সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানেই কেন্দ্রীয় সরকার কুপোকাত। বর্তমান আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আর্থিক বৃদ্ধির হার সব হিসেব ও প্রত্যাশা উড়িয়ে বিপজ্জনকভাবে কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৪ শতাংশে। ব্যাপক পড়েছে টাকার দাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম চড়া হারে বেড়ে চলেছে, বেকারত্বের হারও ঊর্ধ্বমুখী। দেশের অর্থনীতির এই বেহাল চিত্রকে আরও বেআব্রু করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরের (২০২৪-২০২৫) দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৫.৪ শতাংশে। এই হার শেষ দুই বছর বা সাতটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৩-২০২৪ আর্থিক বর্ষের এই দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেই দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১ শতাংশ। এনএসও এই তথ্য জানিয়ে বলেছে, মূলত ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর বা কারখানায় পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্র এবং খনিজ দ্রব্য উৎপাদন ক্ষেত্রে অধোগতির কারণে এত কমে গিয়েছে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার বা মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির হার।
পাশাপাশি মোদী সরকারের মাথাব্যথা বাড়িয়ে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস (সিজিএ) জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে কোষাগারের ঘাটতিকে যে সীমার মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে, প্রথম সাত মাসেই তার ৪৬.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে এই ঘাটতি। স্পষ্টতই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে মোদী সরকারের ঢক্কানিনাদের বেলুন চুপসে দিয়েছে এনএসও। অর্থনীতির এই বেহাল দশা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, এনএসও-র তথ্য দেখিয়ে দিল, দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁর ‘চিয়ার লিডারদের’ বাগাড়ম্বরের থেকে বাস্তবতার অনেক ফারাক।
এনএসও-র বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, কারখানায় পণ্য উৎপাদন ক্ষেত্র এবং খনিজ দ্রব্য উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্লথতা তো আছেই. এর সঙ্গে একদিকে সরকারি ব্যয়কে সঙ্কুচিত করা হয়েছে ও আরেকদিকে ব্যক্তিগত ভোগবাদ কমেছে। তার পরিণতিতেই চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের (এপ্রিল-জুন) ৬.৭ শতাংশ থেকে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে ৫.৪ শতাংশে। এই হার এর থেকেও নিচে নেমেছিল ২০২২-২০২৩ আর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৪.৩ শতাংশে।
অর্থনীতি পরিচালনায় মোদী সরকারের ব্যর্থতা আরও প্রকট হয়েছে কোষাগারের ঘাটতি নিয়ে সিজিএ-র দেওয়া তথ্যে। প্রতি আর্থিক বছরের বাজেটে সরকার জানিয়ে দেয় সেই আর্থিক বছরের শেষে কোষাগারের ঘাটতিকে জিডিপি’র কত শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। এই বছরের বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে জিডিপি’র ৪.৯ শতাংশ। ভারতীয় মুদ্রার অঙ্কে এই লক্ষ্যমাত্রার পরিমান ১৬ লক্ষ্য ১৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। সিজিএ জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বচরের প্রথম সাত মাসেই (এপ্রিল-অক্টোবর) সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ফারাক দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ্য ৫০ হাজার ৮২৪ কোটি টাকায়, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৬০৫ শতাংশ। ফলে আর্থিক বচরের শেষে গিয়ে কোষাগারের ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে রীতিমতো সংশয় তৈরি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে মোদী সরকার আর্থিক বচরের শেষ চার মসে ব্যাপক মাত্রায় সরকারি ব্যয় ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অর্থনীতির এই চিত্রকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ের তুলনায় ‘নন-বায়োলজিক্যাল’ প্রধানমন্ত্রীর আামলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হাল খারাপই থেকে যাচ্ছে। এটাই তথাকথিত নয়া ভারতের নির্মম সত্য। অন্যদিকে সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণ দাবি করেছেন, জিডিপি বৃদ্ধির হার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৫.৪ শতাংশে নেমে গেলেও আর্থিক বছরের যা ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা, সেই ৬.৫ শতাংশে পৌঁছতে সমস্যা হবে না।
এদিকে বিশ্বের বাজারে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে স্থানীয় বাজারে চাহিদার ঘাটতি, দেশ-বিদেশের নানা কারণে চূড়ান্ত অস্থিরতা শেয়ার বাজারে প্রভাব ফেলছে। লগ্নিকারীরা তাই এখন কোনও ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ডলারের তুলনায় টাকার দামও পড়েছে।