• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

চুক্তি করে লোকসান

কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসাবে গিফট সিটির মাধ্যমে আমদানি করা যায়। ভারত-সৌদি আরব চুক্তির পথে সোনা আমদানি করে সোনা আমদানির যে চালু নিয়ম আছে তা কার্যত বিকল করা হয়েছে।

সোনা ও রূপা। ফাইল চিত্র

অর্থনৈতিক চুক্তির পথ ধরে চলেছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিপুল সোনা আমদানি। নরেন্দ্র মোদীর ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চুক্তিতে সোনা-রুপো আমদানি কারবারে দেদার অনিয়ম ও গলদ উঠে এসেছে। একজন নন-বায়োলজিক্যাল প্রধানমন্ত্রী হয়ে কার স্বার্থে তিনি এই গলদে ভরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, তা নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়ে উঠেছেন। শুল্ক ফাঁকিতে গত এক বছরে কেন্দ্রের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বেনিয়মে রুপো আমদানি বেড়ে চলেছে। জানা গিয়েছে, এক বছরে সৌদি আরব থেকে রুপোর আমদানি বেড়েছে ৬৪৭ গুণ। এতে লাভ তুলেছে মোদীর নিজের রাজ্য গুজেরাতের সোনা-রুপোর বেসরকারি কারবারী গিফট সিটি। কেন গিফট সিটিকে এই বেনিয়মে টাকা কামানোর সুযোগ দেওয়া হলো? গ্লোবাল বাণিজ্য বিষয়ক গবেষক সংস্থার রিপোর্ট উল্লেখ করে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, ভারত-সৌদি বাণিজ্যিক চুক্তি মোদীর গুজরাতের গিফট সিটিকে ফয়সা দিলেও তাতে দেশের আয়ের কোনও লাভ হয়নি। উলটে সোনা, রুপো, প্ল্যাটিনাম কারবারের বড় ক্ষতি করে দেবে।

ভারত-সৌদি আরব বাণিজ্যিক চুক্তি হয় ২০২২ সালের মে মাসে। সেই চুক্তির পর এক বছরে সৌদি আরব থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার প্ল্যাটিনাম খাদ আমদানি করে ভারত। আমদানি সংস্থার তরফ তেকে যদিও প্লাটিনাম খাদ বলা হচ্ছে, কিন্তু কর বিভাগ সূত্রে জানান হয়েছে তা প্ল্যাটিনাম নয়। আসলে এর ৯০ শতাংশ ছিল সোনা। চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত প্ল্যাটিনামে আমদানি শুল্ক হার ছিল ৮.১৫ শতাংশ। সেখানে সোনার শুল্ক হার ছিল ১৮.৭৫ শতাংশ। সোনার শুল্ক ফাঁকি দিতেই প্ল্যাটিনাম আমদানি দেখিয়ে সেই হারের শুল্ক জমা দিয়ে আসলে সোনা আমদানি করা হয়েছে। এতে ভারতের এক বছরে সোনার শুল্ক বাবদ লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশে কর আদায়ের এই দুর্বল পরিকাঠামো সত্যিই সমালোচনার যোগ্য। আমদানি, সোনা না কি প্ল্যাটিনাম সেটাই ধরা গেল না। এতটাই দুর্বল কর আদায় পরিকাঠামো যা কার্যত একটা তামাশার পর্যায়ে চলে গেছে।

উল্লেখ্য, সৌদি আরব আফ্রিকা থেকে সোনা আমদানি করে তাতে মূল্যযুক্ত কর বসিয়ে রপ্তানি করে থাকে। জানা যায়, ভারতে অনেক কালো টাকার কারবারি তাদের কালো টাকা সোনা আমদানির মাধ্যমে সাদা করে থাকে। এই চুক্তি কালো টাকা সাদা করার পদ্ধতি সহজ করে দিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

এদিকে প্ল্যাটিনামের কম হারে শুল্ক দিয়ে সোনা আমদানি চালায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন চলতি বছরের জুলাই মাসে সোনার শুল্ক হার কমিয়ে দিয়েছেন। বেসরকারি কারবারিদের সোনা আমদানি নিষিদ্ধ। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হিসাবে গিফট সিটির মাধ্যমে আমদানি করা যায়। ভারত-সৌদি আরব চুক্তির পথে সোনা আমদানি করে সোনা আমদানির যে চালু নিয়ম আছে তা কার্যত বিকল করা হয়েছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তির ফলে সোনার মতো রুপো আমদানি নিয়েও নানা বেনিয়েমর তথ্য সামনে চলে এসেছে। জানা গিয়েছে, প্রায় রাতারাতি সৌদি আরব ভারতে রুপো আমদানির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেশে এখন যে পরিমাণ রুপোর আমদানি হয় তার ৪৫ শতাংশ আমদানি হচ্ছে সৌদি থেকে। যেমন ২০২২-২৩ সালে দেশে সৌদি আরব থেকে ২২ লক্ষ ডলারের রুপো আমদানি করা হয়। দু’দেশের চুক্তির পর ২০২৩-২৪ সালে ওই দেশ থেকে রুপোর আমদানি এক লাফে বেড়ে হয় ১৪৪ কোটি ডলার। এক বছরে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৪৭ গুণ। দেশের রুপোর আমদানি নিয়ন্ত্রণে যে বিধি-নিষেধ ছিল তা ভারত-সৌদি আরব চুক্তির নানা গলদের কারণে এখন শিথিল হয়ে গিয়েছে। ফলে বিপুল আমদানি বাড়লেও এতে দেশের শুল্ক বাবদ আয় বাড়েনি।

গুজরাটের গিফট সিটি এখন সোনা-রুপোর আমদানিতে একচেটিয়া কারবারি হয়ে উঠেছে। কারণ সরাসরি সোনা-রুপো আমদানির ক্ষেত্রে যেসব, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় গিফট সিটিতে সেই সমস্যা থাকে না। কেন গিফট সিটেকে এই সুযোগ দেওয়া হলো, তাতে কার স্বার্থ দেখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এই চুক্তি সম্পাদনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। চুক্তির পর ৮৮ দিন তা গোপন রাখা ছিল। যত দিন যাচ্ছে এই চুক্তির নানা বেনিয়ম ও গলদ সামনে চলে আসছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কার স্বার্থপূরণে মোদী তড়িঘড়ি এই চুক্তি করলেন?