়েও কেন্দ্র কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিরোধীরা বলেন, বাংলায় আইনশৃঙ্খলা নেই— পুলিশ প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ। তাই শুধু বিএসএফকে দোষী করে লাভ নেই। তবে সীমান্তের বেশ অনেকটা অঞ্চলে কাঁটা তারের বেড়া নেই। সেই অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যাচ্ছে উভয় দেশের দালালদের সাহায্যে। কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ, রাজ্য সরকারকে বারবার বলা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জমি দেয়নি, ফলে বেড়া দেওয়ার কাজও আটকে আছে। রাজ্য সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে মালদহের ঘটনায় মর্মাহত মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও পুরপ্রতিনিধি দুলাল সরকারের (বাবলা) খুনের ঘটনায় পুলিশকে কাঠগড়ায় তুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে একাধিক ঘটনায় পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের ভূমিকার তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমার সহযোদ্ধা বাবলা সরকার খুন হয়েছেন। অবশ্যই এক্ষেত্রে পুলিশের গাফিলতি আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ওঁর আগে নিরাপত্তা ছিল, সেটা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ‘মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন আমার পুরনো সহকর্মী খুন হয়ে গেলেন— এসপির অপদার্থতার জন্য।

রাজ্যে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে নিয়মিত গোপন তথ্য আসছে বলে মুখ্যমন্ত্রী আগেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। গোয়েন্দা পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার জন্য তিনি ডিজি রাজীব কুমারকে নির্দেশ দেন। পুলিশের মধ্যে যে লবি আছে, সে কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এখন রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা অনুপ্রবেশ। বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত জেলাগুলিতে ঢুকতে চাইছে। অনেকে ইতিমধ্যেই সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে রাজ্য সরকারের বা করণীয় কী? এক্ষেত্রে একমাত্র বিএসএফই তাদের আটকাতে পারে।