আমেরিকার ইতিহাসে একটি নতুন ও বর্ণময় অধ্যায়ের সূচনা হল যখন হোয়াইট হাউসের তীব্র লড়াইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে। এতদ্বারা যারা কমলা হ্যারিসের জয় আশা করেছিলেন, তাঁরা হতাশ হলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে খুশি হয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন এবং আশা প্রকাশ করলেন ট্রাম্পের চার বছরের শাসনকালে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে এবং দুই দেশের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনায় সুফল মিলবে। দিল্লির সাউথ ব্লকও অবশ্য মনে করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস সেই প্রেসিডেন্ট হোন, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক ‘কৌশলগত’ সম্পর্ক এগিয়ে চলবে। যেমন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের মন্তব্য, আমেরিকার নির্বাচনী ফলাফলের সঙ্গে এই সম্পর্কের ওঠানামা সংযুক্ত নয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এখন আলোচনায় ব্যস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকার মসনদে বসার ফলে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে কোনও পরিবর্তন হবে কিনা। নাকি বর্তমান সম্পর্ক বজায় থাকবে। তবে ট্রাম্পের পথ কী, তা কিছুদিন না গেলে বোঝা যাবে না। কারণ সামগ্রিক পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী অবশ্য মনে করিয়ে দেন ট্রাম্পের আগের শাসনকালে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের ধারাবাহিক উন্নতি ঘটেছে। তাঁর ধারণা, সেই সম্পর্ক ট্রাম্পের শাসনকালে বজায় থাকবে। হয়তো আরও দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া নিবিড় হবে। এই নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া— এই চার দেশের মধ্যে কোয়াডের কথাও উল্লেখ করেছেন। এই কোয়াড এখন পাকাপাকি ভাবে একটি দৃঢ় কাঠামোয় পরিণত হয়েছে। আমেরিকায় ভোটের প্রাক্কালে বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের শাসন কালে এই ‘কোয়াড’কে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল।
রাজনৈতিক মহল মনে করে এই সর্বপ্রথম আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ভারতকে সংযুক্ত করার চেষ্টা দেখা গিয়েছে। কারণ কমলা হ্যারিসের মাতৃভূমি তামিলনাড়ু এবং রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্টের পদপ্রার্থী জে ডি ভ্যান্সের স্ত্রী উষার পরিবারের শিকড় রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচারে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের মন জয় করা এবং তাঁদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাই কমলা হ্যারিসের পক্ষের সমর্থকরা তাঁর জয় হোক এই নির্বাচনে— সেই আশা করেছিলেন। কিন্তু তা না হওয়ায় অর্থাৎ হ্যারিস হেরে যাওয়ায় তাঁরা রীতিমতো অবাক।
তবে যাই হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ায় ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কে বিরাট কোনও পরিবর্তন হবে বলে আশা করে না দিল্লির সাউথ ব্লক। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সম্পর্ক বা বোঝাপড়া ভালো। তবে ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসায় চিনের সঙ্গে সম্পর্ক কোন খাতে বইবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কারণ ট্রাম্পের এর আগের শাসনকালে চিনকে ‘কৌশলগত’ বিপদ হিসেবে ঘোষণা করেছিল ওয়াশিংটন। ট্রাম্পের আগে আমেরিকার কোনও প্রেসিডেন্টই চিনের ব্যাপারে এই মনোভাব খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করেননি। এবার দেখা যাক ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাুস দখল করাতে আমেরিকা-চিন সম্পর্ক কোন দিকে ধাবিত হয়। তবে দিল্লির সাউথ ব্লক মনে করে ট্রাম্পের জেতার ফলে চিনের সম্প্রসারণবাদকে ঠেকাতে কোয়াডকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা হবে। যা ভারতের জন্য ইতিবাচক।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ঘোষণা করেছিলেন তিনি জিতলে আমেরিকাকে সবদিক থেকে আরও শক্তিশালী করে তুলবেন। এই কথা বলায় তিনি যে লাভবান হননি, তা বলা যায় না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর যখন দেখা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন, তখন চারদিকে উল্লাস দেখা গিয়েছে। জয়ী হওয়ার পর প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান আমেরিকার উন্নতি এবং আমেরিকাবাসীদের বিবিধ সমস্যার সমাধান। ২০১৬ সালের মতো এবারও ট্রাম্প অতি শক্ত হাতে আমেরিকার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সওয়াল করেছেন। পাশাপাশি, তিনি প্রচারে এ কথাও বলেছেন তিনি আবার গদি পেলে বেআইনি অভিবাসীদের ‘দেশ থেকে’ ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বার করে দেবেন। তাঁর অভিযোগ, ডেমোক্র্যাটরা অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিয়েছেন। কিন্তু কমলা হ্যারিসও অনুপ্রবেশ সমস্যার সমাধান তাঁর মতো মত দিয়েছিলেন। তবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতি ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক হবে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা।