• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

বাংলা গদ্যের ইতিবৃত্ত

কেরি-নিযুক্ত পন্ডিত মুনশিদের মধ্যে একমাত্র মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের লেখায় কখনো সখনো একটু প্রসাদগুণ প্রকাশ পেয়েছে।

পূর্ব প্রকাশিতর পর
ঐ সব ক্ষেত্রে তাঁর রচনারীতি সংস্কৃত রীতির অনুগামী। অবশ্য এ কথা স্বীকার করতে হবে যে এ যাবৎ যা হয়েছে তা ঐ ভিতটুকুই অর্থাৎ বাক্য গঠনের চর্চা, কোনো প্রকারে কষ্টেসৃষ্টে ভাব প্রকাশের চেষ্টা। সোজা কথায়, ভাষা ব্যবহারের প্রথম পাঠ। সাহিত্য সৃষ্টির প্রশ্নই ওঠে না। কেরি-নিযুক্ত পন্ডিত মুনশিদের মধ্যে একমাত্র মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের লেখায় কখনো সখনো একটু প্রসাদগুণ প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের দেহে যেমন ভাষার দেহেও তেমনি আছে হাড় মাস মজ্জা। প্রত্যেক ভাষাতেই ইডিয়াম বলে একটা জিনিস আছে। ঐ ইডিয়ামই হচ্ছে ভাষার মজ্জা। লোকসংস্কৃতি বা জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবন থেকে ঐ ইডিয়ামের উৎপত্তি। মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত। তাঁর বহু রচনা সংস্কৃত থেকে অনুবাদ বা শাস্ত্রালোচনা। ঐ সব ক্ষেত্রে তাঁর রচনারীতি সংস্কৃত রীতির অনুগামী।

সে ভাষা ওজনে ভারি এবং অনেকসময় দুর্বোধ্য। তবে বিদ্যালংকার মশায় ভাষা নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কখনো কখনো সংস্কৃত রীতি ত্যাগ করে নিজস্ব ভঙ্গিতে সহজ স্বচ্ছন্দ বাংলা লিখেছেন। সেখানে সাধারণ লোকের মৌখিক ভাষা এবং সেই সহ্গে বাংলা ইডিয়াম আপনা থেকেই এসে গিয়েছে এবং এর ফলেই ভাষার প্রসাদগুণ ফুটে উঠেছে। ’’ওরে পোড়া বিধাতা আমাদের কপালে এত দুঃখ লেখিস তোরকি ভাতের পাতে আমরাই ছাই দিয়াছি’’— এরূপ বাক্যে ইডিয়মের ব্যবহার সুস্পষ্ট তাছাড়া আজকে আমরা যে বাংলা বলি তার সঙ্গে এই বাংলার খুব একটা তফাত নেই।

ইংরেজের পরিচালনায় এবং সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিতদের পরিচর্যায় যার সৃষ্টি, প্রথমাবধিই কথ্যভাষার প্রতি তার এই ঝোঁক বিস্ময়ের উদ্রেক করে। মনে হয় কেরি প্রমুখ ইংরেজদের লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করবার জন্য চলতি ভাষা শেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। যে কারণেই হোক ভাষার বিকাশের পক্ষে এর ফল খুবই শুভ হয়েছে। আরেকটি মস্ত বড় জিনিসও আমরা ইংরেজের উদ্যোগেই পেয়েছি। প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’ শ্ররামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালের মে মাসে। সাপ্তাহিক পত্র, প্রতি শনিবার বেরত। সম্পাদক মার্শম্যান সাহেব। মাত্র এক মাস পূর্বে মার্শম্যান ‘দিগদর্শন’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। পাঠকসাধারণ তাতে খুব উৎসাহ দেখায়নি। মার্শম্যান অবিলম্বে সেটি বন্ধ করে দিয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশ করলেন। পরে এটি কিছুকাল অর্ধ-সাপ্তাহিক রূপে প্রকাশিত হয়েছিল। এখানে একটি জিনিস লক্ষ্য করবার মতো।
(ক্রমশ)