• facebook
  • twitter
Thursday, 9 January, 2025

বাংলা গদ্যের ইতিবৃত্ত

ইংরেজি গদ্য সাহিত্যের শৈশব ইতিহাসটি সংক্ষেপে বলে নিলাম এই কারণে যে ইংরেজি একটি সুসমৃদ্ধ সাহিত্য। তার সঙ্গে তুলনা করে দেখলে বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশের ছবিটা আমাদের কাছে স্পষ্টতর হবে।

ফাইল চিত্র

হীরেন্দ্রনাথ দত্ত

পূর্ব প্রকাশিতর পর

অবজ্ঞা গোপন করেননি, বলেছেন, গদ্য তাঁর বাঁ হাতে লেখা। এরূপ অবজ্ঞার ফলে গদ্যের অগ্রগতিতে অল্পবিস্তর বাধা অবশ্যই পড়েছে কিন্তু একেবারে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। শতাব্দী কাল মধ্যে অষ্টাদশ শতকে পৌঁছে ইংরেজি গদ্য স্বকীয় গুণেই স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাসে অষ্টাদশ শতাব্দীকে বলা হয়েছে — Age of Prose। সত্যি বলতে কি, কাব্যের চাইতে গদ্য সাহিত্যই তখন অধিকতর প্রতিপত্তি লাভ করেছিল। অকারণে নয়—জনশিক্ষার বিস্তার হয়েছে, পাঠোপযোগী সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। দুনিয়া সম্বন্ধে লোকের কৌতূহল জন্মেছে, একই চাপে সংবাদপত্রের নজ্ম হয়েছে। আর তারও চাইতে বড় কথা, জন্ম হয়েছে এ যুগে সাহিত্যের সবচাইতে বড় শরিক উপন্যাসের। ইংরেজি গদ্যসাহিত্যে এতদিনে সাবালক হল।

ইংরেজি গদ্য সাহিত্যের শৈশব ইতিহাসটি সংক্ষেপে বলে নিলাম এই কারণে যে ইংরেজি একটি সুসমৃদ্ধ সাহিত্য। তার সঙ্গে তুলনা করে দেখলে বাংলা গদ্যের ক্রমবিকাশের ছবিটা আমাদের কাছে স্পষ্টতর হবে। আপাতত দেখা গেল, শৈশব কৈশোর কাটিয়ে সাবালক হতে ইংরেজি গদ্যের লেগে গিয়েছে প্রায় চারশ’ বছর—চতুর্দশ শতকের শেষার্ধে জন্ম, অষ্টাদশ শতকে যৌবনে পদার্পণ। বাঙালি কাব্য-প্রেমিক জাতি। সেই একাদশ-দ্বাদশ শতকের চর্যাগীতি থেকে শুরু করে ক্রমাগত কাব্যচর্চাই করে এসেছে। মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণবকাব্য, বাংলা কাব্যের পুষ্টি সাধন করেছে। চন্ডীদাসের মতো মহৎ কবির জন্ম হয়েছে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কাশীদাসী মহাভারতকে বাঙালি পাঠক, বাঙালি শ্রোতা আমৃত-সমান জ্ঞান করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গদ্য রচনার কথা এ যাবৎ সে ভেবেই দেএেখনি। মনে হয় গদ্যকে সে ‘পাণ্ডব-বর্জিত’ ভাষা জ্ঞানে সযত্নে পরিহার করে এসেছে।

শেষটায় বহু বিলম্বে গদ্য রচনার সূচনা হল উনিশ শতকের গোড়ায়। প্রথম বাংলা গদ্যগ্রন্থ প্রকাশিত হল ১৮০১ সালে। তাও বাঙালির নিজের তাগিদ নয়, অপরের তাগিদে। সে এক কৌতুকের কাহিনী। সকলেরই জানা আছে, একদিন ইংরেজ এল এই বাংলাদেশে— আজ থেকে তিন শ’ বছর আগে। এসেছিল বাণিজ্য করতে; বাণিজ্যে লক্ষ্মী লাভ তো হলই, সেই সঙ্গে রাজ্যলাভও। রাজ্য জয় করে দেশের রাজা হয়ে বসল। পরাধীন দেশে রাজার গরিমা যতখানি রাজভাষার ততখানি। নবাবি আমলে দেশের উদ্যোগী পুরুষরা ফরাসি ভাষা শিখে নিয়েছিলেন নতুবা নবাবের দরবার আমল পাওয়া যেত না। সরকারি দপ্তরের ভাষাও ছিল ফরাসি। বিভিন্ন দপ্তরে যাঁরা মুন্সির কাজ করতেন তাঁদের ফারসী ভাষা শিখতেই হত।

(ক্রমশ)