বাংলা গদ্যের ইতিবৃত্ত

ফাইল চিত্র

হীরেন্দ্রনাথ দত্ত

পূর্ব প্রকাশিতর পর

সংস্কৃতের অধ্যাপক এবং প্রচুর পাণ্ডিত্যের অধিকারী হয়েও তিনি সেই সূচনার যুগে যে বাংলা গদ্য লিখেছেন তা স্থানে স্থানে আশ্চর্যরকম ঝরঝরে এবং কথ্যভাষার খুব কাছাকাছি। তাঁর ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ নামক গ্রন্থের অংশবিশেষ থেকেই তা প্রমাণিত হবে— ‘‘শাক ভাত পেট ভরিয়া যেদিন খাই সেদিন তো জন্মতিথি। … তেল বিহনে মাতায় খড়ি উড়ে। শীতের দিনে কাঁথা খানী ছালিয়া গুলিবের গায় দি আপনারা দুই প্রাণী বিচালি বিছাইয়া গোয়ালের বিঁড়ায় মাতা দিয়া মেলের মাদুর গায় দিয়া শুই। বাসন গহনা কখন চক্ষেও দেখিতে পাই না যদি কখন পাথরায় খাইতে পাই ও রাঙ্গা তালের পাতা কানে পরিতে ও পুঁতির মালা গলায় পরিতে পাই তবে তো রাজারাণী হই। এ দুঃখেও দুরন্ত রাজা হাজা শুকা হইলেও আাপন রাজস্বের কড়া গন্ডা ক্রান্তি বট ধূল ছাড়ে না এক আধ দিন আগে পিছে সহে না। … হে ঈশ্বর দুঃখির উপরেই দুঃখ ওরে পোড়া বিধাতা আমাদের কপালে এত দুঃখ লেখিস্ তোর কি ভাতের পাতে আমরাই ছাই দিয়াছি।’’


পন্ডিত, মৌলবী এবং ইংরেজি ভাষাবিদের সাহায্যে সংস্কৃত, ফার্সি, আরবি এবং অন্যান্য ভাষায় প্রচলিত নানা কাহিনীর অনুবাদ হতে লাগল। সংস্কৃত থেকে ‘হিতোপদেশ’ এবং ইংরেজি থেকে ‘ঈশপের গল্প’ অনুবাদ করা হল। ১৮০৩ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের উদ্যোগে ‘ওরিয়েন্টাল ফেবুলিস্ট’ নামে নানা দেশীয় কাহিনী সম্বলিত একটি অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হল। পন্ডি, মৌলবী, সাহেসসুবা কলেই এ কাজে হাত মিলিয়েছিলেন। কিছুকাল পরে ১৮১৮ সালে ‘নীতিকথা’ নামক গ্রন্থে আবার কিছু বিদেশী কাহিনীর অনুবাদ প্রকাশিত হয়। উল্লেখ করা যেতে পরে যে এ গ্রন্থটির প্রকাশে রাজা রাধাকান্ত দেব ও রামকমল সেন মহাশয়ের উৎসাহ এবং সহযোগিতা ছিল।

এই সব অনুবাদপুস্তক—প্রকৃতপক্ষে রামরাম বসু প্রণীত ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ থেকে শুরু করে গোড়ার দিকে যত পুস্তক রচিত হয়েছে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলা গদ্যে বাক্য গঠনের সুসম্বন্ধ প্রণালী আবিষ্কার। উইলিয়াম কেরি কিন্তু সেই সূচনাপর্বেই একটি অতি বিজ্ঞজনোচিত কাজ করেছিলেন. ১৮০১ সালে তিনি ‘কথোপকথন’ নামে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন. দৈনন্দিন জীবনকে ভিত্তি করে দুজন সাধারণ ব্যক্তির মধ্যে নানা বি,য়ে কী ধরনের কথাবার্তা হয় তারই নমুনা। এই সব বাক্যালাপের মধ্যে তখনকার সমাজজীবনের একটি চিত্র দিব্যি ফুটে উঠেছে। এমনকি, পাড়াগেঁয়ে মেয়েরা কী ভাবে ঝগড়া-বিবাদ করে তারও জলজ্যান্ত বিবরণ পাওয়া যাবে। ‘কন্দল’ নামকঅংশটি থেকে কয়েক পঙক্তি উদধার করলেই তা প্রমাণিত হবে— ‘‘আর শুনহিসডে নির্ম্মলের মা। (ক্রমশ)