একসঙ্গে আঠারােটি হাতির মৃত্যু এক চরম বেদনাদায়ক পশুনিধনের বা বন্যপশু মৃত্যুর ঘটনা পশুপ্রেমীদের মনে দারুণ হতাশার সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিককালের মধ্যে এমন ঘটেছে বলে কেউ স্মরণে আনতে পারছেন না। বন্যপশুদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখেন এমন বিশেষজ্ঞরাও বিশ্বের কোথাও একসঙ্গে এতগুলি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না।
অসমের এই মর্মান্তিক ঘটনা কিন্তু কোনও রােগে আক্রান্ত হয়ে বা ট্রেনের ধাক্কায় হাতিগুলি মারা যায়নি। প্রকৃতির রােষে তাদের মৃত্যু হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড়জলের মধ্যে হাতিগুলি যখন যুথবদ্ধ হয়ে এক স্থানে অপেক্ষা করছিল তখনই তাদের ওপর বজ্রপাত হয়। নওগাঁওয়ের এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে এতগুলি হাতির একসঙ্গে মৃত্যু নিয়ে বেশ সংশয়ের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বুধবারের এই ঘটনা যে বাজ পড়েই হাতিগুলির মৃত্যু হয়েছে তাতে বিশেষজ্ঞ ও সংরক্ষণকর্মীরা একমত পােষণ করেছেন।
অসমের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বজ্র বিদ্যুতের আধিক্যপ্রবণতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অসমের এলিফেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানও একই মত প্রকাশ করেছেন। তবে মূল্যবান হাতির দাঁতের লােভে বিষ প্রয়ােগ করে এতগুলি হাতিকে নিধন করার চেষ্টাও হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কারণ বিশ্বের কোথাও এমন একটি বজ্রপাতের ঘটনায় এতগুলি হাতির একসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রখ্যাত হাতি বিশেষজ্ঞ মার্কাস হফমেয়ার। তিনি নাকি স্বচক্ষে ঘটনাটি দেখে তবেই এমন মন্তব্য করেছেন। বজ্রে হাতির মৃত্যু হয়েছে থাইল্যান্ডের পটুয়ায়, শ্রীলঙ্কায়, পশ্চিমবঙ্গে এবং কেরলে। কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচের অধিক নয়। অসমের এক প্রবীণ হাতি বিশেষজ্ঞও একই মত প্রকাশ করেছেন।
বন্যপশুর নিধনের ঘটনা রাজ্যের তথা দেশের বনাঞ্চলের ক্রমহ্রাসমানতাকেই ইঙ্গিত করে। তৃণভােজী হাতি কেন বজ্রবিদ্যুতের শিকার হয় তার একটা ব্যাখ্যাও তিনি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বজ্রবিদ্যুতের ঘটনা প্রাকৃতিক, কারও সাধ্য নেই তা রােধ করার। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকায় এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী সঙ্কুল এলাকায় ব্যাপক বৃক্ষরােপনের মাধ্যমে এই মারাত্মক মর্মান্তিক বন্য প্রাণী নিধনকে হ্রাস করা যায় বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
দেখা গিয়েছে যে অঞ্চলে হাতিগুলি বজ্রাহত হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে সেখানে বনের ঘনত্ব খুবই কম। হাতির যাতায়াতের পথে কোনও বিধিনিষেধ আরােপ করা যায় না। আগে থেকে তাদের গতিবিধির ওপর ভবিষ্যদ্বাণীও করা সম্ভব নয়। কিন্তু অসম বনদফতরকে হাতিগুলির মৃত্যুর কারণ ও তাদের পরবর্তী সংরক্ষণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কার্যপ্রণালী রচিত হবে তা ঠিক করতে হবে।
স্মরণে রাখতে হবে ২০০৯ সাল থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের অসমে মানুষ-বন্যপ্রাণীর মধ্যে এক অসম যুদ্ধ শুরু হয়েছে। কারণ সেসময় থেকেই প্রায় সাড়ে তিনহাজার বর্গকিলােমিটার বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়াতে বনাঞ্চলের বৃদ্ধি যে জরুরি তা সকলেরই মত।
বজ্রপাতে চল্লিশটি হাতি মারত্মকভাবে আহত হয়েছে। বাকি আঠারােটির মৃত্যু হয়েছে। এদের কখনই লােকালয়ে আক্রমণে দেখা যায়নি। পনেরাে দিনের আগে সুরতহালের কোনও রিপাের্ট পাওয়া সম্ভব নয়। সঠিক তদন্তই পারে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্যের উন্মােচন করতে। প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ বিনষ্ট হল, বিনষ্ট হল বন্যপ্রাণীর একটি অমূল্য অংশ।