ভারতও বসে নেই

ভারত চিন সীমান্ত। (File Photo: AFP)

ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে চিন লাদাখের পাশাপাশি অরুণাচল সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করছে। শুধু পরিকাঠামো নয়, বেজিং সরকার কিছু সংখ্যায় সৈন্যও সমাবেশ করেছে। দিল্লি এ ব্যাপারে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। সাউথ ব্লকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ভারতও বসে নেই। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকাপোক্তভাবে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি আরম্ভ করে দিয়েছে। চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ভারত সম্পূর্ণভাবে তৈরি। ওই মুখপাত্র বলেছেন, চিন যে লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তরেখা বরাবর সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করছে, সে খবর অনেক আগেই ভারতের নজরে এসেছে এবং ভারতও পরিকাঠামো তৈরির ব্যাপারে বসে নেই। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও অবগত আছেন এবং সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন।

ইতিমধ্যে ভারতের নতুন বায়ুসেনা প্রধান অমরপ্রীত সিংহ বলেছেন, চিন যদি নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পরিকাঠামো গড়ার কাজ চালিয়ে যেতে পারে, ভারত যে কোনও ভাবেই পিছিয়ে নেই— এ ব্যাপারে স্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেন নতুন বায়ুসেনা প্রধান। তিনি বলেন, ভারত যে কোনও অবস্থা সামাল দিতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আগামী ৮ অক্টোবর বায়ুসেনা দিবস। নতুন বায়ুসেনা প্রধান বলেন, এই দিনটি যথাযথভাবে পালন করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে গালওয়ানে চিনের সেনাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সেনা। দুই পক্ষেই বেশ কয়েকজন আহত হন। সংঘর্ষ অবশ্য বেশিদিন চলেনি। তবে ভারতীয় সেনা চিনা সেনাদের সঙ্গে প্রবলভাবে লড়ে। কিন্তু ভারতীয় সেনা আহত হলেও, চিনের তরফে আহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন বলেছিলেন, কোনও চিনা সৈন্য ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেনি। কংগ্রেস নেতা এবং সাংসদ রাহুল গান্ধী তখন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য সঠিক নয়। তিনি অভিযোগ করেন, এই সংঘর্ষের বিভিন্ন দিক চেপে রাখা হয়েছে। বেজিং সৈন্যদের ভারতের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি ভারতীয় সেনাদের তাদের দ্রুত হটিয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।


যদিও ভারতীয় সেনার একাধিক পেট্রোলিং পোস্ট চিনের সেনাদের কব্জায় চলে গিয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই লালিওয়ানের ঘটনার পর দুই দেশের উচ্চপদস্থ সেনা অফিসারদের মধ্যে যে মিটিং হয়, তাতে এই সংঘর্ষের বিষয়টি ওঠে। বৈঠক হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু এখনও বেশ কিছু এলাকা থেকে চিনা সৈন্যরা পিছু হঠেনি। অভিযোগ উঠেছে, এই এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি চিনের সৈন্যরা জোর করে দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে। এই জমি দখল নিয়ে বিরোধীরা মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে। চিনা সৈন্যদের ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে হঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। কারণ এই জমি দখল এবং সামরিক পরিকাঠামো গড়া ভারতের পক্ষে বিশেষভাবে উদ্বেগের। রাহুল গান্ধীও ভারতীয় ভূখণ্ড দখলমুক্ত করার জন্য মোদী সরকারকে বলেছেন।

অপরদিকে অরুণাচল প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিন যে সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিরোধীরা। কিন্তু অভিযোগ, মোদী সরকার কখনওই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে এ ব্যাপারে ভারতের কী করণীয় তা নিয়ে মুখ খোলেনি।

এদিকে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে ভারতীয় নতুন বায়ুসেনা প্রধান নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিনা সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কারণ ভারতও বসে নেই— সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করে চলেছে যে কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে। বায়ু সেনা প্রধান আরও বলেন, ‘২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতীয় বায়ু সেনার হাতে দেশের তৈরি যাবতীয় যুদ্ধাস্ত্র থাকবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি জানান, ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ সিস সিস্টেমের তিনটি ইউনিট ভারতে এসে গিয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে আরও দুই ইউনিট এস-৪০০ মিসাইল আসবে বলে তিনি জানান। এই সব মিসাইল হাতে এলে বায়ুসেনার শক্তি আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।