কাশ্মীরি ধাক্কা

A voter coming out after casting his vote from a polling booth of Budgam, Srinagar in Jammu & Kashmir during the 4th Phase of General Election-2009 on May 07, 2009.

কাশ্মীর নিয়ে আরএসএস-বিজেপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল এবং দেখিয়েছিল। ৩৭০ ধারা বাতিল করে সন্ত্রাসমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত ‘নয়া কাশ্মীর’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সেসব কিছু যে কাশ্মীরের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, সেটা শান্তিপূর্ণভাবে বিপুল সংখ্যায় ভোটে অংশ নিয়ে এবং শাসক দলকে পরাস্ত করে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আরএসএস-এর রাজনৈতিক মাস্টারপ্ল্যানকে কাশ্মীরের মানুষ মেনে নেননি। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ সাংবিধানিক অধিগকার কেড়ে নেবার পর থেকে যেভাবে দমন-পীড়ন নামিয়ে আনা হয়েছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এমনকি মৌলিক অধিকার, মানবিাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা মেনে নেননি মানুষ। এই নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন মোদী-শাহরা এবং আরএসএস-বিজেপি এতদিন কাশ্মীরে যা যা করেছে তারা তার ঘোর বিরোধী। জম্মু-কাশ্মীরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)-এর ইন্ডিয়া জোট।

অন্যদিকে সরকার বিরোধী জোরালো হাওয়া থাকা সত্ত্বেও হরিয়ানায় শাসক দল বিজেপি ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে। হরিয়ানায় বিজেপির পরাজয় একরকম নিশ্চিত থাকলেও ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে অনৈক্য এবং কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে জিতে গিয়েছে বিজেপি। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজেপি জিতলেও এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যা থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও প্রাপ্ত ভোটের বিচারে দু’দলই প্রায় সমান সমান। কেজরীওয়ালের ‘আপ’ একা সব আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ১.৭৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। জিততে পারেনি কোনও আসনেই। কংগ্রেস, আপ এবং ইন্ডিয়া জোটের সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে হরিয়ানায় বিজেপির পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হতো না।

কাশ্মীরে ক্ষমতা দখলের জন্য মোদী-শাহরা সব ধরনের সম্ভাবনাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। এর জন্য নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবহার করতে ছাড়েনি। হিন্দুপ্রধান অঞ্চল জম্মু অঞ্চলে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে আসন পুনর্বিন্যাস করে জম্মুতে ৬টি আসন বৃদ্ধি করা হয়। মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকায় বাড়ানো হয় মাত্র একটি আসন। তেমনই এলাকা পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে বিরোধীদের শক্তিশালী কেন্দ্রগুলিকে ভেঙে দুর্বল করা হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে পিছন থেকে মদত দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় সর্বত্র প্রার্থী দাঁড় করানো হয়। রাতারাতি তৈরি করা হয় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।


ফলে কাশ্মীরে এবার এত প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছেন, যা অতীতে কোনওদিন কল্পনাও করা যায়নি। লক্ষ্য ছিল একটাই, যথাসম্ভব ভোট ভাগাভাগি করে কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করা। তেমনই ভোটের ফলাফল ত্রিশঙ্কু হলে এই সব দল ও নির্দলদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি সরকার গড়া। আরও এক ব্যবস্থা ছিল রাজ্যপালের মনোনীত পাঁচ সদস্য নিয়ে। এঁদের ভোটেও বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার ছক ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও ছকই কাজে লাগল না।

কাশ্মীরের মানুষ বিজেপির সব ফন্দি-ফিকির বানচাল করে দিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তারা কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ আরএসএস-বিজেপির ফরমুলায় নির্ধারণ করতে চান না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছেন কাশ্মীরে মানুষ। ন্যাশনাল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও সিপিআই জোটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ওমর আবদুল্লা, শান্তি ও উন্নয়নই যাঁর লক্ষ্য।