• facebook
  • twitter
Wednesday, 6 November, 2024

পরিবেশ সংরক্ষণেও অনেক পিছিয়ে ভারত

প্রকৃতি সংরক্ষণে ভালো কাজ করার জন্য প্রথম ৫০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র জায়গা করে নিতে পেরেছে ভুটান। ১৮০টি দেশের মধ্যে পাহাড়ি এই দেশটি রয়েছে ১৫তম স্থানে। ভারতের অন্য দুই প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৯০তম এবং ১৫০তম স্থানে। ভূমির ব্যবহারের মাপকাঠিতে ভারত অত্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে। স্থলজ ও সামুদ্রিক এলাকায় ভূমি সংরক্ষণে ভারত পেয়েছে যথাক্রমে দুই এবং শূন্য। জীববৈচিত্র্যের সামনে বিদের মাপকাঠিতেও সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে ভারত পেয়েছে শূন্য।

প্রতীকী চিত্র

অভিমন্যু সেন

ভারতে পরিবেশ তথা প্রকৃতিকে রক্ষা করার বদলে তাকে ধ্বংস করার কাজ হচ্ছে বেশি। পরিবেশ দূষণ ও প্রকৃতির ভারসাম্যহনতা মানব সভ্যতার অস্তিত্বের সামনে গুরুতর বিপদ তৈরি করায় গোটা বিশ্বে যখন পরিবেশ তথা প্রকৃতিকে রক্ষা করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, তখন ভারতের এই ভূমিকা রীতিমতো উদ্বেগের, যার দায় এড়াতে পারে না মোদী সরকার। বছর বছর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের নামে একদিন ঝাঁটা হাতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি সরকারের শীর্ষ পদাধিকারীরা রাস্তায় নামলেই যে প্রকৃতির প্রতি সুবিচার করা হয় না, যা সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মনে করছেন পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।

প্রকৃতি সংরক্ষণে সবচেয়ে খারাপ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে ভারত। গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বপ্রকৃতি সংরক্ষণ সূচক ২০২৪। সেই সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১৭৬তম স্থানে, অর্থাৎ শেষের দিক থেকে পঞ্চম অবস্থানে। প্রকৃতি সংরক্ষণে ভারতের থেকেও খারাপ ভূমিকা পালনকারী দেশগুলি হলো মাইক্রোনেশিয়া (১৭৭), ইরাক (১৭৮), তুরস্ক (১৭৯) এবং কিরিবাতি (১৮০)। ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো সবকটি প্রতিবেশী দেশ প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আছে ভারতের থেকে। প্রথম তিনটি স্থানে রয়েছে লুক্সেমবার্গ, এস্তোনিয়া ও ডেনমার্ক। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই প্রথম বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচক নির্ণয় করা হলো। করেছে ইজরায়েলের বেন-গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত দ্য গোল্ডম্যান সোনেনফেল্ড স্কুল অব সাসটেইনোবিলিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ। সহযোগিতায় ছিল অলাভজনক ওয়েবসাইট বায়োডিবিউট কম।

সব মিলিয়ে ২৫টি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে ভূমির ব্যবহার, জীববৈচিত্র্যের সামনে বিপদ, সক্ষমতা ও প্রশাসনিক উদ্যোগ, ভবিষ্যৎ প্রবণতা ইত্যাদি। বায়োডিবিউট কম জানিয়েছে, শুধু প্রকৃতিকে সংরক্ষণের প্রশ্নে বিভিন্ন দেশের অগ্রগতি ও ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করার জন্য এই সূচক নির্ণয় করা হয়নি। এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা একটি দেশ যাতে এগিয়ে থাকা দেশ বা দেশগুলির থেকে শিখতে পারে বা শেখার চেষ্টা করে, তাও এই সূচক নির্ণয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। এই সূচক নির্দেশ করছে, কোন দেশ নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশকে কত ভালোভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারছে। স্পষ্টতই ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম স্থানই বলে দিচ্ছে, ভারতে পরিবেশ তথা প্রকৃতিকে রক্ষা করার কাজ হচ্ছে অত্যন্ত খারাপভাবে।

দ্য গোল্ডম্যান সোনেনফেল্ড স্কুল অব সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং বায়ো ডিবিউট কম-এর রিপোর্ট বলছে, বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে ১০০-র মধ্যে ভারত পেয়েছে ৪৫.৫। প্রকৃতি সংরক্ষণে ভালো কাজ করার জন্য প্রথম ৫০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে একমাত্র জায়গা করে নিতে পেরেছে ভুটান। ১৮০টি দেশের মধ্যে পাহাড়ি এই দেশটি রয়েছে ১৫তম স্থানে। ভারতের অন্য দুই প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৯০তম এবং ১৫০তম স্থানে। ভূমির ব্যবহারের মাপকাঠিতে ভারত অত্যন্ত পিছিয়ে রয়েছে। স্থলজ ও সামুদ্রিক এলাকায় ভূমি সংরক্ষণে ভারত পেয়েছে যথাক্রমে দুই এবং শূন্য। জীববৈচিত্র্যের সামনে বিদের মাপকাঠিতেও সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে ভারত পেয়েছে শূন্য। এর অর্থ, সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকার প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে গুরুতর গাফিলতি রয়েছে ভারতের। তবে, স্থলজ সংরক্ষিত এলাকায় বাস্তুগত প্রতিনিধিত্বে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল সহ আরও ৫০টির বেশি দেশের সঙ্গে ভারত পেয়েছে ১০০-র মধ্যে ১০০। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সূচকে এটাই হলো ভারতের সান্ত্বনা পুরস্কার।