একুশে জুলাই

একুশে জুলাইয়ের রক্তাক্ত স্মৃতির ৩১টি বছর কেটে গেল৷ তবু এখনও ফিকে হয়নি সেদিনের আবেগ৷ প্রতি বছর ধর্মতলায় মঞ্চ করে একুশে জুলাই শহিদ তর্পণে অতীতকে স্মরণ করা হয়৷ এখানেই স্থির হয় ভবিষ্যতের কর্মপন্থা৷ ২১ জুলাই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রামের একটি নির্দিষ্ট দিন৷ সেদিন সেই সময়ের যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ডাক দেওয়া হয়েছিল মহাকরণ অভিযানের৷ নিরস্ত্র শান্তিকামী মানুষের সমাবেশে বামফ্রন্টের পুলিশ গুলি চালিয়ে ১৩টি তরতাজা প্রাণকে ছিনিয়ে নেয়৷ প্রতি বছর সেই শহিদদের স্মরণ করেই ২১ জুলাই ‘শহিদ তর্পণ’৷

একত্রিশ বছর আগে মমতা তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী৷ মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়ে তাঁর দাবি ছিল, ‘নো আইডেনটিটি কার্ড, নো ভোট’৷ ভোট দেওয়ার জন্য প্রত্যেককে সচিত্র পরিচয়পত্র আবশ্যিক করতে হবে৷ এই দাবিতে মহাকরণগামী পাঁচটি রাস্তায় মঞ্চ করে জনসমাবেশের আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ব্র্যাবোর্ন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, বউবাজার, এসপ্ল্যানেড ইস্ট এবং মেয়ো রোডে পরিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত বামফ্রন্ট সরকার মেয়ো রোডে মঞ্চ তৈরি করতে দেয়নি৷ এখানে একটি ম্যাটাডোর ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়েই মমতা বক্তব্য রাখেন৷

১৯৯৩ সালের একুশে জুলাই কার্যত শহিদদের রক্তের বিনিময়ে যেমন বামফ্রন্টের ললাট লিপি লেখা হয়ে গিয়েছিল, তেমনই এক সংগ্রামী দলের জন্ম সম্ভাবনা তৈরি করে দিল৷ এর ঠিক পাঁচ বছর পর তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়৷ ২১ জুলাইয়ের শহিদদের স্মরণের পাশাপাশি ওইদিন যে কয়েক হাজার কর্মী মারা গেছেন সিপিএম এবং বিজেপির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তাঁদেরও স্মৃতিচারণ করা হয়৷ ১৯৯৩ সালে বামপ্রন্ট সরকারের আমলে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসব শহিদ পরিবারের পাশে ছিলেন এবং এখনও আছেন৷ এরপর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নানুর, সূঁচপুর— চৌত্রিশ বছরের কম শাসনে অনেকেই রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন৷ এইসব শহিদ পরিবারকেও সম্মান জানানো হয় একুশের মঞ্চ থেকে৷


প্রতিবার একুশে জুলাইয়ের দিন বৃষ্টি হয়৷ এবারও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস সেকথাই বলছে৷ তবু ‘দিদি’র কথা শুনতে হাজার হাজার মানুষ দু’দিন আগেই হাজির কলকাতা শহরে৷ সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ ও যাদবপুরের বাঘাযতীন স্টেডিয়ামে রাখা হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আগাম আসা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের৷ দু’দিন আগেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সল্টলেক বইমেলা প্রাঙ্গণে হাজির বেশ কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক৷ মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে রীতিমতো উৎসবের ছবি৷ পসরা সাজিয়ে বসেছেন অস্থায়ী ক্রেতারা৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতার ছবি থেকে ব্যাগ, হাতা, খুন্তি কী নেই? অনেকে ছোট ছোট উপহার কিনছেন বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে৷ অনুসন্ধান কেন্দ্রে অনবরত ঘোষণা চলছে৷ পাশেই রয়েছে মেডিকেল ক্যাম্প৷ বহু কর্মী শরীর চেকআপ করাচ্ছেন৷ বাইরে থেকে আগত কর্মী-সমর্থকদের দেখভালের জন্য রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা৷

রাজপথ থেকেই উত্থান মা-মাটি-মানুষের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ সেই রাজপথ থেকে তিনি কোনওদিন সরে যাননি৷ তিনি শপথ নিয়েছিলেন, শহিদদের স্মরণ করে নতুন বাংলা গড়বে৷ সেই লক্ষ্যে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এমন ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি৷ জননেত্রী থেকে দেশনেত্রী হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷