‘জয় বাংলা’ কি নিষিদ্ধ?

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি কি নিষিদ্ধ হয়ে গেল? এই সংক্রান্ত একটি খবর জানা গেছে। সম্প্রতি বাগের হাটে ক্যানসার সচেতনতা শিবিরে বক্তৃতার শেষে সিভিল সার্জেন আলাউদ্দিন আহমেদ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলেছিলেন। বিএনপি এই স্লোগান তোলার জন্য তদারকি সরকারের কাছে এই স্লোগান তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট সার্জেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। ফলস্বরূপ সরকার এই চিকিৎসককে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি পদে নিয়োগ করে। কিন্তু বিএনপি তাতে খুশি না হওয়ায়, তাঁকে তাঁর পদ থেকেই সরিয়ে দেয় তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস খান।

ঢাকায় এখন যা চলছে এবং তদারকি সরকারের নানা কাজকর্মের খবর বাইরে বের হচ্ছে না গণমাধ্যমের ওপর ইউনূস সরকারের বিরাট চাপ সৃষ্টির জন্য। সুতরাং এই তদারকি সরকার যে একটি কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে থেই হারিয়ে ফেলছে, তা নিয়ে কোনও খবর বাইরে যাচ্ছে না। সুতরাং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন এই সরকারের আমলে ঢাকায় কী ঘটছে, জানতে পারছে না। জয় বাংলা স্লোগান তোলার জন্য এই চিকিৎসককে তাঁর কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার বুদ্ধিজীবী মহল এবং সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কারণ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জোগাত। বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানও তাঁর বক্তৃতার শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলতেন। সাংবাদিকদের লেখালেখির ওপরও তীব্র নজর রাখছে তদারকি সরকারের আমলারা। এই সরকার এখনও বাংলাদেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনতে পারেনি। প্রতিদিনই মিছিল-মিটিং হচ্ছে সেখানে। বক্তারা মুজিবুর রহমানের এবং আওয়ামি লিগের কথা তুললেই সরকারের কোপে পড়ছে।

সম্প্রতি একটি খবরে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে ছয়টি মেডিকেল কলেজ এবং এক ডজনেরও বেশি সরকারি হাসপাতালের নাম বদল করেছে। শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নামাঙ্কিত ছিল এই সব প্রতিষ্ঠানগুলি। বিশিষ্ট মুক্তি যোদ্ধাদের নামে যেসব প্রতিষ্ঠান ছিল, তাঁদেরও নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নেতা, পরে মন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের নামাঙ্কিত হাসপাতালগুলির নাম বদল হয়নি। আওয়ামি লিগ নেতারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুজিবুর রহমানের নাম ভুলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তদারকি সরকার এই কাজ করে যাচ্ছে। তবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তোলায় যে চিকিৎসককে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবী মহল। কারণ তাদের মতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটি সরকারি স্লোগান। সেই স্লোগান তোলার জন্য একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং জাতীয় পতাকার পরিবর্তন বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। তদারকি সরকার এ কাজ করলে মস্ত বড় অন্যায় করবে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও হতে পারে বলে বুদ্ধিজীবী মহল মনে করে।


অপর একটি খবরে বলা হয়েছে, জুলাই মাস থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর— গত চার মাসে তদানীন্তন শাসক দল আওয়ামি লিগের অনেক নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামি লিগ নেতারা এখনও পালিয়ে রয়েছেন। প্রচুর সংখ্যায় এই দলের কর্মীরা এখনও নিখোঁজ। তাদের হয়তো হত্যা করা হয়েছে। এদের পরিবারের সদস্যরা তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। তদানীন্তন শাসক দল আওয়ামি লিগকে এখনও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি। কারণ বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের একাংশ এই নিষিদ্ধের বিরোধী। তাঁরা বলেছেন, আওয়ামি লিগ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়, করতে পারে। কিন্তু মানুষ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের জন্য দেশের জনগণ এই দলের প্রার্থীদের ভোট দেবে না।

কিন্তু এই দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইউনূস সরকার। প্রচুর সংখ্যায় ছাত্র লিগের সদস্যদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গণরোষের অভিযোগ তুলে এই দলের বেশ কিছু শীর্ষনেতাদের হত্যা করা হয়েছে বলে আওয়ামি লিগ সূত্রে জানা যায়।

বাংলাদেশ এখন গভীর সংকটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, যা মানুষের নাগালের বাইরে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বহু কর্মী বেকার হয়ে পথে বসেছে। বিদেশি মুদ্রার অভাবে কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলি এখন উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে তীব্র লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ ভুগছে। ভারতের আদানি সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ কিনত। কিন্তু তদারকি সরকার বকেয়া বিদ্যুৎ কেনার টাকা মিটিয়ে না দিলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ তেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিদ্যুতের হাহাকার। কারণ কয়লার অভাব।