একদিকে দেশের ভয়াবহ বেকারত্বের চিত্র, অন্যদিকে চলছে ছাঁটাই পর্ব। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কয়েক বছর যে ছাঁটাইয়ের ঢেউ শুরু হয়েছে, গত আগস্ট মাসে তা চরমে উঠেছে। শুধু আগস্ট মাসেই ছাঁটাই হয়েছে ২৭ হাজারেরও বেশি কর্মী। প্রযুক্তি সংক্রান্ত শিল্পে ছাঁটাই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে এফওয়াইআই (ফর ইওর ইনফরমেশন) সংস্থা। সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, মূলত প্রযুক্তি শিল্প সংস্থা তাদের কর্মী খাতে খরচ কমাতেই বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সাল থেকে প্রযুক্তি পেশার শিল্পে ছাঁটাই পর্ব চলছে। গত ২০২২ থেকে আজ পর্যন্ত ছাঁটাই হয়েছে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৯১৫ জন। চলতি বছর ২০২৪ সালে প্রথম ছয় মাসে ছাঁটাই হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৩৪ জন। ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ছাঁটাই অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় এফওয়াইআই। তারা জনিয়েছেন, শুধু আগস্ট মাসেই ছাঁটাই হয়েছে ২৭ হাজার ৩৫ জন। বহুজাতিক প্রযুক্তি পেশার শিল্পে সবচেয়ে বেশি ছাঁটাই হয়েছে আমেরিকা, চিন ও কানাডায়। সমীক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, এই বছর জানুয়ারিতে ১২২ টি প্রযুক্তি পেশার শিল্পে ছাঁটাই হয়েছে ৩৪ হাজার ৪০৭ জন। এবারে আগস্ট মাসে ৪৪টি প্রযুক্তি পেশার শিল্পে যে সংখ্যায় ছাঁটাই বেড়ে ২৭ হাজারের উপর চলে গিয়েছে। এতে স্পষ্ট গড়ে প্রতি শিল্পে ছাঁটাই হওয়ার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ইনটেল সিসকো, ইনফিনিয়ন, আইবিএম-এর কর্মী ছাঁটাই নিয়ে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া গুগল, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট, মাইক্রোসফটের মতো বহুজাতিক বড় বড় প্রযুক্তি পেশার শিল্পে বাইরে রয়েছে বহু ছোট ছোট প্রযুক্তি পেশার শিল্প। সেখানেও চলছে ছাঁটাই। তবে তা ‘নীরব ছাঁটাই’ বলে উল্লেখ করেছে সমীক্ষক সংস্থা।
এফওয়াইআই-এর সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ, জুলাই মাসে ৩৯টি কোম্পানিতে ছাঁটাই হয় ৯ হাজার ৫১ জন কর্মী। আগস্টে মাত্র ৪৪টি কোম্পানিতে ছাঁটাই বেড়ে ২৭ হাজারের উপর চলে যায়। এই সময়ে প্রযুক্তি পেশার শিল্প ইনটেল ও সিসকোতে সর্বাধিক ছাঁটাই হয়েছে। ইনটেলে আগস্ট ছাঁটাই হয়েছে ১৫ হাজার কর্মী এবং সিসকোতে ছাঁটাই হয়েছে ৫ হাজার ৯০০ কর্মী। এছাড়া ইনফাইনঅনে ছাঁটাই ১ হাজার ৪০০ জন এবং আইবিএম’-এ ছাঁটাই হয়েছে ১ হাজার কর্মী।
ইনটেলের সিইও প্যাট গেলসিঙ্গার গত ১ আগস্ট ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক রিপোর্ট প্রকাশ করে কর্মীদের জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, আয় কমছে সংস্থার। তাই কর্মী খাতে খরচ কমানো খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সংস্থায় ২০২৫ সালের মধ্যে ১ হাজার কোটি ডলার কর্মী খাতে খরচ কমিয়ে আনতে হবে। ফলে সংস্থার ১৫ হাজার কর্মী বা ১৫ শতাংশ কর্মী কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত চলতি বছরের মধ্যে সেরা ফেলা হবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। তিনি তাঁর লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত খুবই বেদনাদায়ক, তার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক তা কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া। আমাদের সামনে খুবই একটা কঠিন সময় এসেছে। বিশেষ করে চলতি বছরের শেষের ছয় মাস খুব কঠিন সময়। আমাদের পরিষেবার খরচ খুব বেশি। মুনাফার হার খুব কম। মুনাফার হার বাড়াতে কর্মী খাতে খরচ কমানোর জন্য ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরেক প্রযুক্তি পেশার শিল্প সিসকো জানাচ্ছে জানাচ্ছে, আগস্টে তাদের দ্বিতীয় দফার ছাঁটাই শুরু হয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ৭ শতাংশ কর্মী কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পেশা প্রযুক্তি পরিষেবার লক্ষ্যে বদল আনছে সংস্থা। কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তি পরিষেবায় এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে মজুরি খাতে খরচ কমিয়ে আনতে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। খরত কমাতে সংস্থা জানুয়ারি মাসেই ছাঁটাই করেছে ৪ হাজার কর্মী। আগস্টে ফের তারা ছাঁটাই করেছে 5 হাজার ৮০০ কর্মী।
প্রযুক্তি পরিষেবার জার্মান চিপ প্রস্তুতকারী সংস্থা ইনফিনিয়ন আগস্টে ছাঁটাই করেছে ১ হাজার ৪০০ কর্মীকে। আর সমসংখ্যক কর্মীকে বদলি করেছে অনুন্নত দেশে, যেখানে মজুরি খুব কম।
আইবিএম চিনে তাদের গবেষণা দপ্তর পাকাপাকি বন্ধ করে সেখানে কর্মরত ১ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। কানাডার পরিষেবা শিল্প খাদ্য সরবরাহকারী সংস্থা স্কিপ দ্য ডিশেস ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে। দেখা যাচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি পেশা শিল্পে যে মন্দা শুরু হয়েছিল তিন বছর আগে, তা আজও অব্যাহত রয়েছে। অর্থনীতিতে বিশ্বজুড়ে যে মন্দা চলছে তার শিকার হয়েছে বড় বহুজাতিক প্রযুক্তি শিল্পও। উৎপাদন শিল্পেও কমেছে উৎপাদন। ফলে সেখানেও বেড়েছে ছাঁটাই। ফলে অর্থনীতির হাল না ফিরলে শ্রমিক ছাঁটাই থেকে রেহাই মিলবে না।