যে আসনটির ভােটকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বাংলা, সেই পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম আসনের ভােট আজ (বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল)। এই কেন্দ্রে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে একজন তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অপরজন তৃণমূল ত্যাগী, একদা তাঁর আস্থাভাজন, সহকর্মী, নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী, যিনি বিজেপির প্রার্থী হয়ে লড়বেন।
স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় দফার ভােটের কেন্দ্রবিন্দু এই নন্দীগ্রাম, যাকে নিয়ে মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা এখন তুঙ্গে। লড়াই মর্যাদার, লড়াই মুখ্যমন্ত্রীর মান রক্ষার। আবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই তার চ্যালেঞ্জ রক্ষার — তা হল মমতাকে পঞ্চাশ হাজার ভােটে পরাজিত করতে পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মাের্চার সিপিএম প্রার্থী মিনাক্ষী মুখােপাধ্যায় রয়েছেন। তিনিও শেষ বেলায় প্রচারে ঝড় মমতা তার ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে নিজের ইচ্ছেতেই নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানাের কথা ঘােষণা করেছিলেন।
ভােটের প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগের দিন নন্দীগ্রামের ভােটযুদ্ধে অংশগহণকারী দু’দলই তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি শেষ প্রচার তুঙ্গে তুলে দিয়েছে। রােড শাে, পথসভা, মিছিলে মিছিলে নন্দীগ্রাম মুখরিত হয়ে ওঠে। পায়ের ব্যান্ডেজ থাকা সত্ত্বেও, ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়ান– সমর্থকদের উল্লাসের মধ্যে।
এই নন্দীগ্রামের সভা করতে অবশ্যই তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন। অপরদিকে শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে রােড শােতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ। নন্দীগ্রামের ভােট যাতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় এবং ভােটাররা যাতে অবাধে তাদের ভােটাধিকার প্রয়ােগ করতে পারেন, তার জন্য নির্বাচন কমিশন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
নিরাপত্তায় নিয়ােজিত কেন্দ্রীয় ফোর্সও বেশি সংখ্যায় এখানে মােতায়েন করা হয়েছে- পর্যবেক্ষকদের নজরদারি তাে থাকবেই, তার সঙ্গে মাইক্রো অবজারভারদের রাজ্য পুলিশের বড় কর্তারা শান্তিপূর্ণ ভােট করতে এখানে কর্তব্যরত থাকলে।
সেদিন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী এই নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনােনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সেইদিন থেকেই জমি আন্দোলনের জন্য ইতিহাসে স্থান পাওয়া নন্দীগ্রাম উত্তেজনায় ফুটছে।
আজ রাজ্যবাসীর দৃষ্টি থাকবে এই কেন্দ্রের দিকে। কিন্তু দ্বিতীয় দফা ভােটের প্রচার শেষ হওয়ার দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার হিংসা, সংঘর্ষ, ধর্ষণের ঘটনায় তপ্ত হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে ধর্ষণের ঘটনার অভিযােগ উঠেছে এই নন্দীগ্রামেই। প্রকৃতপক্ষে এই দফা ভােটের আগে যত হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়।
নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে এক বিজেপি কর্মীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের চেষ্টার অভিযােগ উঠেছে তৃণমুলের চার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা মহিলাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রথম দফার ভােট শান্তিপূর্ণ হয়নি– ব্যাপক কোনও গণ্ডগােল না হলেও, হিংসার নানা ঘটনা ঘটেছে।
সুতরাং বলা যাবে না শান্তিপূর্ণ ভােট হয়েছে। তাই দ্বিতীয় দফার ভােট যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, তার জন্য নির্বাচন কমিশন কোমর বেঁধে নেমেছে। নন্দীগ্রাম উত্তপ্ত হওয়ার অনেক মশলা রয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর হয়ে রােড শাে’তে অংশগ্রহণ করে অমিত শাহ বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারালেই আসল পরিবর্তন। বিকেলে শুভেন্দুর হয়ে প্রচার করেন সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী — তাকে সহযােগিতা করেন রুপােলি জগতের বেশ কয়েকজন নায়িকা, যাঁরা অন্যান্য কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে ভােটে টাকা ছড়ানাের অভিযােগ আনলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা প্রশ্ন তােলেন, গৃহমন্ত্রীর কাজ কী? আইনশৃঙ্খলা দেখা, না পুলিশের গাড়িতে টাকা পাঠানাে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সময় এসেছেন কেন? পুলিশকে ধমকাতে? এসব করে কোনও কাজ হবে না।
নন্দীগ্রামের মানুষ তাদের কর্তব্য বােধ জাগ্রত করেই এসে ভােট দেবেন। দুই যুযুধান প্রার্থীর উত্তেজনামূলক নানা মন্তব্যের ফলে ভােটের আগেই নন্দীগ্রাম উত্তেজনায় ফুটছে।
নন্দীগ্রামের ভােট সহ দ্বিতীয় দফার ভােট শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হােক– রাজ্যের মানুষ তাই চান। জাতীয় নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের ভােট আট দফায় করেছে, শান্তিপূর্ণভাবে ভােটের স্বার্থেই।
কিন্তু প্রথম দফার ভােটে কিন্তু সেই শান্তি দূরেই থেকেছে। যদিও ভােটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ভােট দিতে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। ভােটের হারও সন্তোষজনক।