• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

হিমন্তের স্মার্ট ডাকাতি

আদানির হাতে রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ বিক্রি করে দিয়েছে হিমন্ত বিশ্বশর্মা নেতৃত্বাধীন অসম সরকার

স্মার্ট মিটার বসিয়ে স্মার্ট ডাকাতি চালাচ্ছে অসমের হিমন্ত বিশওয়াল সরকার। আমজনতার পকেট লুঠ করে আদানির পকেট ভরতে সাহায্য করছে মোদি-হিমন্ত সরকার। এই অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নেমেছেন অসমের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।গত চার-পাঁচ দিন ধরে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা অসম। কোনও কোনও স্থানে বিরোধী দল-সংগঠনের নেতৃত্বে মানুষ পথে নামলেও বেশির ভাগ এলাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন জনতা।

রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই দু-তিন মাস অন্তর বিদ্যুৎ মাশুল বৃদ্ধি করে চলেছে। এই নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ পূঞ্জীভূত হচ্ছে। গত সাত-আট মাস ধরে আচমকা বিদ্যুৎ মাশুল তিনশো থেকে পাঁচশো শতাংশ বৃদ্ধি করেছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। যাঁদের ঘরে আগে ৩০০-৪০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল মেটাতে হতো, তাঁদের এখন ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আজ থেকে কয়েক মাস আগেও ১-৯৯ ইউনিট পর্যন্ত ইউনিটের দাম ছিল ৫ টাকা২০ পয়সা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ৪০ পয়সা। উপরন্তু মিটার টেম্পারিং করে গ্রাহকদের পকেট কাটছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানোর পরই এমন কাণ্ড শুরু হয়েছে।

বছর খানেক ধরে ঘরে ঘরে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু করেছে অসমের বিজেপি সরকার। প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসালে বিদ্যুতের বিল কমবে বলে মিথ্যা প্রচার চালায় সরকার। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে প্রিপেইড স্মার্ট মিটারের গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে খবর পেয়ে অসমেও প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসাতে বাধা দিতে শুরু করেন গ্রাহকরা। তখন কোথাও ভয় দেখিয়ে, আবার কোথাও জোর করে রাতের অন্ধকারে স্মার্ট মিটার বসিয়ে দিতে শুরু করে হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। তখনই সন্দেহ জাগে কার স্বার্থে রাতের অন্ধকারে গ্রাহকদের না জনিয়ে স্মার্ট মিটার বসাচ্ছে সরকার। ইতিমধ্যে জানা গিয়েছে, আদানির হাতে রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ বিক্রি করে দিয়েছে হিমন্ত বিশ্বশর্মা নেতৃত্বাধীন অসম সরকার। আদানির স্বার্থেই ভয় দেখিয়ে জোর করে প্রিপেইড মিটার বসাচ্ছে সরকার।

এদিকে রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগের এক বড়সড় কেলেঙ্কারির খবর জানা গিয়েছে। ক্রেসকারেন্ট নামের একটি সংবাদমাধ্যমের আরটিআই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে আদানি সহ পাঁচটি কোম্পানির হাতে রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ বিক্রি করতে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। এই আরটিআই রিপোর্টে দেখা গেছে, আদানির কোম্পনি সহ মোট পাঁচটি কোম্পানির হাতে বিদ্যুৎ বিভাগ বিক্রি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এগুলি হল্: আদানি ট্রান্সমিশন, ইনটেলিস্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার, জেনাস পাওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার, হাই প্রিন্ট মিটারিং ও অপ্রভা এনার্জি। এই সংস্থাগুলির মধ্যে একটির মালিক সরাসরি আদানি গোষ্ঠী হলেও বাকিগুলিও আদানি কোম্পানির ঘনিষ্ঠ। এরা আদানির সংস্থায় বিনিয়োগ করে। এই পাঁচটি কোম্পানি রাজ্যের ৬৫ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪৪৬টি ঘরে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার বসানোর বরাত পেয়েছে। এই কাজের জন্য অসম সরকারের কাছ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা পেয়েছে সংস্থাগুলি। এর মধ্যে আদানি ট্রান্সমিশন কমিশন পেয়েছে ৮৪৪.৭৬ কোটি টাকা, জেনাস পাওয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার পেয়েছে ১৪১১.৭৮ কোটি, অপ্রভা এনার্জি পেয়েছে ৬৫৮.৫৩ কোটি টাকা। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, ইনটেলিস্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি কত টাকা পেয়েছে, এর কোনও তথ্য নেই। যদিও ইনটেলিস্মার্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার সবচেয়ে বেশি মিটার বসানোর ঠিকা পেয়েছে। এতেই স্পষ্ট হচ্ছে, বড় রকমের দুর্নীতি হয়েছে।

ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ ঘরে মিটার বসানোর কাজ শেষ। বাকি ঘরে মিটার বসাতে জোরজবরদস্তি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এই মিটারগুলিই হচ্ছে জনগণের পকেট লুটের মেশিন।

বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, রাজ্যের আর পাঁচটি সম্পত্তির মতো বিদ্যুৎ বিভাগকেও আদানির হাতে তুলে দিয়েছে অসমের বিজেপি সরকার। ইতিমধ্যে গুয়াহাটি বিমানবন্দর, একাধিক তেলকূপ, কয়লা খনি আদানির হাতে বিক্রি করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। এমকি, গুয়াহাটি চিড়িয়াখানার বিরল প্রজাতির প্রাণীও গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দিচ্ছে সরকার। বিদ্যুতের দায়িত্ব পেয়ে আদানি সাধারণ মানুষদের জন্য ভর্তুকি তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত মাশুল বৃদ্ধি করছে। আবার টেম্পারিং করেও গ্রাহকদের পকেট লুঠ করছে। স্মার্ট মিটারের নামে এই ডাকাতির বিরুদ্ধেই রাজ্যজুড়ে মানুষ আন্দোলনে নেমেছে।