ভোটটা চাই

দেখা যায় মাঝে মাঝে৷ কিন্ত্ত নির্বাচনে দলের হয়ে প্রার্থী হলে আর ঘরে বসে থাকেন না৷ তখন দেখা যায় প্রায়ই খোঁজখবর নেন এলাকার অবস্থা কেমন৷ কোনও অসুবিধে আছে কিনা৷ কিন্ত্ত প্রয়োজন তখনই পড়ে যখন প্রতিনিধিদের যাদের ভোট দিয়ে বিধানসভা অথবা লোকসভায় পাঠিয়েছিল৷ বছরের অন্য সময় কোনও কাজ নিয়ে গেলেও দেখা মেলে না৷ এখন দেখা হবে না বলে ফিরিয়ে দিয়ে বলা হয় অন্য কোনও দিন আসতে৷ সেদিন গেলে বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকারা বলে দেয় সাংসদ/বিধায়ক তো এইমাত্র বেরিয়ে গেলেন৷ দেখা পাওয়া যায় কালেভদ্রে, এমনি করে বার বার ফিরে আসার পর৷ তবুও কাজের কথা বলা যায় না— কারণ অঞ্চলের অনেকেই যে গেছে তাদের অভিযোগ জানাতে৷ তাদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি করার পর একবার কি দু’বার দেখা মেলে৷ অঞ্চলের হাজার রকমের সমস্যা, কে মেটাবে তা?

রাস্তায় আলো জ্বলে না৷ বিদু্যতের স্তম্ভ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে গতবার৷ এখনও তা তোলা হল না৷ সুতরাং এলাকা আলোহীন৷ ড্রেন পরিষ্কার হয় না বহুদিন, কে দেখবে? গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্যরা, জেলা পরিষদের সদস্যরা সবাই কমবেশি রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত৷ বর্ষায় অঞ্চল ডুবে যায়, নিকাশি ব্যবস্থা বলতে গেলে কিছুই নেই৷ রাস্তা সংস্কার হয় না৷ দিনের পর দিন আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে, দেখবার কেউ নেই৷ আছে কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্যরা, তাদেরই তো এসব সমস্যাগুলির সমাধান করা উচিত৷ কিন্ত্ত ভোট এলে তখন উঠে পড়ে লাগে এই সব সমস্যাগুলির প্রতি নজর দিতে হবে৷ আবার তো দলের হয়ে ভোট চাইতে তাদের দুয়ারেই যেতে হবে৷ প্রতিশ্রুতি দেবে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ কিন্ত্ত ভোটটা চাই৷ এইভাবে চলে বছরের পর বছর, যে পর্যন্ত আবার নির্বাচন না আসে৷

সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়েছে৷ ১৯ এপ্রিল ভোট শুরু হবে৷ সারা দেশে ভোট চলবে দেড় মাস ধরে৷ এই সময় বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের দুয়ারে দুয়ারে দেখা যাবে৷ সবাই এলাকার সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেবে কিন্ত্ত নির্বাচিত হওয়ার পর আর সে প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রীরও নয়৷ একটা সংসদ কেন্দ্রে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র৷ যিনি সাংসদ নির্বাচিত হবেন তাঁর প্রতিটি কেন্দ্রই মাঝে মাঝে ভিজিট করার কথা সমস্যা দেখতে, মানুষের অভিযোগ শুনতে৷ সব সমস্যা ও অভিযোগ শোনার পর ভোটদাতাতের আশ্বাস দেওয়া হয়, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ কিন্ত্ত ভোটটা যেন পাই৷ লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর সারা দেশে রাজনৈতিক দলগুলির মনোনীত প্রার্থীরা বেরিয়ে পড়েছেন৷ মানুুষের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চাইতে৷ এখন আবার তাদের দেখা মিলবে ঘন ঘন৷ সাংসদ নির্বাচন হওয়ার পর তার প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে এলাকার নানা সমস্যার কথা জানার কথা৷ তার জন্য তাঁরা ভাতা পান, সঙ্গে আরও অনেক সুযোগসুবিধে৷ পশ্চিমবঙ্গে ৪২ লোকসভা আসন৷ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৪২ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ দ্বিতীয় বৃহত্তম দল ভারতীয় জনতা পার্টিও সব আসনেই প্রার্থী দেবে৷ সিপিএম এবং তার শরিকরা ১৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে৷ কংগ্রেস এখনও ঠিক করেনি কয়টি আসনে প্রার্থী দেবে৷ কংগ্রেস ও সিপিএম জোট বেঁধেছে ভোটে লড়াই করতে৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮ আসন পেয়েছিল, আর বিধানসভায় পেয়েছিল ৭৭ আসন৷ তাদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷


সব প্রার্থীরাই এখন প্রচারে বের হয়েছে৷ দেওয়াল লিখন চলছে পুরোদমে৷ উত্তরবঙ্গে বিজেপির প্রাধান্য বেশি, সেইজন্য উত্তরবঙ্গে বিজেপির সংগঠন জোরদার করতে দলের কর্মকর্তারা উঠেপড়ে লেগেছেন৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর বাংলায় এসে দলের নেতাদের বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৫ আসন চাই৷ সেইভাবেই দলীয় নেতাকর্মীরা দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন৷ সম্প্রতি কলকাতায় এসে শাহ আবার ৩৫ থেকে নেমে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৫ আসন পাবেন বলেছেন৷ বিজেপি কিছু আসনে তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে৷ সেই সব প্রার্থীরা প্রচারে নেমে পড়েছেন৷ এদিকে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পদ ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তিনি মেদিনীপুরের তমলুক লোকসভা আসনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গিয়েছে৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন তৃণমূলের দেবাংশু ভট্টাচার্য৷ এই আসনে এখন কে জেতে তার জন্য জনসাধারণের মনে তীব্র কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে৷

অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা আসন ডায়মন্ডহারবার৷ এখানে তৃণমূলের প্রার্থী দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ হুগলি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিজেপির বর্তমান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে লড়বেন দিদি নম্বর ওয়ান খ্যাত রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই আসনটিতে কে জেতে কে হারে তা নিয়েও মানুষের কৌতূহল রয়েছে৷ বারাকপুরের অর্জুন সিং আবার একবার ডিগবাজি খেয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন৷ তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে৷ অর্জুন সিং এর আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন তাঁকে বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র প্রার্থী করা হবে৷ তা হল না বলে তিনি আবার বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বারাকপুরের প্রার্থী হবেন বলে৷ রাজনৈতিক মহলে বলা হয় অর্জুন সিং ডিগবাজি খেতে ওস্তাদ৷­