প্রতিবাদ হোক, ভোগান্তি কমুক

প্রতীকী ছবি

প্রতিবাদ হওয়া দরকার। কিন্তু শাস্তি কেন পাবেন সাধারণ মানুষ। কলকাতায় আরজিকর মেডিকেল কলেজের ভিতরে এক মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে চিকিৎসকদের ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়। তার জন্য দুর্ভোগে পড়েন বহু রোগী ও তাঁদের পরিবার বর্গ। বলা বাহুল্য, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন বোধ করছেন নিম্নবিত্ত ও গরিব পরিবারের মানুষগুলি। কারণ তাঁদের বেশিরভাগই সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার ওপর ভরসা রাখেন। অসহায় মানুষগুলির কাতর আর্জি ডাক্তারদের কাছে। তবু প্রতিবাদী ডাক্তারদের সাড়া মেলে না।

এই দুর্ভোগ কেবল মহানগরেই নয়, শহরতলির হাসপাতালগুলিতেও। এমনকী এই প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছে বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই পরিস্থিতিতে সামনে উঠে আসছে সরকারি বেসরকারি আরও একাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অব্যবস্থা ও অনাচার। সব মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছে প্রশাসন। এর দায় কলকাতা পুলিস ও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনওভাবেই এড়াতে পারে না।

শুরুতেই বিভ্রান্তি। আরিজি কর এবং কলকাতা পুলিস কর্তৃপক্ষ ওই মহিলা ডাক্তারের মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই লুকোছাপার আশ্রয় নিতে থাকে। মৃতার বাড়িতে ভুল খবর দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সামনে এসেছে। পুলিসের তরফে মৃতার বাবাকে ফোন করে বলা হয়, ‘আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাড়াতাড়ি চলে আসুন।’ মৃতার বাবা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন অর্ধনগ্ন অবস্থায় তাঁর মেয়ের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। শরীরে একাধিক জায়গায় ক্ষত-বিক্ষতের চিহ্ন স্পষ্ট।


এছাড়া ময়না তদন্তের রিপোর্টের সঙ্গেও মেলেনি পুলিসের প্রথম দিনের দাবি। এছাড়া এই ঘটনায় প্রথম ধৃত যুবকের পরিচয়ও পুলিস খোলসা করে বলতে রাজি হয়নি। চাপের মুখে জানা গেল, ধৃত সঞ্জয় রায় কলকাতা পুলিসের অধীনে একজন দাপুটে সিভিক ভলান্টিয়ার। পুলিস কমিশনার প্রথমে তা স্বীকার  না করে বলেছিলেন, ‘ধৃত কেজন ঘৃণ্য অপরাধী, এটাই তার বড় পরিচয়।’

স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, হাসপাতাল ও পুলিস কর্তৃপক্ষ প্রথমে যা ‘আত্মহত্যা’ বলে চালাবার চেষ্টায় ছিল এবং শেষে বেসামাল হয়ে গিয়েছে নিছক ‘মামুলি দুষ্কৃতীর কর্ম’ বলে চেপে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল? পুলিশ এবং স্বাস্থ্য—দু’টি দফতরই মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে। তাই তদন্তে অস্বচ্ছতা নজরে আসামাত্রই মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টিতে ব্যক্তিগতভাবে হস্তক্ষেপ করেন এবং এই ঘটনায় চূড়ান্ত পদক্ষেপেরই নির্দেশ দেন। তাঁর স্পষ্ট কথা, এই অপরাধের সঙ্গে যে বা যারা জড়িত, তাদের কাউকেই রেয়াত করবে না মা-মাটি-মানুষের সরকার। মানবিক মুখ্যমন্ত্রী নিহত ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত ছুটে গিয়ে এই অপরাধের কিনারা অতিদ্রুত শেষ করারই আশ্বাস দিয়েছেন। কলকাতা পুলিসকেও সময়সীমা বেঁধে দিলেন। পুলিস ব্যর্থ হলে সিবিআইকে তদন্তভার দেবেন বলেও জানালেন। ইতিমধ্যে অবশ্য আদালতের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই।

সাম্প্রতিককালে কোনও অপরাধের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে এতটা কঠোর মনোভাব নিতে দেখা যায়নি। তাই এই ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের চরমতম সাজার ব্যাপারে সরকারের আন্তরিকতা অবশ্যই প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। তদন্তকারী পুলিস এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত, মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার মর্যাদা রক্ষা করা। এবার হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকারকেও নতুন করে ভাবতে হবে। আগামী দিনে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ এবং পুলিশ বিভাগে তাদের ব্যবহারে বিশেষভাবে সতর্ক হওয়া দরকার নবান্নের।

পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত ও বিভিন্ন মহলের নির্দেশ ও আবেদন অনুসারে ডাক্তারদের উচিত অবিলম্বে চিকিৎসার পরিবেশ স্বাভাবিক করে তোলা। চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রেখে সাধারণ মানুষকে তাঁর শাস্তির মুখে ঠেলে দিতে পারেন না।

‘বিক্ষোভ ছেড়ে কাজে ফিরুন। বিচার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা, এই দু’টো কখনও ধর্মঘট করতে পারে না। রোগী দেখতেই হবে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। ডাক্তার ছাড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলবে কী করে?’ আরজি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃ প্রণোদিত মামলার শনানিতে এমনই মন্তব্য দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ওয়াই এস চন্দ্রচূড়ের