সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে ভাষণ দিতে গিয়ে জাতিতত্ত্বকে সরিয়ে রেখে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার কথা বলেছেন। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর ১৯৪৮ সালে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া ভাষণের সঙ্গে ২০২০ সালের নরেন্দ্র মােদির দেওয়া ভাষণের তুলনামূলক আলােচনায় অনেকটাই মিল খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। মুসলিম প্রশ্নে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস চরম দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায়। ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরও ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা খুব একটা কম ছিল না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেহরু বামপন্থী দলগুলির সাহায্যে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রহিসেবে ঘােষণা করতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন।
কিন্তু মুসলিমদের কাছে বার্তা দিয়েছেন তারা যেন মুসলমান পূর্ববর্তী ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেন এবং নিজেদের সংস্কৃতি মনে করেন। এর ফলে ১৯৪৮ সালে ২৪ জানুয়ারি আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে যে দীক্ষান্ত ভাষণ নেহেরু দেন তা পরবর্তীকালে সমালােচনার একটা স্থায়ী রসদ যােগান হিসেবে দেখা দেয়। সমালােচকরা নেহরুকে ভন্ড ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী বলে আখ্যা দেন। সে সময় নেহরু বলেন, নিজেদের অবস্থান বিচার করলেই দেখতে পাবেন-যে আমাদের পূর্বসূরীরা আমাদের জন্য যে সাংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক সম্পদ রেখে গিয়েছেন তা আমাদের গৌরবের।
এমন গৌরবময় অতীতের জন্য আমাদের সকলেরই গৌরব করা উচিত। তার সম্পর্কে অজ্ঞাত থেকে এমন গৌরবময় কৃষ্টির দিক থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখব বা নিজেদের অনুভূতিতে তাকে রােমাঞ্চিত হব এই ভেবে আমরা গৌরবময় অতীতের উত্তরসূরী। কাউকেই বাদ দিয়ে এই সংস্কৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব নয় নেহরু একথা দুর্থহীনভাবে বার বার উল্লেখ করেছেন। ভারতের বন্ধুত্বের মধ্যে ঐক্যের রয়েছে তার উচ্চ সাংস্কৃতিক পরম্পরার মধ্যেই, যা ভারতকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।
বাহাত্তর বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি একই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, ধর্মের কারণে যেখানে কেউই উন্নয়ন থেকে বাদ পড়েন না এমন পথেরই আমরা দিশারী। নেহরুর চলা পথেই মােদি দৃঢ়তরভাবে চলার কথা বলেছেন। যে ধর্মের ঘেরাটোপেই আমরা জন্মগ্রহণ করি না। কেন, আমাদের লক্ষ্য হবে কিভাবে আমরা তাকে জাতীয়তাবাদে পরিণত করতে পারি।’ আদর্শগত দিক থেকে সমাজে বিভেদ থাকতে পারে, কিন্তু দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকল দিকই গৌণ। দেশের স্বার্থের ক্ষেত্রে কোনও আদর্শগত বিভেদের অস্তিত্বই গ্রাহ্য হয় না বলে মােদি মন্তব্য করেন।
নেহেরুর মৌলিক ভারতীয়ত্বই মােদির পথ প্রদর্শক বলে মনে করা হচ্ছে। মােদির নয়া ভারতের স্লোগান নেহরুর ভারতীয়ত্বকেই অনুসরণ করছে। এখানে দুই প্রধানমন্ত্রীর কাজের ধারা দর্পণের প্রতিচ্ছবি হিসেবে প্রতিভাত। নেহরু বামেদের সাহায্যে যে প্রগতিশীলতার কথা বলেছিলেন, বিজেপি এখন দক্ষিণপন্থী শিকড়কে সম্বল করে জাতীয়তাকেই তুলে ধরতে চাইছে।