দিল্লির আশঙ্কা ভারতের বন্ধুরাষ্ট্র এবং নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশে সম্প্রতি গণ অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগ সরকারের পতনের পর সেখানে ইসলামি মৌলবাদের দাপট প্রবলভাবে বেড়েছে। ভারত সরকারের সাউথ ব্লকের খবর, এখন বাংলাদেশে ১৯৭১-এর গণহত্যার অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা বেমালুম ভুলে গিয়ে পাকিস্তনের দিকে মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়েছে, যা গভীর চিন্তায় রেখেছে ভারত সরকারকে। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতীয় কূটনীতিবিদ তাঁর ভাষণে একাত্তরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে দেখা গিয়েছে। একাত্তরের ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতের প্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে— আসন্ন দুর্গাপুজো উপলক্ষে গড়া দেবী মূর্তি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের তদারকি সরকার এ ব্যাপারে চুপ করে রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিক রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শান্তি ও সম্প্রীতির বুলি আওড়াচ্ছেন। কিন্তু তাঁর মুখে শান্তি নিয়ে কোনও কথা শোভা পায় না। কারণ তাঁর দেশ পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের জনক এবং এমন একটি দেশ যে দেশ দীর্ঘদিন ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছে। সেনা সমর্থনে চলা পাকিস্তান সারা বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিচ্ছে— এমন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে শান্তির বাণী বেমানান।
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর অত্যন্ত কঠোর ভাষায় পাকিস্তানের সমালোচনা করে বলেছেন, বিশ্বের সব নীতির বিরোধী হল সন্ত্রাসবাদ আর সেই সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পাকিস্তান বিপুল অর্থ খরচ করছে। অথচ পাকিস্তানে অনুন্নয়ন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। সেদিকে পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকা নেতাদের কোনও দৃষ্টি নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানের কুকাজের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ভুগছে।
পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যে দেশ শান্তির সন্ধান করে করে কী করে সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। মোদী সরকার ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে ভারতকে ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছে। ইমরান খান থেকে শাহবাজ শরিফ সেই আক্রমণ বজায় রেখে চলেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে পাক প্রধানমন্ত্রী ভারতকে আক্রমণ করে বলেছেন, প্যালেস্তাইনের মানুষের মতোই জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ স্বাধীনতা ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তাঁর আরও অভিযোগ, ভারতের মুসলমানদের লাগাতার আক্রমণ করে যাচ্ছে মোদী সরকার। ভারতে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। ভারতে এখনও ২০ কোটি মুসলমান বাস করে।
ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেছেন, যে দেশ গোটা বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ চালাচ্ছে, সেই দেশে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতকে আক্রমণ করার ঔদ্ধত্য ও সাহস পায় কী করে? এদিকে, মহম্মদ ইউনূস খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তদারকি সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর যে পীড়ন চলছে, তা থামাতে তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছে ভারত সরকার। সামনে দুর্গোৎসব— সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে হিন্দুরা পুজো নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে গড়া দেবী দুর্গার মূর্তি ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে একটাই আশার কথা, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তরা এবার তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার বুকে তারা মিছিল বের করে, তাদের প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই দেশ তাদেরও, সুতরাং তারা এই দেশ ছাড়বে না এবং তাদের ওপর যে অত্যাচার ও পীড়ন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও তারা লড়াই করবে।
তদারকি সরকার অবশ্য দাবি করেছে যে হিন্দুদের পুজোয় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। পুজোয় তদারকি সরকার আর্থিক সাহায্যও করবে। ঢাকা এখন মোটামুটি শান্ত হলেও পাকিস্তান পন্থীরা জামায়েত ইসলামি এবং মৌলবিরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের জন্য প্রায় প্রতিদিনই মিছিল বের করছে। তারা বলছে, ‘আমার সোনার বাংলা’ কখনও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হতে পারে না। কারণ এটি বাংলাদেশের কেউ লেখেননি। আর এই গান যখন লেখা হয়েছে, তখন বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। তারা নতুন একটি জাতীয় সঙ্গীত রচনা করবে, তাই এখন মিছিলে গাওয়া হচ্ছে।