বাংলা গদ্যের ইতিবৃত্ত

ফাইল চিত্র

হীরেন্দ্রনাথ দত্ত

পূর্ব প্রকাশিতর পর

এই যে বেনে মাগী অহঙ্কারে আর চকে মুখে পথ দেখে না। হ্যাদ্যাখ কালি যে আমার ছেলে পথে ডাড়িয়েছিল তা ঐ বুড়ো মাগী তিন চারি ছেলের মা করিলে কি ভরন্ত কলসিডা অমনি ছেলের মাথায় উপর তলানি দিয়া গেল। সেই হইতে ষাইটের বাছা জ্বরে ঝাউরে পড়েছে। …এ ভাতারখাগি সর্ব্বনাশির পুতটা মরুক তিন দিনে উহার তিনডা বেটার মাথা খাউক!…’’


‘‘হাঁলো ঝি জামাই খাগি কি বলছিস। তোরা শুনছিস গো এ আঁটকুড়ি রাঁড়ির কথা। তুই আমার কি অহঙ্কার দেখিলি তিন কুলখাগি আমি কি দেখে তোর ছেলের মাথার উপর দিয়া কলসি নিয়া গিয়াছিলাম যে তুই ভাতার পুত কেটে গালাগালি দিচ্ছিস। তোর ভালডার মাথা খাই হালো ভালডা মাগি তোর বুকে কি বাঁশ দিয়াছিলাম হাডে।’’

কোঁদল থামছে না, পড়সি এসে দু পক্ষকে শান্তকরছে— ‘‘আই ২। এমন কর্ম্ম কি ও দেখে করেছে তা নহে। ও পোয়াতি বটে। যা বুন। তুইও যা। ও খাউক। আর ঝগড়া কন্দলে কাজ নাই. পাড়াপড়সি রাতি পোয়াইলেই দেখা হবে এত বাড়াবাড়ি কেন।’’

‘কথোপকথন’ রচনায় কেরি দেশীয় পণ্ডিতদের সাহায্য নিয়েছিলেন সে কথা তিনি নিজেই বলেছেন, ইংরেজিতে লেখা ঐ পুস্তকের ভূমিকায়। কেরির বাংলা ভাষার দৌড় এতখানি নিশ্চয় ছিল না যে গ্রাম্য রমণীদের কলহ তিনি গ্রাম্যভাষায় লিপিবদ্ধ করতে পারেন। অনেকেরই ধারণা, এ রচনায় মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার নিশ্চিত হাত লাগিয়েছিলেন। এই সূত্রে লক্ষ করবার বিষয় যে বাংলা গদ্য বলতে গেলে জন্মমুহূর্তেই কথ্যভাষার দিকে খানিকটা ঝোঁক দেখিয়েছে।

কেরি নিজেও কিছু কম লেখেননি। ১৮১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে কেরির ‘ইতিহাসমালা’। ইতিহাস নয়, গল্প— নানা স্থান থেকে সংগৃহীত নানা কাহিনী। কেরির নিজ রচনার নমুনা হিসাবে একটি গল্পের কয়েক পঙক্তি উদ্ধার করছি— ‘‘মাছ আনিলা ছয় গন্ডা চিলে নিলে দু গন্ডা বাকী রহিল ষোল তাহা ধুতে আটটা জলে পলাইল তবে থাকিল আট দুইটায় কিনিলাম দুই আটি কাঠ তবে থাকিল ছয় প্রতিবাসিকে চারিটা দিতে হয় তবে থাকিল দুই তার একটা চাখিয়া দেখিলাম মুই তবে থাকিল এক ঐ পাত পানে চাহিদা দেখ এখন হইস যদি মানুষের পো তবে কাঁটাখান খাইয়া মাছখান থো আমি যেঁই মেয়ে তেঁই হিসাব দিলাম
কয়ে…।’’

(ক্রমশ)