হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ভাগ্যের কী পরিহাস! রাজনীতি এমন একটা নীতি, যা কাউকে খ্যাতির শীর্ষে তুলতে পারে! আবার তার পতন ঘটিয়ে তাকে তার কু-কাজ বা অপরাধের জন্য বিচারার্থে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। এই যেমন ভারতের নিকটতম এবং বন্ধু প্রতিবেশী বাংলাদেশের মুজিব কন্যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি তাঁর দল আওয়ামি লিগকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তাকে দীর্ঘসময় শাসক দল হিসেবে রেখেছিলেন। আর এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি যারা স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন এবং পাকিস্তানের সমর্থক হয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন সেই রাজাকারদের বিচার করে শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। এই ট্রাইব্যুনাল প্রুর সংখ্যক রাজাকারদের প্রাণদণ্ড দিয়েছিল। অনেকের সারাজীবন কারাদণ্ডও হয়েছিল। বর্তমান তদারকি সরকার সেই ট্রাইবুনালকে নতুন আাঙ্গিকে পুনরায় গঠন করল। এই ট্রাইবুনাল সম্প্রতি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং শাসক আওয়ামি লিগের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল। হাসিনার অপরাধ সম্প্রতি গণ অভ্যুত্থান দমন করতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নামিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সেনারা হাজার হাজার প্রতিবাদী ছাত্র-যুবক এবং সাধারণ মানুষকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ট্রাইব্যুনাল প্রাক্তন আওয়ামি লিগ সরকারের শীর্ষস্থানীয় নেতাদেরও গ্রেপ্তার করার নির্দেশ জারি করে। ট্রাইবুনালে হাসিনা সহ দলের এবং সরকারের শীর্ষ নেতাদের ১৮ নভেম্বর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে হাজির করানোর জন্য আদেশ দিয়েছে।

হাসিনার আবাস গণভবন বিদ্রোহীরা আক্রমণ করলে তিনি প্রাণে বাঁচতে তড়িঘড়ি দেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন। ভারতও তাঁকে আশ্রয় দেয়। অন্য ৪৬ জন সরকারের বিভিন্ন পদে থাকা এবং দলের শীর্ষ নেতারা এখন বাংলাদেশেই পালিয়ে রয়েছেন। তাঁদের ধরে ট্রাইবুনালে নিয়ে আসার জন্য তদারকি সরকারের সমর্থকরা জোর তল্লাশি চালাচ্ছে। নবগঠিত ট্রাইবুনালের বিচারপতি হলেন গোলাম মর্তুজা মনুসদার। তদারকি সরকারের একজন উপদেষ্টা সম্প্রতি জানালেন, শেখ হাসিনা ঠিক কোথায় আছেন তিনি জানেন না। তবে তিনি শুনেছেন কোনও কোনও সূত্রে যে, হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। আর আওয়ামি লিগের নেতারা দেশেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এঁদের মধ্যে অনেকেই হাসিনা সরকারের উচ্চপদে আসীন ছিলেন। তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনা যদি ভারতে অবস্থান করে থাকেন, তাহলে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করা হবে সমস্ত নিয়মকানুন অনুসরণ করে। এ ব্যাপারে তদারকি সরকার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।


যে ৪৬ জন দেশেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই হাসিনা সরকারের উচ্চপদে আসীন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের এবং শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, একজন খ্যাত লেখক এবং ঢাকা পুলিশের প্রাক্তন গোয়েন্দা প্রধান। কেউ কেউ বলেন, হাসিনার পুত্র তাঁর মায়ের সঙ্গে ভারতেই আছেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র জানিয়ে দেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এখন ভারতেই আছেন এবং তিনি এখানেই থাকবেন। সাংবদিকরা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রকে বলেন, শেখ হাসিনাকে নিয়ে নানা ধরনের খবর বের হচ্ছে। ভারত নাকি তাঁকে ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে।’ কিন্তু আসল ডকুমেন্টটা ঠিক কী? বিদেশ মুখপাত্র বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে আসার খবর আগেই জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে অল্প নোটিশে তিনি ভারতে আসেন। এখন তিনি ভারতেই আছেন এবং থাকবেনও।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ সময় থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনই তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগও শোনা যায়— যেমন স্বজনপোষণ এবং নিজের পছন্দের লোককে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো এবং বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি। ভারতের বিদেশ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে, ভিসা প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক হবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, দুর্গাপুজোর মণ্ডপ ভাঙচুরের বিরুদ্ধে ভারত বিবৃতি দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল তদারকি সরকারের কাছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ হয়নি, যা দুঃখের। তদারকি সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ বন্ধ না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তিনি তাঁর কথার মূল্য দিতে পারেননি। ভারত বাংলাদেশে এখন কী ঘটছে তার ওপর নজর রাখছে। সর্বশেষ এক খবরে জানা যায় হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে বাধ্য নয় ভারত সরকার। তিনি যেমন আছেন তেমনই থাকবেন। ভারত সরকারের তরফে একথা জানানো হয়েছে।