হাসিনার হুঁশিয়ারি

বাংলাদেশে একেক সময় এক এক কাণ্ড ঘটে, যার কোনও যুক্তি পাওয়া যায় না৷ যে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পেতে সাহায্য করল, যে ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নে সবরকম হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেই ভারতের বিভিন্ন দ্রব্য, উৎপাদিত পণ্য বাজেয়াপ্ত করার ডাক দিয়েছে কিছু শক্তি এবং তাকে সাহায্য করছে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি৷ বাংলাদেশের নতুন স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর সেই সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল তারাই আবার দেশের পণ্যের বাজারকে অস্থির করতে এই চক্রান্ত করছে৷ তারা ভারতের পণ্য বর্জন করার ডাক দিয়েছে৷ কিন্ত্ত বিএনপি এর মধ্যে জড়িত থাকলেও ভারতের পণ্য ব্যবহার অব্যাহত করেছে৷ তবে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, এই বর্জনের ডাকে কোনও সাড়া মেলেনি৷ বিএনপি অবশ্য বলেছে, এই পণ্যের ডাক দেওয়ার আগেই তো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য ক্রমশ ঊর্ধ্বগতি৷ যার ফলে মানুষের জীবনে প্রগতি নিয়ে এসেছে৷ সরকারের ব্যর্থতা অর্থাৎ দেশে উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য কম করতে ব্যর্থ রয়েছে হাসিনা সরকার৷ কিন্ত্ত মানুষ অনেক কষ্টে তাদের জীবনযাপন করছে৷ কৃষিপণ্য উৎপাদনকারীরা নানাভাবে কষ্ট পাবে তাদের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে৷

আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদকের কথায়, দূরদেশ থেকে পণ্যদ্রব্য আমদানি করার চাইতে ভারত থেকে তা আনা অনেক সুবিধাজনক৷ আমদানি খরচও কম লাগবে৷ বাংলাদেশের জনগণের সুবিধে হবে৷ ভারতীয় পণ্য বর্জন করার ডাক দেওয়ার চাইতে দেশের পণ্যের বাজার স্থিতিশীল করা এবং পণ্য উৎপাদনে দেশের কৃষক সমাজকে সাহায্য করা উচিত৷ বিএনপি নেতারা মনে করেন ভারত থেকে দ্রব্য আনার চেয়ে নিজেদের দেশের পণ্য ব্যবহার করা উচিত৷ সে তো ভালো কথা, তারা করতেই পারে, আপত্তি কোথায়? কিন্ত্ত প্রধান বিষয় হল দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করা৷ তা দেশের জন্য ভালো হবে কি? তাঁর প্রশ্ন৷ বিএনপির মূল কাজ যাতে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পায়৷ যেটার প্রয়োজন সেটাই ভারত থেকে আনা৷

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার ভারত থেকে আনা খাবার খাবেন, ভারতের শাড়ি পরবেন, ভারতের প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহার করবেন আবার ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেবেন, এই দ্বিমুখী নীতি চলে না৷ আপনাদের নেত্রী ভারত থেকে আমদানি করা শাড়ি পরিধান করবেন, ভারত থেকে মাংস এনে ইফতার করবেন, ভারতে গিয়ে রোগের চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন, তারপরও ভারতের নিন্দা আপনাদের মুখে৷ এগুলি হিপোক্রেসি নয়? বাংলাদেশ সরকার এসব বরদাস্ত করবে না৷ ভারতীয় পণ্য যেভাবে আসে, সেইভাবেই আসবে৷


এইসব চাপানউতোরের মধ্যেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে বিরোধিতা করা শক্তিই এখন ভারতের পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে৷ কিন্ত্ত দেশের মানুষ তাতে কোনও সাড়া দেয়নি৷ সুতরাং এই পণ্যবর্জন কেউ মানবে না৷ সুতরাং এসব নিয়ে আলোচনাই বৃথা৷ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতারা তাঁদের বাসায় গিয়ে বউদের শাড়ি পোড়ান, তবেই বিশ্বাস করব আপনারা সত্যিই ভারতীয় পণ্যের বর্জন চান৷ আপনারা ভারতীয় মশলা ছাড়া রান্না করতে পারবেন না৷ সে উত্তর তো বিএনপি নেতাদেরই দিতে হবে৷
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি আলোচনাসভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা দেখি অতি বাম, অতি ডান৷ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক ধারাটা তাঁরা পছন্দ করেন না৷ তাঁরাই সব বর্জনের ডাক দিয়েছে৷ হাসিনা বলেন, নানাভাবে এই বামেরা ও ডানেরা বাংলাদেশের বিষয়ে ষড়যন্ত্র করেছে৷ সরকার সজাগ রয়েছে৷ কোনও নাশকতামূলক কাজ করতে দেওয়া হবে না৷ শাড়ি যদি পোড়াতেই হয়, তাহলে বাড়ি গিয়ে নিজের ঘরে সেই কাজটা করুন৷ প্রশাসন ভারতীয় দ্রব্যের বর্জন মানবে না৷ পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে যথোচিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

হাসিনা আরও বলেন, যারা এভাবে ভারতীয় পণ্যের ডাক দিয়েছে, তারা জানে না ভারত আমাদের কতবড় বন্ধু৷ সেই বন্ধুত্ব যেকোনওভাবেই অটল থাকবে৷ আজ বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন করেছে, তার সহায়তা পেয়েছে ভারত সরকারের কাছ থেকে৷ শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যদি সবরকম সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য না করত তাহলে স্বাধীনতা আসত না৷ আসলেও তা আসত দেরিতে, অনেক লোকক্ষয়ের পর৷ সুতরাং ভারত আমাদের পরম বন্ধু, এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে৷ এমন কিছু করতে দেওয়া যাবে না, যাতে ভারত ক্ষুণ্ণ হয়৷