• facebook
  • twitter
Wednesday, 2 April, 2025

লন্ডন মাতালেন মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে তিনি খুব উৎসাহী। এ ব্যাপরে তিনি জ্বালানিতে বিশেষ সুবিধে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

ফাইল চিত্র

লন্ডনেও মাতালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি ব্রিটেনে গেলেও তাঁর অপর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এই দেশের শিল্পপতিদের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিেয়াগ করার আহ্বান। কারণ তিনি শিল্পপতিদের বোঝাবেন ভারতের এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনের একটি আদর্শ স্থান। তিনি লন্ডনের শিল্পপতিদের সঙ্গে একটি সভায় তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানন পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করতে। এই সম্মেলনে ভারতীয় শিল্পপতিদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী লন্ডন যাত্রার কিছুদিন আগে বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলন কলকাতায় করে গেছেন। সেই সম্মেলনে দেশের শিল্পপতিরা ছাড়াও লন্ডন সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনের যেসব সুযোগ-সুবিধা আছে, তা বিশদে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় শুনে তাঁরা আগ্রহ প্রকাশ করেন এখানে শিল্পে বিনিয়োগ করতে। সম্মেলন শেষে জানা যায়, বিদেশের শিল্পপতিরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনে আগ্রহী হয়ে, এখানে লগ্নি করার অনেকগুলি প্রস্তাব দেন।

মুখ্যমন্ত্রী লন্ডনেও শিল্পপতিদের সঙ্গে আলোচনাকালে পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনের কী কী সুযোগসুবিধা আছে, তা তাঁদের অবহিত করেন। তিনি জানান, দেউচা কয়লাখনি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কয়লাখনি। এখানে বিপুল পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে, যা শিল্প স্থাপনের সহায়ক। তাছাড়া রাজ্যে বড় ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ জমি রয়েছে, রয়েছে পর্যাপ্ত জল, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সর্বোপরি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা সন্তোষজনক, যার ফলে শিল্প স্থাপন নিয়ে কোনওরূপ বাধা আসবে না। যারা বিনিয়োগে উৎসাহী তাদের সর্বরকম সাহায্য করতে সরকার প্রস্তুত।

কোনও অসুবিধা হলে সরকার তা তৎপরতার সঙ্গে সমাধান করে দেয়। সুতরাং যাঁরা বিনিয়োগে ইচ্ছুক, তাঁদের কোনও বাধার সম্মুখীন হতে হবে না। তাই মুখ্যমন্ত্রী লন্ডনের শিল্পপতিদের বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শিল্পে বিনিয়োগ করার অন্যতম সেরা স্থান। তিনি শিল্পপতিদের মনে করিয়ে দেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাজ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। সুতরাং ভারী শিল্প স্থাপনে যে পরিমাণ বিদ্যুতের প্রয়োজন পড়বে, তা সরবরাহ করতে কোনও অসুবিধে হবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকার সুবাদে উৎপাদিত পণ্যের চলাচল নিয়েও কোনওরূপ সমস্যার উদ্ভব হবে না। লন্ডন সম্মেলনে বিশিষ্ট শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন ব্রিটেনের হাউস অফ লর্ডসের সদস্য তথা ভারতীয় বংশোদ্ভুত শিল্পপতি ৯৪ বছর বয়সী লর্ড স্বরাজ পাল। তিনি পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নতিকল্পে যে সব পরিকল্পনা বাস্তবীকরণ করে সাধারণ মানুষের উপকার করেছেন এবং রাজ্যও উন্নত হয়েছে— তার প্রশংসা করেন। মুখ্যমন্ত্রী স্বরাজ পালের মুখে তা শুনে আপ্লুত। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে আরও জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়নের কথা বলেন।

মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে বলেন, কলকাতা-লন্ডন সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে তিনি খুব উৎসাহী। এ ব্যাপরে তিনি জ্বালানিতে বিশেষ সুবিধে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তাঁর শাসনকালে বাংলা অনেক ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি করেছে। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দার্জিলিংয়ের চা বিশ্বসেরা। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় শিল্প স্থাপনের হার অনেক বেশি। দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক দার্জিলিংয়ে বেড়াতে আসেন এবং পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে তাঁরা মুগ্ধ হন। আরও বেশি করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের যাতে পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে আসেন, তার জন্য রাজ্য পর্যটন দপ্তর অনেক সুবিধে দিচ্ছে তাঁদের।

এবার রাজ্যে যে বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলন হল, তাতেও বিদেশের শিল্পপতিরা রাজ্যে শিল্প স্থাপনের জন্য বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে সেই প্রস্তাব কতখানি বাস্তবে রূপায়ণ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকে। বিদেশি শিল্পপতিরা শিল্প স্থাপনের সবরকম সুযোগসুবিধা রাজ্যে আছে বলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে যান। কিন্তু পরে তাদের তরফ থেকে তা বাস্তবীকরণে গড়িমসি দেখা যায়। রাজ্যে প্রতিবছরই শিল্প সম্মেলন হয় এবং শিল্প স্থাপনের অনেক প্রস্তাব পাওয়া যায় যোগদানকারী শিল্পপতিদের কাছ থেকে। কিন্তু পরে তাঁরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাই বলে কিছু বড় ও মাঝারি শিল্প যে রাজ্যে স্থাপন হয়নি, এমনটা নয়। তবে প্রস্তাব যা আসে, তার সিংহভাগ বাস্তবীকরণ হলে পশ্চিমবহ্গ এখন সোনার বাংলা হয়ে যেত।
ভারী শিল্প স্থাপন না হলে কর্মংস্থানের সৃষ্টি হবে না। আর কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে বেকারদের কপালে চাকরি জুটবে না। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে ভারী শিল্প স্থাপনের জন্য সবরকম সুবিধা রয়েছে— তবুও ভারী শিল্পে লগ্নি তেমন আসছে না। এবার মুখ্যমন্ত্রী লন্ডনের শিল্পপতিদের রাজ্যে ভারী ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের জন্য কতটা প্রভাবিত করতে পারেন, তা বাস্তবে বোঝা যাবে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারী শিল্প দেশে স্থাপিত না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। বেকারদের কাজ জুটবে না।