মুক্তি যুদ্ধের গান, ‘সোনা সোনা সোনা, লোকে বলে সোনা এত খাটি, তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি।’ ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব।’ ‘এই সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’— শেখ মুজিবের সেই বাংলায় আজ অরাজকতা, খুন এবং ইসলামী শাসনের মতো রাষ্ট্রের শাসন চলছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা। পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে সংবিধান, যে সংবিধানে বলা হয়্ছে, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যদিও তাতে প্রথমেই বলা হয়েছে কোনও অমুসলিম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না।
সম্প্রতি গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ এখন মহাসঙ্কটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসস্থান সশস্ত্র বিরোধীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে, তিনি পালিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশের একটি উড়ান তাঁকে ভারতে পৌঁছে দেয়। এখন তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। ভারত সরকারের কথায়, তিনি আছেন এবং থাকবেনও। ইতিমধ্যেই অভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ শাসনের ভার নিয়েছে, সেই সরকার হাসিনার বিরুদ্ধে প্রায় আড়াইশ মামলা দায়ের করেছে। হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছে। দুশোর বেশি খুনের মামলায় তাঁকে প্রধান অপরাধী গণ্য করা হয়েছে।
এখন আবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে তদারকি সরকার ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রেড কর্নার’ নোটিশ জারি করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশে নতুন গঠন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সামনে শেখ হাসিনা সহ আরও ৪৫ জনকে হাজির হতে বলা হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে প্রধান অপরাধ তিনি মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। কিন্তু বাংলাদেশের আইনি আওতার বাইরে রয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল যাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে তার জন্য তদারকি সরকার অনুরোধ জানিয়েছে।
কিন্তু বিশেষ মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে দেশে শেখ হাসিনা আশ্রয় নিয়েছেন প্রাণভয়ে, সেই দেশ ভারতকে হাসিনাকে তদারকি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ না জানিয়ে, ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে গেল কেন তদারকি সরকার? বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে এটা তদারকি সরকারের চালাকি ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ প্রত্যাপর্ণ বিষয়টি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সুতরাং ইন্টারপোলের কাছে হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে পাঠানো সহজ তো নয়ই বরং অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। সেই জটিল প্রক্রিয়া শেষ করে হাসিনাকে ইন্টারপোল গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের তুলে দেবে—এটা সম্ভব নয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি আবার পরবর্তী কালে সংশোধন করা হয়েছে। এই চুক্তির একটি ধারায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলার ক্ষেত্রে দুই দেশই নিজেদের অবস্থান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারত। অর্থাৎ হাসিনাকে বাংলাদ্শে ফেরানোর শেষ কথা বলবে ভারত। সম্প্রতি দিল্লির সাউথ ব্লক জানিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা ভারতে আছেন এবং থাকবেনও। তাঁকে তদারকি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
ইতিমধ্যে শাসক দল আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সংগঠন সম্প্রতি ঢাকার গুলিস্তান সংলগ্ন এলাকায় একটি মিছিল বের করেছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বেদম প্রহার করে অধিকাংশকে হাসপাতালে পাঠায়। বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সংগঠন জামায়ত ইসলামী আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য আবেদন জানিয়েছে তদারকি সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের কাছে। আবার বিএনপি’র একাংশ আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিরোধী।
সম্প্রতি স্কুলের পাঠ্য বই থেকে মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা প্রবন্ধ বাদ দেওয়া হয়েছে। উচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত আরবি ভাষায় পঠনপাঠন হবে। বাংলাদেশের জনক বলে অভিহিত শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি সংগ্রামের ওপর বিশেষ সাড়া জাগানো বক্তৃতাও পাঠ্য বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তদারকি সরকার বলেছে, সেখ হাসিনা পনের বছরের বেশি দেশ শাসন করেছেন ফ্যাসিবাদী কায়দায়। দেশের উন্নতি তো তিনি করেনইনি— দেশের প্রভূত ক্ষতি করেছেন। তিনি দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। বিচারে তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত।