সামাজিক অবক্ষয়ের ফর্দ

বর্তমান সমাজে আমাদের কাছে রুচি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, নীতিবোধ সবকিছুর অনেক অভাব দিনে দিনে তিল তিল করে দেখা দিচ্ছে। আমাদের বহু মানুষের মধ্যে আজও রুচি শিক্ষা সংস্কৃতির মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু সমাজের এত বড় বিপর্যয় এত বড় পতনকে আটকাতে পারছি না।

তার অন্যতম এক কারণ তিনি মনে করছেন মানসিক শিক্ষার থেকে পুঁথিগত শিক্ষার উপর আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি যা বর্তমান যুগে উভয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অতি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক শিক্ষার অভাবে মানসিকভাবে উন্নত এবং বলিয়ান হতে আমরা পারছি না, তাই তো দেখতে গেলে আজ মানুষ মানুষকে প্রতারিত করছে, বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দিচ্ছে, ডিভোর্সের সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে, মানুষ মানুষকে ঠকাচ্ছে, খুন করছে, ধর্ষণ করছে, যৌথ ফ্যামিলি ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছোট হয়ে যাচ্ছে, ঘরে ঘরে অশান্তির আগুন জ্বলছে, মানুষ সমস্যার সমাধানের জন্য জ্যোতিষী তান্ত্রিকের কাছে দারস্ত হচ্ছে, পূজা পাট নিয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে ব্যবসা চলছে, ঘুষ ছাড়া সহজে কোন কাজ হচ্ছে না, মানুষ মানুষের উন্নতিতে হিংসা করছে, সমালোচনা করছে, যার জন্য খাদ্যে ভেজাল, শিক্ষায় ভেজাল, কর্মস্থানে ভেজাল, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভেজাল, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ভেজাল, সৎ বন্ধুত্বে ভেজাল, ভালো আত্মীয়তায় ভেজাল, মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কে ভেজাল। সুতরাং এত ভেজালের মধ্যে পরবর্তী প্রজন্মের যে জন্ম হচ্ছে সেটাও কিন্তু ভেজাল দিয়েই তৈরি। এই ভেজাল দেখে দেখে, এই ভেজাল খেয়ে খেয়ে আর এই ভেজালের মধ্যে বড় হয়ে আমরা এক ভেজাল রুপি মানুষে পরিণত হয়েছি। সুতরাং এই ভেজালকে ত্যাগ করার প্রয়োজন এবং দেশকে বাঁচানোর প্রয়োজন। জানিনা আমরা সবাই মিলে ভবিষ্যতে এর কোন সমাধান বা কোন পরিবর্তন করতে পারবো কিনা।

আজকে আমাদের মধ্যে কাম, ক্রোধ, হিংসা, লোভ, লালসা, জেদ, ইগো ইত্যাদি এতটা পরিমাণ বেড়ে গেছে যে আমরা কখনো নিজের বুদ্ধিতে বা কখনো অন্যের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে নানান প্রকার অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছি এবং সেক্ষেত্রে আমরাই আমাদের সমস্যার সৃষ্টির উপলক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছি। আজকে দেখলে দেখব যে মানুষের থেকে অমানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে, ভালো মানুষের থেকে অসাধু মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। এর জন্য আমি বা আপনি কি বা করতে পারি? আমাদের হাতে সমালোচনা এবং প্রতিবাদ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এটাই আমাদের অস্ত্র আর এটাই আমাদের বস্ত্র।


সামাজিক অবক্ষয় মূল্যবোধের অভাব আগের থেকে বর্তমান যুগে অনেক অনেক গুণ বেশি হয়ে গেছে। এর একমাত্র সমাধানের উপায় প্রশাসনিক কঠোর থেকে কঠোরতা, আইনের পরিকাঠামো দীর্ঘ মিয়াদি না হয়ে স্বল্প দিনে সুষ্ঠুভাবে মেটানোর পরিকল্পনা।

তবে কিন্তু একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, একজন অসামাজিক ব্যক্তি, একজন লোভী হিংস্র কামুক উগ্র ব্যক্তি কোন অপরাধ করার আগে দশবার চিন্তা করবে। সে ক্ষেত্রে কোন প্রকার ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি প্রয়োগ করতে পারবে না। নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন আইন মেনে চলতে পারবে এবং সে ক্ষেত্রে সমাজের এত উপকার অবক্ষয় হয়তো বা কিছুটা কমতে পারে। আজকে আমরা যদি কোনো উন্নতশীল দেশের সাথে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে তুলনা করি তাহলে দেখব তাদের প্রশাসনিক ক্ষমতা অনেক বেশি নিরপেক্ষ, অনেক বেশি সূক্ষ্ম, অনেক কঠোর, উন্নত এবং আধুনিক। আবার অন্য হাতে দেখতে গেলে আমাদের জনবহুল দেশে জনসংখ্যা এতই বেশি সেই তুলনায় প্রশাসনিক বিভাগের পুলিশ বা কোন উচ্চপদস্থ অফিসারের সংখ্যা অনেকটাই কম, যা আগামী দিনে অধিক পরিমাণে বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে হয়।